× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দাবদাহ

বিরাগভাজন প্রকৃতি

অজয় দাশগুপ্ত

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৮ পিএম

বিরাগভাজন প্রকৃতি

দেশে এখন প্রচণ্ড গরম। এ গরম যে কত প্রকার ও কী কী তা আমাদের ভালো জানা আছে। একেক বছর সিডনিতে এমন তাপমাত্রা বাড়ে যা অসহনীয়। দেশের সঙ্গে তফাত আরও একটা আছে। আমাদের দেশে প্রকৃতিনিধন স্বাভাবিক ব্যাপার। নেতা থেকে কর্মী অনেকেই গাছ কেটে উজাড় করতে পারলেই টুপাইস কামানোর ধান্দায় দেশের বনবাদাড় উজাড় করার পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। বলছিলাম সিডনিতে গরমের সময় বুশ ফায়ার হয়। আপনারা যারা জানেন তাদের এও জানা আছে, এ বুশ ফায়ার বা আগুনে বন পোড়া কতটা মারাত্মক হতে পারে। এ দেশে ঘন সবুজ যেমন আশীর্বাদÑরাস্তাঘাট, শহর-নগর গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু এ বিষফোড়া বুশ ফায়ারও ভয়ংকর, যার নাম দাবানল। এ দাবানল যে কতটা ভয়াবহ না দেখলে বোঝানো যাবে না। প্রকৃতি-পরিবেশ-প্রতিবেশ তো মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারনেই বৈরী আচরণ করছে।


যে ডিসেম্বরে কোভিড হানা দিল, ২০১৯-এর সে ডিসেম্বরে আমি একদিন অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি চারদিকে কালো ধোঁয়া। সঙ্গে বাতাসে ভারী সিসার গন্ধ। ভেবেছিলাম অল্প পথ হেঁটে গিয়ে বাসে চাপলেই হবে। না, পারিনি। কয়েক কদম পা বাড়াতেই মনে হলো গলায় যেন কাঠকয়লার টুকরা ঢুকে গেছে। দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা। এমনকি নিঃশ্বাস নিতেও বেগ পেতে হচ্ছিল। এ দেশে যেখানে সেখানে ওয়াক থু করে থুতুও ফেলা যায় না। এক প্রান্তে সরে গিয়ে জায়গা খুঁজে থুতু ফেলতে গিয়ে দেখলাম কালো কালো কফের মতো কী যেন বেরোচ্ছিল। দৌড়ে গিয়ে একটা চেইন শপের ভেতর আশ্রয় নিয়ে ছেলেকে কল করলাম। সে গাড়ি নিয়ে এসে না যাওয়া পর্যন্ত আমি যে কী কষ্ট আর যন্ত্রণা পাচ্ছিলাম ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমাদের দেশে অন্তত এ বুশ ফায়ার নেই। আর একটা বিষয় নেই সেটা হলো হিট ওয়েভের তীব্রতা; যা এখানে মাঝে মাঝে আঘাত আনে।

দেশের কথায় আসি। এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে তীব্র গরম থেকে দূরে থাকতে হবে, মাঝে মাঝে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। শরীরের পানিশূন্যতা পূরণে প্রচুর নিরাপদ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। তবে হেপাটাইটিস এ, ই, ডায়রিয়াসহ প্রাণঘাতী পানিবাহী রোগ থেকে বাঁচতে রাস্তায় তৈরি পানীয় ও খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রয়োজনে দিনে একাধিকবার গোসল করতে হবে। গরম আবহাওয়ায় ঢিলেঢালা পাতলা ও হালকা রঙের পোশাক পরতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সম্ভব হলে গাঢ় রঙিন পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, গরম আবহাওয়ায় ঘাম বন্ধ হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, তীব্র মাথাব্যথা, শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হওয়া, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

আর একটি খবরে দেখলাম, তীব্র গরমে জলাজঙ্গল ছেড়ে সাপ ফাঁকা ঘরবাড়ি ও বাসগৃহ সংলগ্ন ছায়াযুক্ত পরিবেশে চলে আসছে জানিয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এক অনুষ্ঠানে। মঙ্গলবার বিকালে স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের (এসআরটিবিডি) সহযোগিতায় ঢাকার দারুসসালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে সচেতনতামূলক এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সাপ উদ্ধার ও অবমুক্ত করার কাজের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, বেশ কিছু প্রজাতির সাপের প্রজনন মৌসুম নিকটবর্তী হওয়ায় এবং গরমে আরামদায়ক পরিবেশের সন্ধানে সাপ জলাজঙ্গল ছেড়ে ফাঁকা ঘরবাড়ি ও বাসগৃহ সংলগ্ন ছায়াযুক্ত পরিবেশে চলে আসছে। এতে মানুষের সঙ্গে সাপের সংঘাত ও সাপে কাটার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশেষজ্ঞরা সাপে কাটলে ওঝার কাছে না নিয়ে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নেওয়ার সুপরামর্শ দিয়েছেন।

এতসব ঘটনা আর সতর্কবাণীর পরও মানুষ যদি কথা না শোনে তবে তো কিছু করার নেই। এও বিবেচনায় রাখতে হবে, হতদরিদ্র বা শ্রমজীবী মানুষের রুটিরুজির প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া ছাড়া পথ নেই। রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, নির্মাণকর্মী বা এমন হাজারো পেশাজীবীর গরমেও কাজ করতে হয় উন্মুক্ত জায়গায়। তাদের জন্য সরকার বা প্রশাসন থেকে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সিটি করপোরেশনের মেয়রদের দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকার নাগরিকের সুবিধা প্রদান। এসব দেশে গরমের সময় পুলিশ সতর্ক থাকে। মানুষ এগিয়ে আসে সাহায্য করতে। ফায়ার ব্রিগেড আর জরুরি দপ্তরগুলো থাকে সদাসতর্ক। হয়তো দেশেও আছে। কিন্তু তা জানান দিয়ে করা হলে মানুষ ভরসা পায়। তারা দেখুক যে এমন সব সার্ভিস তাদের দোরগোড়ায়।

এ প্রসঙ্গে একটা বিষয় না বলে পারছি না। রঙ্গভরা বঙ্গদেশে মানুষ পারেও। আমাদের দেশের রাজধানীতে একজন চিফ হিট অফিসার আছেন। এমন পদবি আর কোথাও আছে কি না জানা নেই। সে কথা থাক। বুশরা আফরিন নামে এ হিট অফিসার পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেছেন, সবাই যদি সঙ্গে ছোট ছোট ফ্যান রাখতে পারেন তবে গরমের হাত থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল গালাগাল আর ট্রল। বুশরা ফ্যান বলতে কি সত্যি ইলেকট্রিক ফ্যানের কথা বলেছেন? ফ্যানের বাংলা তো পাখা। আপনি কাগজ দিয়ে পাখা বানিয়ে সঙ্গে নিতে পারেন না? তালপাতার পাখা কি দেশে নাই হয়ে গেছে? অতিগরমে আমাদের সহায় ছিল এমন পাখা। যে আমলে বিদ্যুৎ ছিল না সে আমলে মানুষ গরম মোকাবিলা করেনি? এমন পাখা, মাটির কলসির পানি আর হাতে-মুখে পানি ছিটিয়ে জানে বাঁচানো মানুষ আমরা।

সেই আমলে বুশরাকে কেউ গালি দিত না। বরং বলত মেয়েটি অন্তত আমাদের পাখার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। মূল কথা হলো কোনো বিষয়কেই সিরিয়াসলি না নিয়ে গালমন্দ করার এক উগ্র প্রবণতা আমাদের ঘিরে ধরেছে। বুশরাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তাকে আমি চিনি না, জানিও না। কিন্তু একটা মেয়ের তার সাধ্যমতো চেষ্টা করা পরামর্শ দেওয়া অপরাধ? দুনিয়ার বহু দেশে এখন গরমকাল এমন তীব্র হয়। অস্বস্তি আর কষ্টে জীবনহানিও ঘটে। বাংলাদেশের এ প্রচণ্ড গরমে মানুষ ভালো থাকুক এটাই কামনা।

  • সিডনিপ্রবাসী লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা