× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শেয়ারবাজার

সুশাসনই একমাত্র প্রতিবিধান

সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৭ এএম

সুশাসনই একমাত্র প্রতিবিধান

আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কামাল মুজেরীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রতি একটি বাংলা দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারটি শুধু সমৃদ্ধই নয়, আমাদের আর্থিক খাতের জন্য দিকনির্দেশক বলেও মনে করি। তার সাক্ষাৎকারে তিনি সুশাসন শব্দটির ওপর বারবার জোর দিয়েছেন। বক্তব্যে আকৃষ্ট হয়ে এই সুশাসন নিয়ে কিছু লেখার সাহস করেছি। কয়েক দিন ধরে দেশের শেয়ারবাজারে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা আমাদের অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা সামনে নিয়ে আসে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সংবাদমাধ্যমে শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে আসছে তাতে মনে হচ্ছে এ নিয়ে কারসাজির ছক কষে চলেছেন তারা, যাদের হাতে শেয়ারবাজারের ‘নাটাই’ রয়েছে। ২৮ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দরপতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজার।’ পুঁজিবাজার বা শেয়ারবাজার অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ক্ষেত্র, এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশের অবকাশ খুব কম। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ওই প্রতিবেদনের গর্ভে যা রয়েছে তা কোনোভাবেই স্বস্তির নয়। আমরা মনে করি এবং এ সত্য এড়ানোও কঠিন, সুশাসনের অভাব শুধু ব্যাংক খাত, শেয়ারবাজার বা আর্থিক খাতের অন্যদিকেই নয়; এই সংকট প্রশাসনের প্রায় সবস্তরেই কমবেশি বিদ্যমান।

নিকট অতীতে শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ডিএসইর চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘শেয়ারবাজার ঝিমিয়ে চলছে। অথচ বিশ্বের অনেক দেশেই শেয়ারবাজার দেশের অর্থনীতিকে কাঁপিয়ে তুলছে।’ এখানেই প্রশ্ন। আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারকে ঝাঁকুনি দিয়েছিল অশুভ চক্র। আইপিওর জন্য বাংলাদেশ ছিল স্বর্ণখনি। ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে দুই দফায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের ফলে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারী মার্কেট ছেড়ে চলে যান। ডিএসইর চেয়ারম্যান নিশ্চয়ই জানেন, বর্তমানে সাধারণ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা শতকরা ১/২ ভাগের বেশি হবে না। এ দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ঝাঁকুনি-কাঁপানি দেওয়া সম্ভব নয়। নিজেদেরই কাঁপতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে যেন আর কোনো বিপর্যয় না ঘটে, তার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা নেতিবাচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০০৯-১০ সালের শেয়ারবাজারে মহাবিপর্যয়ের পর সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম মুহিত দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন, ‘স্টক এক্সচেঞ্জের সংস্কার করতে হবে।’ স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হলো। বোর্ড অব ডাইরেক্টরে সরকারের মনোনীত সদস্যদের সংখ্যা বেশি। প্রত্যাশা এই ছিল স্টক এক্সচেঞ্জে করপোরেট বৈশিষ্ট্যে পরিচালিত হবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, করপোরেট বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক প্রভাব বেশি লক্ষণীয়। বিনিয়োগ মানে পুঁজি সরবরাহÑ যার উদ্দেশ্য উৎপাদন, পরিষেবা বৃদ্ধি। আর অর্থযোগ হলো অর্থনেতিক ইনস্ট্রুমেন্টকে নিয়ে ব্যবসা করা। বিশ্বের অনেক অর্থনীতিবিদ তা নেতিবাচকভাবে দেখেছেন। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কোনটা গ্রহণ করব।

বাজার মূলধনের অন্তর্নিহিত মূল্য নেই। শেয়ারবাজারের সূচক তৈরিতে এর ভূমিকা রয়েছে। শেয়ারের দর ওঠানামা গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করতে এই সূচকের যথাযথ গুরুত্ব রয়েছে। সতর্কতা অবলম্বন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এসবকিছুতে সূচকের গুরুত্ব রয়েছে। একটি কথা মনে রাখতে হবে, শেয়ার মার্কেট অত্যন্ত স্পর্শকাতর ক্ষেত্র। যেকোনো গুজব, যেকোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা, যেকোনো রাষ্ট্রীয় অঘটন শেয়ারবাজারে বিপর্যয় নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে ভারতের ২০০৪ সালের নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই। তখন ভারতের বামপন্থিরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচনে জয়লাভ করল। যেহেতু কমিউনিস্টরা রয়েছে, অতএব পুঁজিবাদ থাকবে নাÑ এ রকম অলীক কল্পনায় নির্বাচনের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মুম্বাই শেয়ারবাজারে বিপর্যয় নামল এবং মার্কেটই বন্ধ হয়ে গেল। কমিউনিস্টরা একাই সেই সংসদে ছিলেন না। আমাদের শেয়ারবাজার ছোট। তা ছাড়া নানা নেতিবাচক ঘটনার বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির কারণে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারবিমুখ হয়েছেন, হচ্ছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের ফলে শেয়ারবাজারের পদক্ষেপ এখন বেশ ইতিবাচক। যদি শেয়ারবাজার ডিমিউচুয়ালাইজড না হতো, তাহলে এত দিনে আরও বিপর্যয় হতো, যেমনটি হয়েছিল ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে। বাজারে ভালো শেয়ার আনতে হবে; মন্দ শেয়ারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে বহুবার বলতে শুনেছি, দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে নতুন ব্যাংক খোলার অনুমতি দেওয়ার অবকাশ নেই। ব্যাংক খাতে ইতোমধ্যে কতিপয় ব্যাংকের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল অসাধুদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে একই সঙ্গে ঋণখেলাপিদের বহুগ্রাসী থাবায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তাতে ‘দুর্বল ব্যাংক’ শব্দযুগল বহুল প্রচলিত হয়ে পড়েছে। ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থার কারণে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার কাজ শুরু হয়েছে এবং লক্ষ্য হলো সবলের সঙ্গে একীভূত করা হবে দুর্বল ব্যাংক। তবে যে প্রক্রিয়া কিংবা নীতিমালার ভিত্তিতে এমনটি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ব্যাংক একীভূতকরণ বা অধিকরণের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। পরস্পরের প্রয়োজনে আর্থিক দিক পরিপূর্ণভাবে আলোচনার পর এ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। প্রশ্ন হচ্ছে, তা কি নেওয়া হয়েছে? মরহুম আবুল মাল আব্দুল মুহিতের একটি বড় গুণ ছিল, তিনি সত্য উচ্চারণে দ্বিধা করতেন না। এর ফলে অনেক সময় সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়েছিল দফায় দফায়। তবু ‍তিনি তার সত্য উচ্চারণে কুণ্ঠিত হননি। ব্যাংক একীভূতকরণের চেয়ে জরুরি হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মনোযোগ গভীর এবং তা নিশ্চিত করা। মরহুম মুহিতের নির্দেশে শেয়ারবাজারে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছিল। সেসবই এখন অতীত। বর্তমানে শেয়ারবাজারে যে ‘খেলা’ দৃশ্যমান হচ্ছে তাতে আবারও আস্থার সংকটে পড়েছেন এই বাজারের বিনিয়োগকারীরা। ইতোপূর্বে বহুবার বলেছি, শেয়ারবাজারকে তার মতো চলতে দেওয়া উচিত। বাজারের গতিপ্রকৃতির ওপর কোনোভাবে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।

শেয়ারবাজারে কিংবা যেকোনো ক্ষেত্রে বিধিনিয়ম কিংবা আইন ভঙ্গ করলে সরকারের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটি খুব স্বাভাবিক। ফ্লোর প্রাইস নিয়ে নানা কথা আছে এবং অতীতে এই স্তম্ভেই এ নিয়ে লিখেছিও। ফ্লোর প্রাইস কত দিন কীভাবে প্রয়োগ করতে হবে এ দায়িত্ব স্টক এক্সচেঞ্জের। ব্যাংক খাত ধ্বংস ও শেয়ারবাজারে ধস ও অর্থ পাচারে একই গোষ্ঠী সক্রিয়Ñ এমন বার্তা সংবাদমাধ্যমে একাধিকবার উঠে এসেছে। সব কথার শেষ কথা হলো, সুশাসন নিশ্চিত করতেই হবে। নিঃসন্দেহে এও বলা যায়, সুশাসনই আমাদের সমাজ ও সরকার কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে জিইয়ে থাকা বহুবিধ ব্যাধির উপযুক্ত দাওয়াই। সুশাসন নিশ্চিত করতে সর্বাগ্রে জরুরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। অসত্য নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে আর্থিক খাতে কদাচারের ছায়া বিস্তৃত হয়েছে। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, সর্বাগ্রে রাজনীতিকে সুস্থ করা জরুরি। অসুস্থ রাজনীতি শুধু অর্থনীতি নয়, সবকিছুর জন্যই অত্যন্ত বিপদজনক। আশা করি, রাজনীতির নীতিনির্ধারকরা বিলম্বে হলেও এর যথাযথ গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হবেন।

  • বাংলাদেশের প্রথম সরকারের কর্মকর্তাশেয়ারবাজার ও আর্থিক খাত বিশ্লেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা