সীমানা পেরিয়ে
জনাথন কুক
প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:১৩ পিএম
বিগত সপ্তাহে এক ভয়াবহ নজিরের সাক্ষী হলো বিশ্ববাসী। ফিলিস্তিনের
খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালের পেছনের উঠোনে এক গণকবর থেকে ৩০০ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
বিগত ছয় মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলিরা ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত করে চললেও এই ঘটনাটি অন্যগুলোর
তুলনায় ব্যতিক্রম। উদ্ধার করা লাশের অনেকগুলোর হাত আর পা কাপড় দিয়ে বাঁধা। এসব আলামত
প্রমাণ করে ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের অমানুষিক নির্যাতন করার পর হত্যা করেছে। কিছু
কিছু লাশে পচন ধরেছে এবং কিছু কিছু লাশের ত্বক বা অন্য অঙ্গ তুলে নেওয়া হয়েছে। গাজার
দ্বিতীয় বৃহত্তম এই হাসপাতালে ফেব্রুয়ারির দিকে ইসরায়েলিরা হামলা চালায়। ওই সময় প্রায়
দশ হাজার মানুষ এই হাসপাতালে আশ্রয় নেয়। হাসপাতালটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ধারণা
করা হচ্ছে, এই হাসপাতালের আশপাশেই আরও কিছু গণকবর খুঁজে পাওয়া যাবে।
সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তাদের মতে, তারা জানেন না আদৌ এত মানুষকে
জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হয়েছে নাকি হত্যার পর কবর দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা থেকে ইসরায়েলের
হামলার এক ধরনের প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়। খান ইউনিসের আগে আল শিফা হাসপাতালেও তারা
হামলা চালিয়েছিল। সেখান থেকে সেনারা সরে আসার পর একটি গণকবর পাওয়া গিয়েছিল। বেইত লাহিয়াতেও
বেওয়ারিশ কবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক সচিব এ ঘটনাকে ‘পাশবিক’ বলে অভিহিত
করেছেন।
এমন ভয়াবহ অপরাধ করার পর সঙ্গত কারণেই অনেকের প্রত্যাশা ছিল, এই খবর
দ্রুতই আলোড়ন তুলবে। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি পর্যাপ্ত গুরুত্ব পায়নি। কয়েক মাস
আগেই ব্রিটেনের বড় একটি মিডিয়া হাউস গণহত্যার খবর ছাপানোর বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
অথচ এই মিডিয়া হাউসই কিয়েভে গণকবরের খবর প্রথম প্রচার করে গোটা বিশ্বে আলোড়ন তোলে।
যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং তারা ইসরায়েলের
কাছে নানাভাবে অস্ত্র বিক্রি করেই চলেছে। ইসরায়েলের কথায় ব্রিটেন ইউএনআরডব্লিউওয়াতে
অনুদান দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। জাতিসংঘে সম্প্রতি ১৪০টি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে দেশ হিসেবে
মেনে নেওয়ার পক্ষে ভোট দিলেও ব্রিটেন তা পারেনি। ব্রিটিশ গণমাধ্যম যেন ইসরায়েলের এই
অপরাধ প্রচার করতে আগ্রহী নয়।
ইসরায়েল ফিলিস্তিনে গণহত্যা পরিচালনা করছে এ বিষয়টি পশ্চিমা গণমাধ্যম
বরাবরই এড়িয়ে চলছে। বিষয়টি অদ্ভুত। ‘অ্যান্টিসেমেটিক’ ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আর এসবকে
কেউ ভাবতে পারছে না। বরং বিষয়টি আরও বড় পরিসরে চলে গিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে কেউ সচেতনভাবে
কোনো বক্তব্যও দিচ্ছে না। বরং পশ্চিমা গণমাধ্যম ফিলিস্তিনের পক্ষে গণমিছিলের বিরুদ্ধে
অবস্থান নিচ্ছে, যা কোনোভাবেই নৈতিক কাঠামোয় মেনে নেওয়া যায় না। পশ্চিমা গণমাধ্যম যেন
মানুষকে নানা রাজনৈতিক ঘটনা দিয়ে বিপথে চালিত করছে। ইসরায়েলিরা গণহত্যা পরিচালনা করছে।
এই গণহত্যামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে ১৫ হাজার নিরীহ মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।
এসব দিকে মনোযোগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।