× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

উচ্চশিক্ষায় সেশন জটের অভিশাপ ঘুচান

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০:০৪ এএম

উচ্চশিক্ষায় সেশন জটের অভিশাপ ঘুচান

ইংরেজ দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী হার্বার্ট স্পেনসার বলেছিলেন, ‘শিক্ষার কাজ হলো মানুষকে জীবন ও জীবিকার উপযোগী করে তোলা।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তক কার্টার ভিক্টর গুড বলেছিলেন, ‘পাঠক্রম হলো কয়েকটি বিষয়ে পরিকল্পিত অভিজ্ঞতার শৃঙ্খলাবদ্ধ সমষ্টি এবং তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অর্জন করতে হয়।’ এই দুই মনীষীর গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনায় গেলে আশান্বিত হওয়ার অবকাশ খুব একটা থাকে না। সময়মতো শিক্ষা কার্যক্রম শেষ না হওয়ার অভিঘাত একজন শিক্ষার্থীর জীবন-জীবিকায় কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এর নজির আমাদের সামনে আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষাপর্ব শেষ না করতে পারলে তা জীবনের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে কতটা অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়, এরও নজির কম নেই। ২৭ এপ্রিল ‘সেশন জটে বিসিএস দেওয়া হলো না কয়েকশ শিক্ষার্থীর’ শিরোনামে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের গর্ভে যা উঠে এসেছে, তা ওই দুই মনীষীর মন্তব্যের যথার্থ প্রতিফলন বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের পাঁচ অনুষদের একুশ বিভাগের মধ্যে ছয় বিভাগের কয়েকশ শিক্ষার্থী সেশন জটের কারণে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। সেশন জট না থাকলে গতবারই যারা বিসিএসে অংশ নিতে পারতেন। কিন্তু এ বছরও তাদের সেই অভিশাপ ঘুচল না।

আমরা জানি, ক্যাডার দুই প্রকার- এক অস্ত্রধারী আর দুই কলমধারী। বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যারা উত্তীর্ণ হয়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিভিন্ন পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তারা কলমধারী ক্যাডার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের অনেকেই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সময়ের জটিলতার কারণে কলমধারী ক্যাডার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগই পান না। সামগ্রিকভাবে এই ক্ষতি শুধু জীবনেরই নয়, রাষ্ট্র-সমাজেরও বটে। পাবিপ্রবির সেশন জটের যে চিত্র উঠে এসেছে এবং এর ফলে কয়েকশ শিক্ষার্থীর বিসিএস দেওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকভাবেই যে প্রশ্নগুলো সামনে আসে সেগুলো ইতিবাচক নয়, নেতিবাচক। শুধু বিসিএসের ক্ষেত্রেই নয় অন্যান্য পদে চাকরির ক্ষেত্রেও নির্ধারিত বয়সসীমা পেরিয়ে গেলেও অনেকেরই শিক্ষাজীবন শেষ হয় না; চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হয় না। এর ফলে ব্যক্তি-পরিবার-সমাজে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তা বহুমাত্রিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শুধু পাবিপ্রবিই নয়, দেশের আরও কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই কমবেশি সেশন জটের অপচ্ছায়া এখনও দৃশ্যমান।

১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিভুক্ত কলেজের মানোন্নয়নের লক্ষে। কিন্তু এর সুফল কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় মেলেনি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জট সমস্যা ছাড়াও আরও কিছু সমস্যা বিদ্যমান। একসময়ে ‘নটার ট্রেন কটায় ছাড়বে’ বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্পর্কে এই ব্যঙ্গোক্তি সমাজে বহুল প্রচলিত ছিল। এখন একই প্রশ্ন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মনে কোন শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা কোন শিক্ষাবর্ষে হবে! একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কতটা বিশৃঙ্খল হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এমন তিক্ততার মুখোমুখি হন তা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটের সমস্যা নতুন নয়। এই সেশন জটের পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক অনেক নেতিবাচক কারণই বিদ্যমান। প্রথমত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের সংকট, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ইত্যাদি বহুবিধ কারণ রয়েছে। পাবিপ্রবির সেশন জট সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কারও কারও বক্তব্য একেবারেই দায়সারা গোছের। তারা শিক্ষার্থীদের বুকচাপা কষ্ট এবং শিক্ষাজীবন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে প্রলম্বিত হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কতটা সজাগ এবং দায়িত্বের ক্ষেত্রে নিষ্ঠ এই প্রশ্ন থেকেই যায়। পাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, ডিন ও শিক্ষকদের দফায় দফায় অনুরোধ জানিয়েও সেশন জট নিরসনে কার্যকর যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়াতে পারেননি।

পাবিপ্রবির বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বিসিএসে অংশগ্রহণ না করতে পারায় তাদের জীবনে যে ক্ষতি ও ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা উপশমের ‘দাওয়াই’ কর্তৃপক্ষ কি দেবে? বিসিএস তো গেল, সেশন জটকবলিত শিক্ষার্থীদের অন্যান্য ক্ষেত্রে চাকরির জন্য আবেদন করার পথও ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। স্নাতক সম্মান এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্নের ক্ষেত্রে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের অভিমত আমলে নিয়ে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ যে নেয়নি বিদ্যমান বাস্তবতা এরও সাক্ষ্যবহ। সেশন জট সমস্যার টেকসই সমাধানের ব্যাপারে এই উদাসীনতা কিংবা গাফিলতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেশন জট শব্দটির সঙ্গে অনেক দেশের শিক্ষার্থীরাই অপরিচিত হলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে যে  অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাতে অনেককেই হতাশায় নিমজ্জিত করে এবং এরও বিরূপ অভিঘাত লাগছে পরিবারে-সমাজে। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষক সংকটের কারণে নাজেহাল বিভাগগুলোর শিক্ষাকার্যক্রম। শিক্ষক সংকটের কারণে পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা আর এর ফলে ধারাবাহিকভাবে সেশন জটের পরিসর বাড়ছে। কিছুদিন আগে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কয়েকটি বিভাগের যে বিবর্ণ চিত্র সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে তা এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। নোবিপ্রবির মতো আরও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই বহুমুখী সংকটে ধুঁকছে। আর এর প্রত্যক্ষ শিকার শিক্ষার্থীরা। এমনটি কোনোভাবেই চলতে পারে না।

আমরা জানি, করোনা দুর্যোগ অনেক ক্ষেত্রেই বিরূপ ছায়া ফেলেছিল। এর মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। অন্যান্য ক্ষেত্রের ক্ষতি ক্রমান্বয়ে পুষিয়ে ওঠা গেলেও অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়নি। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম তখনকার প্রেক্ষাপটে চালু হলেও শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার ঘাটতি বহুলাংশেই পূরণ হতে পারেনি। দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থে উচ্চশিক্ষা সেশন জটমুক্ত করতেই হবে। নির্ধারিত আসনসংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির কারণেও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই সেশন জটের অপচ্ছায়া প্রলম্বিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যাতে সেশন জট নামক বৈষম্যব্যধিতে আক্রান্ত না হন এদিকে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গভীর মনোযোগ এবং কার্যকর পদক্ষেপ সময়ক্ষেপণ না করে নেওয়া উচিত। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উচ্চতর শিক্ষায় পরিকল্পনা নিতে হবে সেশন জটমুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব ও গবেষণানির্ভর। পাঠ্যক্রম পরিচালনা তথা পরীক্ষাগ্রহণ ও ফলপ্রকাশের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেহেতু স্বাধীন, সেহেতু তারাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও যথাযথ সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। সেশন জটের অভিশাপ ও দুর্ভাবনার চাপে সম্ভাবনাময় জীবন যেন থমকে না যায় তা নিশ্চিত করার দায় সর্বাগ্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা