× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

জোরদার হোক বাংলাদেশ-কাতার বহুমুখী অংশীদারিত্ব

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৭ এএম

জোরদার হোক বাংলাদেশ-কাতার বহুমুখী অংশীদারিত্ব

বিদ্যমান বিশ্ব বাস্তবতায় দেশে দেশে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রক্রিয়া ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। বৈশ্বিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজ নিজ পররাষ্ট্রনীতির বাইরেও বিভিন্ন দেশ নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। আমরাও এর বাইরে নই। স্মরণ করি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক ও বহুমাত্রিক প্রতিভা চার্লি চ্যাপলিনকে। সেই কবে তিনি বলেছিলেন, ‘এই বিশ্বে স্থায়ী কিছুই নয়, এমনকি আমাদের সমস্যাগুলোও নয়।’ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফরে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি সই অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। প্রত্যাশা, দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কাতারের আমিরের এই সফর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক উন্নয়ন আরও দৃঢ় করবে। শেখ তামিম বাংলাদেশকে বিনিয়োগের উদীয়মান গন্তব্য বলে মন্তব্য করেছেন।

আমাদের স্মরণে আছে, গত বছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার ইকোনমিক ফোরাম শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং একই সঙ্গে তখন কাতারের আমিরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সফল বৈঠক করেন। ওই সম্মেলনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি ও মানবসম্পদ বিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন বলেও সংবাদমাধ্যমে তখন খবর উঠে এসেছিল। উল্লেখ্য, এরই প্রমাণস্বরূপ বাংলাদেশ-কাতার ১৫ বছর মেয়াদি এলএনজি গ্যাস সরবরাহের চুক্তি সম্পন্ন করে, যার আওতায় বাংলাদেশ অতিরিক্ত ১.৮ মিলিয়ন টন এলএনজি প্রতি বছর পাবে। বলা যায়, ওই চুক্তিটি সফরের সরাসরি সুফল। কাতারের আমিরের কাছে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে উভয়পক্ষের আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রশংসা করেন কাতারের আমির। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা থাকবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন কাতারের আমির। পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ পরিষদ গঠন, সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন, দুই দেশের মধ্যে দ্বৈত কর পরিহার ও রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ এবং আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা দানের সম্পাদিত চুক্তিগুলো সময়ের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া জনশক্তি কর্মসংস্থান, বন্দর কার্যক্রম, শিক্ষা-উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, যুব ও ক্রীড়া এবং কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারকগুলোও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থাপনায় কূটনৈতিক ও কৌশলগত নানা বিষয়কে আমরা নতুন করে সামনে আসতে দেখতে পাচ্ছি, যা ভবিষ্যতের জন্য নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের কাছে আরও শক্তিশালী করার প্রয়াস নিঃসন্দেহে আরও প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে এবং কাতারের আমিরের এক্ষেত্রে দৃষ্টি আকর্ষণ আমাদের জন্য সুবার্তা বটে। ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং কূটনৈতিক মধ্যস্থতার কারণে কাতার মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত। কাতারে আমাদের রয়েছে উল্লেখযোগ্য শ্রমবাজারও। পেট্রোলিয়ামসমৃদ্ধ দেশটি জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এসব প্রেক্ষাপটে কাতারের আমিরের এই সফর অনেক সম্ভাবনাই উজ্জ্বল করে তুলেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-কাতার বহুমাত্রিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের পথও অনেকটাই সুগম করেছে। এফবিসিসিআইয়ের তরফেও এসব ব্যাপারে যে আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও প্রশস্তকরণের ওপর আমরা গুরুত্বারোপ করি।

গ্রিক দার্শনিক, গণিতবিদ পিথাগোরাস বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ এবং না কথা দুটি সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে ছোট। কিন্তু এ কথা দুটি বলতেই সবচেয়ে বেশি ভাবতে হয়।’ কাতারের আমিরের সফরকালে বাংলাদেশের তরফে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্কের মাত্রা আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাতে কাতারের আমিরের সম্মতিসূচক সাড়া আমাদের সঙ্গতই আশান্বিত করেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী একদিকে যেমন আমাদের অগ্রগতিগুলো কাতারের আমিরের কাছে তুলে ধরেছেন, পাশাপাশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও উৎসাহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। উল্লেখ্য, গত বছরের জুনে কাতারে অনুষ্ঠিত ইকোনমিক ফোরামের আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফিলিস্তিন সংকটের নিরসনসহ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং বিশ্বের চলমান সংকটগুলোতে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার পরিকল্পনা আমাদের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের তরফে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে যেভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে তাতে আমাদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে তাও সঙ্গতই প্রত্যাশা করা যায়। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পদার্পণের প্রেক্ষাপেটে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের সফরের একটি অপরিসীম কূটনৈতিক মূল্য যে রয়েছে তাও অনস্বীকার্য।

প্রায় দুই দশক পর কাতারের কোনো আমির বাংলাদেশ সফর করলেন। এই প্রেক্ষাপটে কাতারের আমিরের এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক আগামীতে আরও সম্প্রসারিত হবে এও প্রত্যাশা। দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ-বাণিজ্য বাড়াতে কাতারের আমিরের সফরে বাংলাদেশ-কাতার জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। এ সফর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বহুমুখী অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করার উপায় নির্ধারণ করবে বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদারের আগ্রহ প্রকাশ এরই একটি সুনির্দিষ্ট দিক বলা যায়। বাংলাদেশকে কাতার বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ হিসেবে বর্ণনা করে সম্পর্কের বহুমাত্রিকীকরণের যে ইঙ্গিত দিয়েছে তা বাংলাদেশ সরকারের দূরদর্শী কার্যক্রমের প্রতিফলন বলা যায়। ঢাকা-দোহার মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে বিশ্লেষকদের এমন মন্তব্যও যথার্থ বলেই প্রতীয়মান হয়। বড় প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ সম্পর্কে কাতারের যে মনোভাব এর ইতিবাচক পরিবর্তন। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে কাতারের আমিরের আশাবাদের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হয়েছে। আমরা মনে করি, বিশ্বায়নের এ যুগে দূরদর্শী কূটনীতি অপরিহার্য। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা