× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাষ্ট্রচিন্তা

কোন পথে সরকারবিরোধী রাজনীতি

ড. আব্দুল্লাহ হেল কাফী

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২৬ পিএম

কোন পথে সরকারবিরোধী রাজনীতি

রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। তার পরও কিছু কথা সব সময়ই থেকে যায়। রাজনীতির শুরুতেও যেমন থাকে শেষেও তা জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়। পরে উল্লিখিত এ কথাটুকুই হলো দেশের সাধারণ মানুষের কথা, দেশ ও দশের কথা। গণমানুষকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল অতীতে যেমন সফল হয়নি তেমন জনগণের দাবিদাওয়া বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করাও সম্ভব হয় না। মূলত এ দুয়ের পার্থক্যের সূক্ষ্ম দাগটুকু শনাক্ত করতে পারার সক্ষমতার মাধ্যমেই যাচাই করা সম্ভব কোন রাজনৈতিক দল জনগণের দৃষ্টিতে কতটা সফল। রাজনৈতিক কর্মসূচির সফলতাও এজন্য জনগণের অংশগ্রহণের স্বতঃস্ফূর্ততাই নির্ধারণ করে দেয়। কারণ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলেই জনগণের দাবিদাওয়া পুষ্ট হয়। কিন্তু জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করে যত অভিনব রাজনৈতিক কর্মসূচিই নেওয়া হোক না কেন তা অনেকাংশেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যেমনটি ঘটছে বিএনপির ক্ষেত্রে।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে দেখা দিয়েছিল নানা শঙ্কা। পাশাপাশি সময়ের বহির্বিশ্বের চাপ যুক্ত হওয়ায় বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা আশাবাদী ছিলেন তাদের একটানা রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন্দ্র করে সরকারের ওপর তৈরি হবে ঘরে-বাইরের দ্বিমুখী চাপ। কিন্তু বিএনপির মহাসমাবেশে সহিংসতা কেন্দ্র করে সরকারের দেওয়া উল্টো চাপে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। অবশেষে বিএনপিসহ সমমনাদের বর্জন সত্ত্বেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বরাবরই এ নির্বাচনকে ডামি বলে দাবি করলেও দৃশ্যত কার্যকর কোনো চাপ তৈরি করতে পারেনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে কিছুটা উৎসাহ বোধ করলেও এসব দেশের কার্যকর ভূমিকা দেখতে পাননি বিরোধী দলগুলোর নেতারা। দলগুলো মনে করে, দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিল রেখে তাদের সঙ্গে গণতান্ত্রিক বিশ্বও সোচ্চার হবে। ফলে সামনের দিনগুলোয় আন্দোলন চালিয়ে যেতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের সমর্থনকে এখনও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে দলগুলো। বিএনপি ও সমমনারা এখনও নির্বাচন বর্জনে নিজেদের অটল অবস্থান বজায় রেখেছে। বিশেষত স্থানীয় সরকার কাঠামোর বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনেও তারা অংশ নেবে না বলে জানিয়েছে এবং দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী রাজনীতি কোন পথে যাচ্ছে, এই প্রশ্নই সামনে আসছে ঘুরেফিরে।

নিকট অতীতে ভারতীয় পণ্য বয়কটের প্রচারাভিযান শুরু হয়। ২১ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের যে প্রচারাভিযান চলছে, তাতে সংহতি জানালেও এ নিয়ে আপাতত কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি। ভারতবিরোধী রাজনৈতিক বলয়ের পুরোধা বলে পরিচিত এ দলটি অবশ্য অতীতেও বহুবার ভারতের বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা ভারতের রাজনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারাভিযানে দলটি কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। শিগগিরই এ প্রচারাভিযান ঝিমিয়ে পড়ে। এমনটিই স্বাভাবিক। কারণ বিএনপির সংহতি জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে হলেও তারা সুনির্দিষ্ট কোনো সমাধান দেখাতে পারেনি। যেমনটি আগেও বলেছি, রাজনীতিতে শুরু কিংবা শেষ বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমেই সব সময় সফলতা পাওয়া যাবে এমনটি ভাবারও যুক্তিযুক্ত কারণ নেই।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারাভিযান কেন্দ্র করে তারা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবও উত্থাপন করতে পারত। মাল্টিপোলার বিশ্বে একক রাষ্ট্রনির্ভরতা আর মুখ্য বিষয় নয়। কোনো একটি রাষ্ট্রের ওপর বাণিজ্যিক নির্ভরতার ভিত্তিতে কেউ আটকে থাকে না। তবে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের পণ্য বয়কটের সঠিক কারণটি উপস্থাপন এবং বিকল্প প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি কতটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তা-ও বিচার করে দেখা জরুরি। এখন পর্যন্ত দলটি এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি এবং যেহেতু তারা কোনো প্রাক্‌পরিকল্পনা এবং প্রচারাভিযানকালীন পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা-বিশ্লেষণ করেনি তাই এ সংহতি কোনো রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোয়নি। অবশ্য ওই সময় পেছনে ফেলে আমরা সামনে এগিয়ে গিয়েছি। তার পরও পুরোনো ক্ষতের মতো প্রশ্নটি থেকে যাচ্ছে, কোন পথে পরিচালিত হচ্ছে সরকারবিরোধী রাজনীতি?

কোন পথে পরিচালিত হচ্ছে সরকারবিরোধী রাজনীতিÑএমন প্রশ্নের বিপরীতে আরেকটি সরল প্রশ্ন আমাদের সামনে চলে আসে। কোন সময়ে সরকারবিরোধী প্রচার বা কর্মসূচি আসলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায়? সরকারবিরোধী রাজনীতি বলতে মূলত সরকারের কোনো একটি ধারণা, সাময়িক আদর্শ কিংবা রাষ্ট্রের জন্য উপকারী নয় এমন কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বোঝায়। সংসদে বিএনপি বিরোধী দল নয়। যেহেতু তারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি তাই তাদের রাজনীতির ময়দানে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল যাদের বড় জনসমর্থন রয়েছে। জনসমর্থনের ভিত্তিতে দুটি দলই জনগণের চাহিদা, দাবিদাওয়া এমনকি অসন্তোষ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বিএনপিকে এ মুহূর্তে রাজনীতির মাঠে এ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবারই দলটি সুসংহত ধারণা ও সুস্পষ্ট অবস্থান গড়তে না পারায় বরাবরই বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান ও কর্মসূচি দিলেও জনসমর্থন হারাচ্ছে।

১৮ এপ্রিল বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকের আলোচ্য বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে সমাজমাধ্যম এক্সে বৈঠকের কারণ উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশন লিখেছে, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল বুঝতে দলটির নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রথমেই বলেছি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিবৃতির ভিত্তিতে বিএনপি কিছুটা আশাবাদী হলেও এখনও পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মসূচি বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট অবস্থান গড়ে ওঠেনি। ফলে যেকোনো দেশের সঙ্গেই তাদের কূটনৈতিক আলোচনা হোক না কেন, সেখানে রাজনৈতিক কৌশলের প্রসঙ্গটিই বারবার সামনে উঠে আসবে। বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনও যেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যেই বৃত্তবন্দি হয়ে আছে।

টানা পঞ্চমবার আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করায় নানা সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করছেন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও রাজনীতি-বিশ্লেষকরা। আন্দোলনরত দলগুলোর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কীÑএ প্রশ্নও অনেকের। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর জন্য কারাবন্দিসহ নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলা, স্বাভাবিক বা গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নির্বাচনে জনগণ ভোট বর্জন করেছে দাবি করে এটিকে তারা আন্দোলনের অন্যতম বড় সাফল্য বলে মনে করছে। এ অবস্থায় তারা কোন পথে এগোবে বা কীভাবে রাজনীতি পরিচালনা করবে তা-ই দেখার বিষয়। রাজনীতিতে যেহেতু শুরু কিংবা শেষ নেই, তাই অনুমানেরও এখানে কোনো ঠাঁই নেই।

বিএনপি কোন ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠের সক্রিয় হবে এ নিয়ে দলের ভেতরে এবং সমমনা দলগুলোর মধ্যে নানা আলাপ আছে। যেহেতু হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দাবি অর্জন সম্ভব হয়নি, সেহেতু এমন কর্মসূচিতে গিয়ে আবারও নতুন মামলা এবং দমনপীড়নের পরিস্থিতিতে না যাওয়ার আলোচনাও আছে দলটির ভেতরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবার দলটির কৌশল কী হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু দলটির শীর্ষস্থানীয় অনেকেই জানিয়েছেন, তারা নতুনভাবে এবং নতুন কৌশলে আন্দোলন শুরু করবেন। কী সেই নতুন কার্যক্রম তা নিয়ে রাজনীতিসচেতন প্রত্যেকের কৌতূহল রয়েছে অবশ্যই। তবে বিএনপির মতো বড় দলের কাছে বরাবরই একটি প্রত্যাশা থাকে, তারা যেন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার শোভাবর্ধন করে এমন কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেয়। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর সামগ্রিক যে পরিস্থিতি, তাতে রাজনীতির প্রতিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তৃণমূল পর্যায়ের অনেক বিএনপি নেতা। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইতোমধ্যে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন খবরও পাওয়া গেছে। বিএনপিকে এ মুহূর্তে সাংগঠনিক এবং পরে রাজনৈতিক সমন্বয়ের যোগসূত্র খোঁজার বিষয়ে ভাবতে হবে। নয়তো তাদের রাজনীতি শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার মতো দশায় চলে যাবে।


  • রাজনীতি-কূটনীতি বিশ্লেষক। অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা