× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করাই চ্যালেঞ্জ

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৫ পিএম

উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করাই চ্যালেঞ্জ

কয়েক দফায় উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম দফা নির্বাচন হবে ৪ মে। আমরা জানি, এবার দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার কাঠামোর এই স্তরের নির্বাচন হচ্ছে না। তারপরও দেখা যাচ্ছে, বড় দলগুলো বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থেকে একেকটি উপজেলায় একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণের পাশাপাশি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা প্রার্থী হওয়ায় প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও বিশেষ করে বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতাই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপির তরফে বলা হয়েছিল, দলের নির্দেশ অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে দলটির নীতিনির্ধারকরা এ রকম পদক্ষেপও নিতে যাচ্ছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ। কিন্তু ২৬ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনের গর্ভে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করা নির্বাচন কমিশন একই সঙ্গে তার সহযোগী শক্তি সরকারের মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব নিয়ে শঙ্কায় প্রশাসন’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা। প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং এমপিদের নিয়ে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনদের এই উদ্বেগ নিশ্চয়ই জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীলদের তরফে বারবার বলা হচ্ছে, স্বচ্ছ নির্বাচনের স্বার্থে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে তারা কুণ্ঠিত হবেন না। আমরা তাদের এই প্রত্যয়ের জন্য সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে আইজিপি পুলিশ সুপারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ভয়ের কিছু নেই। সর্বোচ্চ বদলি করবে। আরেক জায়গায় চাকরি করবেন। মাথা নত করা যাবে না।’ আমরা আইজিপিকেও তার দৃঢ় প্রত্যয়ের জন্য সাধুবাদ জানাই। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, স্থানীয় সরকার কাঠামোর বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে বরাবরই বাড়তি উদ্দীপনা লক্ষ করা যায়। পাশাপশি আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এ-ও আছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারাভিযান এবং নির্বাচন-উত্তর সংঘাত-সহিংসতায় অতীতে অনেক মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে। আমরা লক্ষ করছি, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মী তো বটেই এমনকি মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সতর্কবার্তা আগে থেকেই দেওয়া হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যমের বিশ্লেষণে ইতঃপূর্বে উঠে এসেছিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে একেকটি উপজেলায় স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও এর ইতিবাচক প্রভাব দৃশ্যমান হয়নি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু উপজেলায় প্রচারকেন্দ্রিক কার্যক্রমে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ এবং উৎসবমুখর, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রের শোভাবর্ধন করে। নির্বাচনকালীন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নির্বাচন কমিশন এবং সরকার তার সহযোগী শক্তি তা আমাদের অজানা নয়। এবারের উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যেসব শঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং মাঠপর্যায়ের প্রশাসন যেভাবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে আমরা মনে করি এর নিরসন সম্ভব নির্বাচন কমিশনের নির্মোহ কঠোর অবস্থান এবং কমিশনকে সরকারের যথাযথ সহযোগিতা প্রদানের মধ্য দিয়ে। দলীয়ভাবে নির্বাচন না হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অনেকেই কয়েক দফায় অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। দৃশ্যত রাজনৈতিক ব্যানারে কেউই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না বটে তারপরও দলীয় রাজনীতির প্রভাব-প্রতিপত্তি মাঠপর্যায়ে ভিন্ন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তা অস্বীকারের জো নেই।

নির্বাচন যেকোনো মূল্যে প্রশ্নমুক্ত করতেই হবে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে উপযুক্ত সহযোগিতা দান বাঞ্ছনীয়। আমাদের সামনেই এ নজিরও আছে, দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়বদ্ধতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। শুধু নির্বাচন কমিশন কিংবা সরকারেরই অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দায় নয়, যদিও গুরুভার তাদের ওপরই অর্পিত। কিন্তু একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদেরও এক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকার প্রয়োজন। অর্থাৎ যূথবদ্ধ প্রয়াসের মধ্যে দিয়েই সম্পন্ন হতে পারে গণতন্ত্রের এ কর্মযজ্ঞ। নির্বাচনের পূর্বাপর জননিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন সামনে আসে। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা মনে করি, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করায় কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, এই দায়িত্ব সর্বাগ্রে নির্বাচন কমিশন একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরও। নির্বাচনে সাধারণত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে আচরণবিধি লঙ্ঘনজনিত কারণ থেকে। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন যদি এ ব্যাপারে বরাবরই কঠোর থাকে তাহলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অবকাশ ক্ষীণ হয়।

এবার উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দল কমাতে একক প্রার্থীর সমর্থনের দাবি উঠেছিল আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে। তবে এ প্রস্তাবনা ক্ষমতাসীন দলটি নাকচ করে দিয়ে সাংগঠনিক নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। কিন্তু দলের এই নির্দেশনার পরেও এর ব্যত্যয় ঘটেছে বলেই উপজেলা নির্বাচনকেন্দ্রিক বহুবিধ নেতিবাচক প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে। যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে অনেক রাজনৈতিক দলই নির্বাচন বর্জন করছে সেহেতু নির্বাচনে পূর্বাপর পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপকৌশল কেউ কেউ নিতে পারেন এই আশঙ্কা অমূলক নয় বলেও আমরা মনে করি। এ প্রেক্ষাপটে আমরা জোর দিই নিরাপত্তাঝুঁকি নিরসনসহ অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সব রকম ব্যবস্থা নিশ্চিত করায়। চার ধাপে অনুষ্ঠেয় ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই ভোটের দিন পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আশঙ্কা ইতঃপূর্বে প্রকাশ করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে ইসিকে পরামর্শও দিয়েছে দুটি গোয়েন্দা সংস্থা। ইসি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আমরা মনে করি, প্রস্তুতি শেষ করাই চূড়ান্ত বিষয় নয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনের প্রতিটি ধাপই যাতে শান্তিপূর্ণ হয় এ ব্যাপারে পরিকল্পিত সব ব্যবস্থা চূড়ান্ত করা ইসির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। ইসির জন্য এ নির্বাচন যেমন চ্যালেঞ্জের তেমনি সরকারের জন্যও। সব প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইসি তার সহযোগী শক্তি সরকারকে নিয়ে সফল হবে এটাই প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা