দিবস
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৪ এএম
২০০৩ সাল থেকে
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা
দিবস পালন করে আসছে। বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসের বিষয়টি স্মরণে রেখে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার
শিকার, আহত বা নিহত শ্রমিকের পেশাগত ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৬
সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ ২০১৬-১৭
সালের শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, দেশে মোট শ্রমশক্তি রয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ। কাজ করছে ৫ কোটি
৫১ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে বস্ত্র ও পোশাক খাতে কাজ করে ৪০ লাখ শ্রমিক। এ পরিসংখ্যানেও
দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক শ্রমিক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে।
শ্রম আইন-২০০৬-এর
৫১ থেকে ৯৯ ধারায় শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রম আইনের
ওই ধারাসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কলকারখানা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
রাখা, শ্রমিকের যাতে স্বাস্থ্যহানি না ঘটে সেজন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ও যথাযথ তাপমাত্রা
বজায় রাখা, প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্তত ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা
করা, পানের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা, মহিলা ও পুরুষ শ্রমিকের জন্য পৃথক শৌচাগার
ও প্রক্ষালন কক্ষের ব্যবস্থা করা মালিকের দায়িত্ব। একই সঙ্গে শ্রমিকের ক্ষতি হতে পারে
এমন কোনো ভারী জিনিস উত্তোলন, বহন অথবা নাড়াচাড়া করতে না দেওয়ার ব্যাপারেও শ্রম আইনে
উল্লেখ রয়েছে।
শ্রমিকের কর্মক্ষেত্রের
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অগ্নিদুর্ঘটনার কারণে অথবা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজনে বহির্গমনের
জন্য প্রতি তলার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী অন্তত একটি বিকল্প সিঁড়িসহ বহির্গমনের উপায়
এবং প্রতি তলায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা উচিত। প্রতিটি
প্রতিষ্ঠানে সাধারণ বহির্গমনের জন্য ব্যবহৃত পথ ছাড়াও অগ্নিদুর্ঘটনার সময় বহির্গমনের
জন্য ব্যবহার করা যাবে এরূপ প্রতিটি জানালা, দরজা বা অন্য কোনো বহির্গমন পথ স্পষ্টভাবে
লাল রং দ্বারা বাংলা অক্ষরে অথবা অন্য কোনো সহজবোধ্য প্রকারে চিহ্নিত করতে হবে। প্রতিটি
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিককে অগ্নিকাণ্ডের বা বিপদের সময় সে সম্পর্কে হুঁশিয়ার
করার জন্য স্পষ্টভাবে শ্রবণযোগ্য হুঁশিয়ারি সংকেতের ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিষ্ঠানের
প্রতিটি কক্ষে কর্মরত শ্রমিকের অগ্নিকাণ্ডের সময় বিভিন্ন বহির্গমন পথে পৌঁছার সহায়ক
একটি অবাধ পথের ব্যবস্থা রাখতে হবে। পঞ্চাশ বা ততোধিক শ্রমিক/কর্মচারী সংবলিত কারখানা
ও প্রতিষ্ঠানে প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার আয়োজন করতে হবে, এবং
এ বিষয়ে মালিক কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় একটি রেকর্ড বুক সংরক্ষণ করতে হবে।
জাতিসংঘ ২০১৬
থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়েছে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৭টি লক্ষ্যের ৮ নম্বর লক্ষ্য হচ্ছে শোভন কাজ বাস্তবায়ন।
শোভন কাজের অন্যতম শর্ত কর্মক্ষত্রে শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত
করা। নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্যয়ের প্রতি মালিকপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে, নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্যয় মূলত মূলধনি খরচ বা বিনিয়োগ। এটা কখনোই অতিরিক্ত
খরচ বা অপচয় নয়। নিরাপদ কর্মপরিবেশ শুধু শ্রমিকের জীবন বাঁচায় না, উৎপাদনক্ষমতাও বাড়ায়।
আন্তর্জাতিক পেশাগত ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দিবসে রাষ্ট্র ও মালিক পক্ষ এ বিষয়টি যথাযথভাবে
অনুধাবন করতে সক্ষম হবেÑএমনটিই সবার প্রত্যাশা।