× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আলোর প্রকল্পে অন্ধকার কাটুক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২৮ পিএম

আলোর প্রকল্পে অন্ধকার কাটুক

বর্তমান বিশ্ব দূষণহীন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার পক্ষে। ফলে সৌরবিদ্যুতের চাহিদা, উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। সৌরশক্তি অফুরান ও পরিবেশবান্ধব। বাংলাদেশেও এর উৎপাদন এবং ব্যবহার বাড়ছে। সে লক্ষ্যে সরকারের রূপরেখাও রয়েছে। সমাজের সর্বস্তরে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার বৃহৎ পরিকল্পনাও রয়েছে। যার মাধ্যমে পরিবেশদূষণ রোধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। গত কয়েক বছরে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েক ধাপ এগিয়েছি। সেই এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির আওতায় রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলায় সড়কবাতি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ২৫ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এজন্য চারঘাট উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে বসানো হয় ৬৪৪টি সোলার সিস্টেম প্যানেল ল্যাম্পপোস্ট। প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি স্ট্রিট লাইট ১০ বছর আলো দেবে এবং বিনামূল্যে মেরামতের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তিন বছর সার্ভিস ওয়ারেন্টি দেবে। কথা ছিল চারঘাট পৌরসভা এলাকায় সূর্যের রশ্মি ও তাপ শুষে নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করবে সোলার প্যানেল। আর সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র জ্বলে উঠবে সড়কবাতি। অথচ সন্ধ্যা হলেই চারঘাট পৌরসভাজুড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার। জলবায়ু ফান্ডের টাকায় স্থাপন করা অধিকাংশ সড়কবাতি পড়ে আছে অকেজো হয়ে। রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবের সঙ্গে সঙ্গে বাতিগুলো নিম্নমানের হওয়ায় স্থাপনের কয়েক মাস পরই অকেজো হয়ে পড়েছে। বাতিগুলো মেরামতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কিংবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনোই উদ্যোগ নেই। কেন নেই? এর উত্তরে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি দামে সৌরবাতি স্থাপনকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের চারঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত জহুরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেছেন, আমাদের সার্ভিস ওয়ারেন্টি ছিল তিন বছর। কাগজকলমে সে সময় পার হয়ে গেছে। এখন আমরা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সার্ভিস দিতে পারব। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এই বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। কাগজকলমে সময় পেরিয়ে গেলেও বাতিগুলো লাগানো হয়েছে কত দিনে? তা কত দিন আলো দিয়েছে? উপজেলার সরদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মধু প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, ২০১৯-২০ বছরে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করতে দুই বছরের মতো সময় লেগেছে। তাতে সার্ভিস ওয়ারেন্টি এখনও আছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ন্যায়নীতি জলাঞ্জলি দিয়ে এভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা অনভিপ্রেত। এ শুধু তিরস্কারযোগ্যই নয়, শাস্তিযোগ্যও। এ ধরনের অপরাধ বারবার নীরবে হজম করার মাধ্যমে প্রকৃত প্রস্তাবে ভবিষ্যতের অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের কথা বরং উৎসাহই দেওয়া হয়। এই ক্ষতির দায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যেমন এড়াতে পারে না, তেমনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষও এড়াতে পারে না। যদি এ ধরনের অপরাধের শাস্তি না হয়, তবে তা অপরাধীদের দায় এড়াতে সাহায্য করবে কি না, সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব মোকাবিলায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে যে প্রকল্প, মানুষের কল্যাণে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে যে ল্যাম্পপোস্ট বসানো, তা যদি কাজই না করে, স্থাপনের কয়েক মাসের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ে, তবে তা কোনোভাবেই মানুষের স্বার্থে ছিল না বরং ছিল ঠিকাদার ও তৎসংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের স্বার্থে। এই অপপ্রক্রিয়াতে দুর্নীতিকেই বারবার প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি এবং অর্থলোভী ও অসৎ মানুষের কারণে আস্থাহীন হয়েছেন সাধারণ মানুষ।

আমরা সংবাদমাধ্যমে এ রকম অনিয়ম-দুর্নীতির ডজন ডজন উদাহরণ উঠে আসতে দেখছি। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণের পরও দুর্নীতি দমনে যে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি, তার আশানুরূপ উদাহরণ দেখছি না। তাহলে কি দুর্নীতি আজ খোলা বিষয়? তা তো নয়। একসময় দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান ছিল রীতিমতো লজ্জার। পরপর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লজ্জাজনক অবস্থানও আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সে অবস্থার পরিবর্তন হয়। বিশেষত সরকারপ্রধানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান আমাদের স্বস্তি দেয়। দুর্নীতিতে বারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লজ্জাজনক অবস্থান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই। কিন্তু দুর্নীতির যে বিষবৃক্ষ আমাদের ভেতরে তার শেকড় ছড়িয়ে দিয়েছিল, তা যে পুরোপুরি উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়নি সে সত্যও মাথা চাড়া দিচ্ছে। আমরা মনে করি, সমাজের নানা স্তরে দুর্নীতির যে শেকড় ঢুকে পড়েছে, তা পুরোপুরি উপড়ে ফেলতে আইনের কঠোর প্রয়োগও করতে হবে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সরকারের সদিচ্ছার পরিমাপের সঙ্গে দরকার সুষ্ঠু রাজনীতি ও স্বচ্ছ প্রশাসন।

দুর্নীতিতে যুক্ত হয়ে পড়ার লজ্জা আছে, যা অনেক সময় দুর্নীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু দুর্নীতি সমাজে যত মান্যতা পেতে থাকে, দুর্নীতিতে যুক্ত হওয়ার লজ্জাও ততই কমতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তখন দুর্নীতিও বেড়ে যায়। দুর্নীতি লাগামছাড়া হলে সমাজ এমন একটি মন্দ অবস্থায় পৌঁছতে পারে, যেখানে সাধারণের কাছেও দুর্নীতিই ‘স্বাভাবিক’ বলেই মনে হতে পারে। যেখানে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়াই সাধারণের কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হতে পারে। এমন অবস্থায় পৌঁছলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। বরং তেমন অবস্থায় ভেঙ্গে পড়তে পারে সমাজব্যবস্থা এবং অর্থনীতি। আমরা সেই সর্বানাশা পথেই যে অনেকটা এগিয়ে যাইনি, তা জোর দিয়ে বলার উপায় রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও অমূলক নয়। যদি সত্যিই আমরা পরিবর্তন চাই, তবে সমাজের নানা স্তরে আজ দুর্নীতির যে বাড়বাড়ন্ত তা থামাতে হবে। শুধু কথার কথা নয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে দুর্নীতিবাজদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। এখন কথা হলো, কাজের কাজটি আমরা সবাই জানি, কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমরা তো দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হতে চাই না। আমরা চাই আলোর নিচের অন্ধকার ঘুচুক।

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা