× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মালদ্বীপ-ভারত সম্পর্ক

কূটনীতিতে আনবে বড় পরিবর্তন

গীতা মোহন

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৯ এএম

গীতা মোহন

গীতা মোহন

মালদ্বীপের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসে (পিএনসি) বড় জয় পেয়েছে। মুইজ্জু ভারতবিরোধী ও চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত। ব্যাপক রাজনৈতিক ঘনঘটার মাধ্যমে মুইজ্জু এ বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। মালদ্বীপ পার্লামেন্টের ৯৩ আসনের মধ্যে ৭১টিতেই তার দলের বড় জয় নিশ্চিত হয়েছে। এ বিজয়ের মাধ্যমে মালদ্বীপে আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মুইজ্জুর ক্ষমতা নিশ্চিত হলো। তবে এ বিজয়ের মাধ্যমে ভূরাজনীতিতেও কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে বড় বাঁকবদল হিসেবেই ধরে নিতে হবে মালদ্বীপের নির্বাচনকে। বিশেষত মুইজ্জুর দলের এ বিজয়ের ফলে ভারত নানাভাবে প্রভাবিত হবে।


প্রথমেই এ নির্বাচনে রাজনৈতিক দিকটি বিবেচনা করা জরুরি। মোহাম্মদ মুইজ্জু কট্টর চীনাপন্থি বলে পরিচিত। অতীতে তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং ‘ভারত বর্জন’ প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বেশ আলোচিত হন। প্রচারের মাধ্যমে অনেকের সমর্থনও আদায় করে নেন। উল্লেখ্য, মালদ্বীপে দীর্ঘদিন প্রো-ইন্ডিয়া ধারার রাজনীতিই বেশি চর্চিত হয়েছে। মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি) সব সময় ভারতের ওপর নির্ভরশীল থেকে নিজেদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এমডিপি গতবারের ক্ষমতাসীন দল। এবারের নির্বাচনে তাদের পরাজয় মেনে নেওয়ার মতো নয়। বরং অনেকাংশে হতাশাজনক। দলটি মোটে ১২টি আসনে জয়ী হতে পেরেছে। অন্য আসনগুলোয় তারা যেন পাত্তাই পায়নি। মালদ্বীপের রাজনীতিতে আচমকা এ পরিবর্তনের গুরুত্ব অনেক। এমডিপি এত দিন যে নীতিমালা পরিচালনা করে আসছিল তার সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা কিংবা নীতিমালার প্রতি মানুষের গ্রহণযোগ্যতা কতটাÑএ নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল যা নির্বাচনের ফলাফলের পর পুরোপুরি কেটে গেছে। বিশেষত মালদ্বীপের অতিরিক্ত ভারতনির্ভরশীল হয়ে ওঠার বিষয়টি যে দেশটির মানুষও মেনে নিতে পারেনি তা এখন বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মুইজ্জুর এ বিজয়কে অবশ্য একেবারে ফেলে দেওয়া যাবে না। মুইজ্জু অনেক আগেই বলেছিলেন, তিনি বিজয়ী হলে অবশ্যই ফলাফল এনে দেবেন। তার প্রচারাভিযানে মালদ্বীপের অর্থনৈতিক অবস্থার অগ্রগতি এবং অবশ্যই স্থানীয় সরকারব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা ছিল। মালদ্বীপের মানুষও গণতান্ত্রিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ এ ক্ষেত্রে দেখাতে পেরেছে।

প্রশ্ন হচ্ছেÑএ জয় ভারতের জন্য কী অর্থ বহন করে? মুইজ্জুর এ বিজয়ের পর পার্লামেন্টে মুইজ্জুর দলের লোকই বেশি। ফলে ভবিষ্যতে মালদ্বীপ-ভারত সম্পর্ক নানাভাবে বিঘ্নিত হতে পারে। ঐতিহাসিকভাবে মালদ্বীপের রাজনীতির ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দুভাবেই ভারতের প্রভাব ছিল। দ্বীপরাষ্ট্রটি বিশাল সমুদ্রসীমার বিষয়টি ভেবেই ভারত রাষ্ট্রটির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেছে। কিন্তু মুইজ্জু বিজয়ী হওয়ার পর তার ঝোঁক চীনের দিকে চলে যাবে এমনটিই স্বাভাবিক। অর্থাৎ সমুদ্রসীমা বিষয়ক ভারত-মালদ্বীপ কৌশলগত সম্পর্ক এবার কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হতে চলেছে। এটুকু নিশ্চিত, মালদ্বীপের নীতিমালা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বেইজিংয়ের সঙ্গে সামনে বাড়বে। চীনঘেঁষা এ অবস্থান নিশ্চিতরূপেই ভারতের জন্য কিছু সমস্যা তৈরি করছে। কারণ অবকাঠামোগত কিছু সুবিধা এখন চীন সহজেই পাবে। এমনকি চীনা অবস্থান এবং নীতিমালার ব্যবহার শুরু হলে দ্বীপরাষ্ট্রে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থানও অনেকাংশে কমে আসবে। এ নীতিমালার প্রয়োগের মাধ্যমে সিনো-মালদ্বীপিয়ান সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে এমনটিই নয়, বরং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রনীতিতেও বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। আর পররাষ্ট্র নীতিমালার ক্ষেত্রে ভারত থেকে মালদ্বীপ অনেক দূরে সরে যাবে।

রাজনৈতিক সংকট বাদে এ নির্বাচনের ফলাফল ভারতের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত কী কী সমস্যা তৈরি করে তা-ও ভাবনায় রাখা জরুরি। ভারতের জন্য মালদ্বীপের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অনেক জরুরি। দ্বীপরাষ্ট্রটির ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এমনটি গুরুত্বপূর্ণ। ভারত মহাসাগরে এ রাষ্ট্রটি মেরিটাইম চেক পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত। কারণ এ একটি অবস্থান থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথে এগিয়ে যাওয়া যায়। এ অঞ্চলে নিজের আধিপত্যের জন্য মালদ্বীপের সঙ্গে চীনের দৃঢ় সম্পর্ক একটি বড় প্রতিবন্ধকতা অবশ্যই। এমনকি ভারতের সমুদ্র নিরাপত্তার জন্যও তা বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বলা যায়, মালদ্বীপ দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় বিনিয়োগ এবং অনুদানের ওপর নির্ভর করছে। ভারতীয় বিনিয়োগের কারণে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্কও গড়ে উঠেছে। কিন্তু মুইজ্জুর সরকার ক্ষমতা পাওয়ার পর এ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ব্যাহত হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু সম্প্রতি মালদ্বীপের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারতের গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। এ বিষয়টি অস্বীকার না করলেও তার ভূরাজনৈতিক চিন্তা এবং কৌশলগত কূটনৈতিক প্রাধান্য বেইজিংয়ের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে। ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন বহু আগে থেকেই রয়েছে। তবে এখন মালদ্বীপের রাজনীতির বাঁকবদলের ফলে কৌশলগত কূটনীতির ধরনও তারা বদলাবে। আর এভাবে চীনের সঙ্গে মালদ্বীপের নিবিড় সম্পর্কের ক্রমপরিণতি ভবিষ্যতে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কের রূপ নির্ধারণ করে দেবে। ভারত এ ক্ষেত্রে মালদ্বীপের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন হতে পারে এ নিয়ে ভাবতে পারে। নিজের কৌশলগত স্বার্থ আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ে ভারসাম্য তৈরি করতে হবেই। মুইজ্জুর সরকারের সঙ্গে তাদের গঠনমূলকভাবে সম্পর্ক গড়তে হবে। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের কূটনীতিকরা নিয়মিত আলোচনা করতে পারেন। আলোচনা সাপেক্ষে তারা একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়গুলোকে বৈচিত্র্যকরণ করতে পারেন। আর এভাবে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা অনেকাংশেই কাটানো সম্ভব হবে বলে মনে হয়।

মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বদল এসেছে। মুইজ্জু সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা আস্তে আস্তে বদলাবে। আর এ নির্বাচনের ফলাফল কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন আনবে। এটুকু বোঝা যাচ্ছে, দেশটির রাজনীতি ও কূটনীতিতে বড় পরিবর্তন ভূরাজনৈতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতায় পরিবর্তন আনবে এবং ভারত মহাসাগরে আঞ্চলিক শক্তির মাত্রাগুলো প্রতিবন্ধকতার মুখে ঠেলে দেবে

  • সাংবাদিক

ইন্ডিয়া টুডে থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা