প্রজন্মের ভাবনা
সুমন বৈদ্য
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪ ১৩:৩১ পিএম
কলম ধরার বয়সে
প্রাপ্তবয়স্কের মতো যে খাটনি সয়ে যেতে হয় সে পরিমাণ মজুরি তাদের জোটে না। তাই বেকারের
মতো ঘুরে বেড়াতে হয় এই অবুঝ শিশুদের। কিন্তু দিনশেষে ওরাও শ্রমিক, শিশুশ্রমিক। শিশুশ্রমিককে
যে কাজ করতে দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে জাহাজভাঙা, বিড়িশিল্প, ব্যাটারি তৈরির কারখানা,
লেদ কারখানা, কাচ বা গ্যাস ফ্যাক্টরি, ইট-পাথর ভাঙা, মোটরগাড়ি মেরামত, নির্মাণকাজ ইত্যাদি।
সর্বশেষ হিসাবে দেশে এখন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশুশ্রমিক আছে। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা
ছিল ৩৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯; যা গত এক যুগে ২.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান
ব্যুরোÑবিবিএসের জরিপ অনুযায়ী বিগত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মে পর্যন্ত তিন মাস
জুড়ে দেশের ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের ওপর এ জরিপ করা হয়। জরিপে সর্বমোট ৩০ হাজার
৮১৬ পরিবার অংশ নেয়। জরিপে উঠে আসে বেহাল চিত্র।
বাংলাদেশে শিশুর
সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি। কিন্তু এর মাঝে ২০ লাখ ৯০ হাজার গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। এখানেই
শেষ নয়, তার মধ্যে পারিশ্রমিকবিহীন কাজে নিযুক্ত আছে ২০ লাখ ১০ হাজার শিশুশ্রমিক।
এর মধ্যে যাদের আয় হয় তাদের গড় আয় মাসে ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। জরিপের পাশাপাশি বিবিএস
‘সেক্টরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩’ প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।
সরকার ৪৩টি খাতকে শিশুশ্রমের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে। ওই ৪৩ খাতের মধ্যে পাঁচটি
চিহ্নিত করে জরিপটি করা হয়েছে। খাতগুলো হলো মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ
(শুঁটকি উৎপাদন); পাদুকা উৎপাদন; লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের
কাজ); মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) এবং ব্যক্তিগত ও
গৃহস্থালি সামগ্রী মেরামত (বিশেষত টেইলারিং ও পোশাক খাত)।
শিশুশ্রমের মূল
কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের জাঁতাকলে স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে আগামী প্রজন্মের। তারা স্কুলে
যাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর বাদবাকি শিশুদের মতো সমান অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে না।
শহরের অলিগলিতে এমন অনেক শিশু আছে যাদের দুই মুঠো ভাত জোটে না। অন্যদিকে দারিদ্র্যের
কাছে হার মেনে মা-বাবারাও দুটি ভাত খেতে পারবে, ন্যূনতম পোশাক পরতে পারবেÑএ আশায় শিশুদের
নামিয়ে দিচ্ছে ভারী কাজে। তা ছাড়া শহরের বিরাট একটা অংশ জুড়ে শিশু বসবাস করে বস্তিতে।
নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে ওঠে তারা। তার মধ্যে অনেক শিশুকে দেখা যায় অভিভাবকহীন।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অনেক শিশুর রাত কাটে ফুটপাথে। অসুস্থ হলে দেখার কেউ থাকে না
তাদের। একটা সময় সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের প্রতি অনীহা থেকে পা বাড়ায় বেআইনি কাজে।
জড়িয়ে পড়ে মাদক বিক্রির মতো ভয়ংকর পেশায়।
শুধু বাংলাদেশেই
নয়, কোনো সভ্য দেশেই শিশুশ্রম গ্রহণযোগ্য নয়। শিশুশ্রম বন্ধে এগিয়ে নাগরিক সমাজের
আসা উচিত এবং সরকারেরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।