× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঐতিহ্য

হারিয়ে যাচ্ছে পালকি

তাসনিম আলম

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৬ এএম

হারিয়ে যাচ্ছে পালকি। ছবি : সংগৃহীত

হারিয়ে যাচ্ছে পালকি। ছবি : সংগৃহীত

‘হুন হুনা হুন হুনরে’ বা ‘চার বেহারার পালকি চড়ে যায় রে কন্যা পরের ঘরে’ গ্রাম বাংলার মেঠো পথে একসময় এমন গান বা ছন্দের সুরে বলার ভঙ্গিমা এখন আর দেখা যায় না। আধুনিক সড়ক অবকাঠামো এখন গ্রামেও পৌঁছে গেছে। বিয়ের আসর কিংবা যাতায়াতের এ মাধ্যম এখন আধুনিক যোগাযোগ অবকাঠামোর কারণে হারিয়ে গেছে বলা যায়। কিছু উপলক্ষে অবশ্য পালকির ব্যবহার রয়েছে। তা-ও হারিয়ে যেতে বসেছে অনেক স্থানে এ ঐতিহ্য সম্পর্কে মানুষের ধারণা কমে যাওয়ায়। কালের বিবর্তনে পালকি এখন জাদুঘরে ও বইয়ের পাতায় স্থান পেয়েছে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই পালকির সঙ্গে পরিচিত না। বইয়ের পাতায় বা লোক-কারুকাজে তার পরও পালকি রয়ে গেছে। এককালে বর পালকি চড়ে কনের বাড়ি যেত, আবার কনেও পালকি চড়ে শ্বশুরবাড়ি আসত। তবে এখন তার প্রয়োজন যেন ফুরিয়ে গেছে।

উপমহাদেশে পালকির প্রচলন কখন হয়েছিল এ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। ধারণা করা হয়, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে পালকির প্রচলন। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পালকির প্রচলন ছিল। এশিয়ার অনেক অঞ্চল বিশেষত জাপান ও চীনে এখনও পালকির দেখা পাওয়া যায়। সাধারণত একটি বা দুটি লম্বা বাঁশ বা কাঠের দণ্ডে বড় চেয়ার বা খাট ঝুলিয়ে এবং কাঠ, বাঁশ বা কাপড় দিয়ে আবৃত করে পালকি তৈরি করা হতো। পালকি দেখতে অনেকটা কাঠের বাক্সের মতো। প্রতিটি পালকির দৈর্ঘ্য ৬ ফুট ও প্রস্থ তার অর্ধেক। কাঠামো লম্বা ও দুই পাশে বাঁশের সাহায্যে গাঁথা। পালকির ওপর দামি কাপড় দ্বারা মোড়ানো হয়। পালকি বহনকারীদের ডাকা হতো ‘কাহার’ বা ‘বেহারা’ নামে। প্রতিটি পালকি চালাতে চারজন বেহারা বা কাহার প্রয়োজন হতো।

অতীতে পালকি আমাদের দেশের জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী ও গরিব সবার কাছে সমান পছন্দনীয় বাহন ছিল। তখন আবার সব পরিবারে পালকি ছিল না। বিত্তশালী, জমিদার ও উচ্চবংশীয় লোকদের প্রত্যেকের বাড়ি পালকি ছিল। সে সময় পালকি বংশের মর্যাদার প্রতীক হিসেবেও ব্যবহার হতো। নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকদের বাড়িতে পালকি ছিল না। তাই তাদের জন্য ছিল অন্য ব্যবস্থা। তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে পালকি ভাড়া করত অর্থ বা কড়ির বিনিময়ে। কিন্তু বিয়ে বা যেকোনো উৎসবে পালকি থাকতেই হতো। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ অনেক কবি পালকি নিয়ে লিখেছেন। পালকি চলার সময় বেহারারা ‘হুন হুনা হুন হুনরে’ বা ‘চার বেহারার পালকি চড়ে যায় রে কন্যা পরের ঘরে’ এসব গান গাইত। এ ছাড়া ‘পালকি চলে, পালকি চলে, গগনতলে আগুন জ্বলে’ এবং আরও সুন্দর ছন্দবদ্ধ কথা ‘... তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে...।’ সে সময় পালকির কথা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা তার এ দেশে আসা ভ্রমণ কাহিনী ‘রোহেলা’য়। তার লেখার মধ্যে এ কথাও পাওয়া যায় যে, তিনি পালকি বহনের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

পালকি এখন স্থান পেয়েছে জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য। সেদিন আর বেশি দূরে নয় যখন নতুন প্রজন্ম লোকশিল্প জাদুঘরে গিয়ে সাজানো গোছানো কৃত্রিম পালকি দেখবে। পালকির সেই ঐতিহ্যময় হাজার বছরের ব্যবহার ক্রমে গ্রাস করেছে যান্ত্রিক সভ্যতার বিদেশি বিভিন্ন রঙের বাহারি গাড়ি। পালকি বহনের দৃশ্য এখন যেন অনেকটাই স্বপ্ন। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেছে ছন্দমাখা পালকি বহনের গানও।

  • শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা