পরিপ্রেক্ষিত
মো. খসরু চৌধুরী
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৫ এএম
কাতারের আমির
শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির বাংলাদেশ সফর দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের সুসম্পর্ক নতুন মাত্রায়
উন্নীত করেছে। পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে আমিরের সফরকালে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে
সই হয়েছে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন পথ খোলার
আশ্বাস এসেছে কাতারের পক্ষ থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরের সঙ্গে পারস্পরিক
স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে চুক্তি
ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। সৌজন্য সাক্ষাৎকালে কাতারের আমিরকে বাংলাদেশের বিশেষ
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
বাংলাদেশ সরকার
বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০ অর্থনৈতিক বিশেষ অঞ্চল স্থাপন করেছে। কাতারের বিনিয়োগকারীরা
পেট্রো-কেমিক্যাল, জ্বালানি, মেশিনারিজ, তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, সিরামিক, কৃষি-ব্যবসা,
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি কাতারের আমিরকে
তাদের দেশে আরও বাংলাদেশি তরুণ, দক্ষ ও আধাদক্ষ জনশক্তি, আইটি বিশেষজ্ঞ, পেশাদার প্রযুক্তিবিদ
নিয়োগের আহ্বান জানান। কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের
আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। আশ্বাস দেন আগামী দিনগুলোয় বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয়
সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বাংলাদেশ যখন জ্বালানি সংকটসহ
অন্যান্য সমস্যায় ভুগছে তখন কাতারের আমিরের সফর এবং দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতাকে
গুরুত্বের চোখে দেখা হচ্ছে।
দেশের প্রবাসী
আয়ের সিংহভাগই আসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। বিদ্যমান মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি
আরও উত্তপ্ত ও সংঘাতবহুল হলে এর অনিবার্য প্রভাব পড়বে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শ্রমবাজারে।
কাতারের আমিরের ঢাকা সফরটি এ ক্ষেত্রে আশার আলো হয়ে দেখা দিতে পারে। বর্তমানে কাতারে
বৈধ-অবৈধ ৪ লক্ষাধিক বাংলাদেশি শ্রমজীবী
রয়েছে। যাদের কষ্টার্জিত আয়ে পরিপুষ্ট হচ্ছে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সে
দেশে বাংলাদেশি শ্রমজীবীদের রয়েছে পরিশ্রমী ও সুশৃঙ্খল হিসেবে সুনাম। দেশটিতে আরও বাংলাদেশি
শ্রমজীবী পাঠানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে তার
একটি জনশক্তি বিষয়ক। অন্য চারটি হলো বন্দর পরিচালনা সংক্রান্ত, শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক
গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ। উল্লেখ্য, কাতার বাংলাদেশের
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পরিচালনার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ ও কাতারের
সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন মূল্যবোধ, ধর্মীয় ভিত্তি ও সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের
ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের
পর ৪ মার্চ কাতার বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কাতার
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ, যে দেশটি ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির অন্যতম
মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ এবং কাতারের রূপকল্প ২০৩০
বাস্তবায়নে একে অন্যের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করবে বলে দুই দেশের জনগণের
প্রত্যাশা। কাতারের আমিরের ঢাকা সফরকালে যে পাঁচটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে সেগুলো হলো
আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার ও কর ফাঁকি সংক্রান্ত, আইনি বিষয়ে সহযোগিতা, সাগরপথে
পণ্য পরিবহন, উভয় দেশে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠন। কাতার
প্রভূত তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ একটি ধনী ও উন্নত দেশ। দেশটি বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলে
বিনিয়োগ করতে পারে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের পথ প্রশস্ত হবে। এ জন্য
জরুরী আরও দূরদর্শী কূটনীতি।