তানভির হাসান
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:২১ পিএম
হুমায়ুন আজাদের
জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের কামারগাঁয়ে নানাবাড়ি। এ অঞ্চলটি
বর্তমানে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার অন্তর্গত। জন্মসূত্রে তার নাম রাখা হয় হুমায়ুন
কবীর। হুমায়ুন আজাদের বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তবে
পরে পোস্টমাস্টার এবং ব্যবসায়ী হয়েছিলেন। মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও
দুই বোনের মধ্যে হুমায়ুন আজাদ দ্বিতীয়। নিজের বাড়ি রাঢ়ীখাল গ্রামে হুমায়ুন আজাদ বেড়ে
উঠেছেন। নিজের বিভিন্ন আত্মজীবনীমূলক লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন তার শৈশব ছিল অসম্ভবসুন্দর।
তবে এখানেই শেষ হয়। রাঢ়ীখাল গ্রামের কাছেই পদ্মা নদী। রাতের বেলা নদীতে স্টিমার যখন
চলাচল করত তখন তিনি তন্ময় হয়ে শুনতেন। হুমায়ুন আজাদের নিজের লেখায় এ উল্লেখ আছে, ‘স্টিমারের
আওয়াজ আমার কাছে অলৌকিক মনে হতো, তাই আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অলৌকিক ইস্টিমার।’
১৯৭৩ সালে প্রকাশ পায় প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’। ‘কাব্যসমগ্র’র ভূমিকায়
তিনি বলেন, ‘অজস্র অসংখ্য কবিতা লেখার মনোরম দেশে আমি কবিতা লিখেছি কমই।’
১৯৬৪ সালে ভর্তি
হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৬৭ ও ১৯৬৮ সালে স্নাতক
ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন হুমায়ুন আজাদ। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় তিনি
হয়েছিলেন প্রথম বিভাগে প্রথম। ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়
লতিফা কোহিনুর ও হুমায়ুন আজাদ একে অন্যের প্রেমে পড়েন এবং ১৯৭৫ সালে দুজন বিয়ে করেন।
১৯৬৯ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু হয়
হুমায়ুন আজাদের। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি যোগ দিলেন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে। ওই বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায়
ফিরে যোগ দিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হয়ে। ১৯৭৩ সালে
‘রবীন্দ্র প্রবন্ধ : রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা’ নামে তার প্রথম গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
একই বছর প্রকাশিত হয় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’। সেপ্টেম্বরে কমনওয়েলথ
বৃত্তি নিয়ে ভাষাবিজ্ঞান পড়তে স্কটল্যান্ডে চলে যান হুমায়ুন আজাদ।
হুমায়ুন আজাদ
প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক হিসেবে পরিচিত। একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, শিক্ষক,
গবেষক, প্রাবন্ধিক। এত পরিচয়ের মধ্যে তার কবি পরিচয়টিই আলাদাভাবে ধরা পড়ে। হুমায়ুন
আজাদের সব কাজের মধ্যে তাকে কবি বলেই সবাই চেনে। বহুমাত্রিক পরিচয় থাকলেও তিনি মূলত
কবি। বলা চলে, বিশ শতকের ষাটের দশকের কবিতার সচেতন শিল্পী। অনেক সাহিত্য সমালোচক মনে
করেন তার কবিতা আবেগের সৃষ্টিশীল রূপ। হুমায়ুন আজাদের কবিতায় আবেগের পরিশীলিত বোধ এবং
শিল্পরূপ স্পষ্ট। সৌন্দর্য সৃষ্টি, শোভা, মনের কম্পন তুলে ধরার জন্য হুমায়ুন আজাদ দৃষ্টিভঙ্গি
এবং জীবন-অভিজ্ঞতা উপজীব্য করে তার কবিতাকে এমনভাবে চিহ্নিত করলেন যে তা তাকে একেবারেই
আলাদা করে।
বিশ শতকের ষাটের
দশক বাংলা কবিতার ফলবান সময়। এ সময়ের অধিকাংশ কবিই প্রচুর লিখেছেন। তারা রাজনৈতিক অস্থিরতার
মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছিলেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম নেওয়ার অধ্যায়ের দিকে। সে অভিজ্ঞতা,
সেই রক্তাক্ত স্মৃতি, স্বজন হারানোর বেদনা আর শাসকের হাতে শোষিতের লাঞ্ছনার বেদনার
ভেতর দিয়ে তারা পুষ্ট হয়েছেন। এ দশকের অনেক কবিই দেখেছেন ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তি।
দেখেছেন উদ্বাস্তু মানুষের আর্তনাদ। ফলে এ দশকের কবিদের কবিতায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে
মানুষ এবং মানুষের অন্তর্জগৎ। হুমায়ুন আজাদ তার কবিতায় মৃত্যুবোধ ও ব্যক্তিগত যন্ত্রণার
যে আন্তরিক প্রকাশের মাধ্যমে সময় তুলে ধরেছেন, তা বাংলা কবিতায় সহজলভ্য নয়। আজ প্রখ্যাত
কথাসাহিত্যিক, কবি, ভাষাবিজ্ঞানী, প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন
আজাদের জন্মদিন। এদিনে শ্রদ্ধা জানাই এই অসামান্য লেখকের প্রতি।