× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতিবন্ধকতা দূর করুন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৩:৩৯ পিএম

স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতিবন্ধকতা দূর করুন

দর্শনের জনক হিসেবে নন্দিত থেলিস বলেছিলেন, ‘যে নিজেকে দমন করতে পারে না, সে নিজের জন্যও বিপজ্জনক এবং অন্য সবার জন্যও।’ থেলিসের উক্তিটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে আজও যেন যথার্থতার সাক্ষ্য বহন করে। ৩ মে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়েছে। ওই দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে এক আলোচনা সভায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানিয়েছেন, ২০২২ থেকে ২০২৩ সময়কালে পরিবেশদূষণ নিয়ে প্রতিবেদন করায় গণমাধ্যমের ওপর ২৩টি হামলা হয়েছে, এসব হামলায় ৪৩ জন গণমাধ্যমকর্মী নির্যাতিত হন। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বলবানদের রোষানলে পড়তে হয়, এটি নতুন কোনো খবর নয়। আমরা জানি, দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতা নিয়ে নানা মহলে ফিরে ফিরে আলোচনা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব আলোচনায় অতিসাধারণীকরণ এবং খুব সহজেই বড় ধরনের উপসংহার টানার প্রবণতাও দেখা যায়। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে আলোচনা সভায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমরা সব সময় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের কথা বলি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে বিশেষ মহলের প্রভাবের কারণে এজেন্ডাভিত্তিক সংবাদও প্রকাশ করা হয়ে থাকে, ভুল তথ্য-অপতথ্য প্রচারও হয়ে থাকে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপতথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হয়, তা অসত্য নয়। কিন্তু দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথও যে মসৃণ নয় এটাও সত্য। তথ্য প্রতিমন্ত্রী এক্ষেত্রে জবাবদিহির পাশাপাশি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর যে গুরুত্বারোপ করেছেন এর প্রতিফলন আমরা দেখতে চাই।

আমরা দেখছি, বিগত বায়ান্ন বছরে যারাই যখন ক্ষমতায় এসেছেন তারা দাবি করেন দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, এমনকি তা আগের চেয়ে অনেক বেশি; তবে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে তারা এ-ও বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবাধ হতে পারে না। আমরা মনে করি, এ দুয়ের মধ্যে একটি বিরোধ আছে। আমরা জানি, গণতন্ত্র বিকশিত করতে হলে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিকল্প নেই। স্বাধীনতার নামে আমরা যেমন স্বেচ্ছাচারিতায় কোনোভাবেই সায় না দিই তেমনি পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে তা-ও কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। সংবাদ কিংবা গণমাধ্যম একটি গণতান্ত্রিক সমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। সহজ করে বললে বলতে হয়, এই মাধ্যম রাষ্ট্রের বার্তাবাহক। নিরাপদ সাংবাদিকতা যেকোনো সভ্য কিংবা মানবিক সমাজে গণতন্ত্রের মানদণ্ড। মানদণ্ড এমন একটি প্রতীক, যা প্রত্যক্ষ করে বোঝা যায় বাস্তব স্বরূপ এবং নিয়ন্ত্রিত হয় বস্তুর গুণ ও মান। গণমাধ্যমকর্মীদের যদি স্বাধীনতা না থাকে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয় তাহলে তা শুধু গণতন্ত্রের জন্যই নয় দেশের সার্বিক অবস্থার জন্যও ক্ষতিকর। আমরা জানি, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয় গণমাধ্যমকে। তাই গণমাধ্যমকে শক্তিশালী করা কিংবা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। আমরা মনে করি, এই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সার্বিকভাবে তা কল্যাণকর হবে।

গণমাধ্যমকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপরাধী কিংবা বলবানদের রক্তচক্ষু এড়িয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেন। তারপর মেধা-মনন খাটানোর পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যনির্ভর সংবাদ পরিবেশনের সূত্র অবলম্বন করেন। আমরা দেখছি, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও অনেক বেশি। পরিবেশের সুরক্ষা এবং জলবায়ুর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সাংবাদিকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। কী কারণে ক্রমাগত পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে, এর জন্য কে বা কারা দায়ী এর অনুসন্ধান করতে গিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই বিপদাপন্ন হয়েছেন। বর্তমানে বিশ্বায়নের এই যুগে এবং প্রযুক্তির বিকাশের কল্যাণে কোনো কিছুই চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে আইনগতভাবে জবাবদিহি নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, পরিবেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে তাদেরই অনেকে অবৈধতাকে সুরক্ষা দেন এই অভিযোগও পুরোনো। অন্য আরও অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি তা-ই। এমন অবস্থায় গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা পালন করার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা আবশ্যক, আমরা তা মনে করি। মনে রাখা দরকার, গণতন্ত্র আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বপ্ন-চেতনা। গণতন্ত্রকে ব্যাহত করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী। আর গণতন্ত্রের বিকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের পথ কীভাবে মসৃণ করা যায় সেদিকে আরও গভীর মনোযোগ আবশ্যক। কোনো গণমাধ্যমকর্মীকেই যেন এই শঙ্কায় ভুগতে না হয় যে, লিখলেই মনে হয় বিপদ আসতে পারে। আমরা মনে করি, এই ভয় থেকে মুক্তি পেতে সম্মিলিত প্রয়াস যেমন জরুরি, তেমনি আরও জরুরি সরকারের ঐকান্তিকতা। তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুযোগ যাতে সংকুচিত না হয় এবং হয়রানি যাতে না বাড়ে, সেদিকেও যথাযথ দৃষ্টি দিতে হবে। এ-ও মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, তথ্য পাওয়া নাগরিকের অধিকার। জনগণের কাছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর যেমন জবাবদিহি আছে তেমনি সমাজে যারা অনাচার-দুরাচারের হোতা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবিধান নিশ্চিত করার দায়ও রাষ্ট্রের। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।

শুধু পরিবেশদূষণ নিয়ে প্রতিবেদনই নয়, যেকোনো অনিয়ম-অস্বচ্ছতার তথ্য কিংবা সংবাদ গণমাধ্যমে উপস্থাপন করে যারা নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এর দৃষ্টান্তযোগ্য বিচার আমরা দাবি করি। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অনাচারী-দুরাচারীদের অপতৎপরতা আরও বেড়ে যাবে এবং তা কোনোভাবেই নাগরিক সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে না। পরিবেশ, জলবায়ুকে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার গুরুত্ব সঙ্গত কারণেই আরও বেড়েছে। অন্যান্য প্রেক্ষাপটেও তা সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য উপাদান কোনোভাবেই যাতে অভিঘাতগ্রস্ত না হয় এ ব্যাপারে সরকারকে আরও সজাগ হতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সাম্যের কথা অধিক গুরুত্ব সহকারে বলা হয়। এই প্রেক্ষাপটে শুধু সরকারই নয়, বিরোধী দলসমেত রাজনৈতিক অঙ্গনে, সমাজ ও জনগণ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সব স্তরের প্রতিনিধিদের সক্রিয় সহায়তা প্রয়োজন। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিলে চূড়ান্ত বিচারে দেশ ও সরকারেরই ভাবমূর্তি উন্নত হবে, কল্যাণ নিশ্চিত হবে- এই সত্য যেন আমরা ভুলে না যাই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা