প্রজন্মের ভাবনা
আফরিনা আক্তার
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৮ এএম
জীবনের প্রয়োজনের
তাগিদে এখন মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ট্যাব ব্যবহার জরুরি অনুষঙ্গ হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ,
লেখাপড়া, চাকরির অনেক কাজ এমনকি প্রায় সবকিছুই এখন এসব ডিভাইসে করা যায়। আর নিত্যপ্রয়োজনীয়
নানা কাজের প্রয়োজনের তাগিদেই এখন অনেকে স্ক্রিনে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। মোবাইল ফোন হাতে
নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা এক ধরনের আসক্তিতে পরিণত হয়ে গেছেন।
সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, মোবাইল স্ক্রিন আসক্তিতে আক্রান্তরা সচরাচর বুঝতে পারেন
না কেন তারা এত দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকেন। অনেকে শুধু সমাজমাধ্যমে স্ক্রল করেন
কিংবা কোনো ভিডিওর দিকে তাকিয়ে থাকেন। স্ক্রিনে এ আসক্তির ফলে নষ্ট হয় অনেক মূল্যবান
সময়।
স্ক্রিনে আসক্তির
ভয়াবহতা তীব্রতর হয় শিশুর বেলায়। সম্প্রতি একাধিক গবেষণা জরিপে এও দেখা গেছে, শিশুরা
তাদের সময়ের বেশিরভাগ নষ্ট করছে মোবাইল ফোন, ট্যাব, টেলিভিশন, কম্পিউটারের মতো বিভিন্ন
ডিজিটাল প্রযুক্তির স্ক্রিনে। জরিপগুলোয় একটি বিষয় দেখা যায়। অভিভাবকরা শিশুর এ ডিভাইসপ্রীতিকে
বড় করে দেখেন না। কিছু অভিভাবক শিশুদের ব্যস্ত রাখার জন্য মোবাইল ফোন দিয়ে দেন। মোবাইলে
কিছু গেম বা ভিডিও দেখিয়ে তারা বাচ্চাদের শান্ত করতে চান। বাচ্চারা স্বভাবতই দুষ্টু।
তাদের শান্ত করতে অথবা খাওয়ানোর ছুতো হিসেবে স্মার্টফোন ধরিয়ে দেওয়া হয়। শিশুদের ডিভাইস
দেওয়া যেতে পারে। তবে তাদের ডিভাইসে প্যারেনশিয়াল কন্ট্রোল চালু রাখা জরুরি। বাচ্চা
অনলাইনে কোথায় কি করছে তা সীমাবদ্ধ করে দিলে স্ক্রিনে আসক্তি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা
যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, এ বিষয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে
আসক্ত থাকার সময় মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রামমিটার নিঃসরণ হয়। এ হরমোন মনে
ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। মূলত হ্যাপি হরমোনের এ নিঃসরণের কারণেই শিশুরা স্মার্টফোনে
আসক্ত হয় এবং একসময় তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। স্ক্রিনে আসক্ত থাকার ফলে শিশুরা পরিবার,
সমাজ ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শৈশবের যে সময়টা পরিবারের সঙ্গে, বন্ধুদের
সঙ্গে, সহপাঠীদের সঙ্গে আনন্দে পার করার কথা, পরিবার ও সমাজের রীতিনীতি শেখার কথা সে
সময়টা পার করছে কোনো ডিভাইসের স্ক্রিনে। এভাবে শিশুর মানসিক বিকাশের ওপর ভীষণ রকমের
বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যেহেতু একটি শিশু একটি দেশের ভবিষ্যৎ তাই আমাদের এ বিশালসংখ্যক
শিশুকে স্ক্রিন-আসক্তি থেকে দূরে রাখতে পরিবারের বড়দের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমাজের
সব স্তরে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশুদের যেকোনো ধরনের স্ক্রিন থেকে দূরে
রাখতে হবে।
শিশুদের খেলাধুলা,
বই পড়া বা সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করার বিষয়ে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা জরুরি। গ্যাজেটের
উপকারী দিক রয়েছে। যেকোনো গ্যাজেটই আমাদের জীবন সহজ করে। কিন্তু গ্যাজেট যেন শিশুদের
জীবন আরও মন্থর করে না দেয় তা নিয়েই ভাবনা জরুরি। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের ভাবতে হবে।
শিশুদের জীবনে স্মার্টফোনের একঘেয়েমি অভ্যাসটাই যেন মুখ্য হয়ে না থাকে। তারা যেন বিকশিত
হতে পারে আরও বিস্তৃত পরিসরে তা-ও নিশ্চিত করা জরুরি।