× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

যৌতুকের অভিশাপ ঘোচাতে যূথবদ্ধ প্রয়াস জরুরি

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫২ এএম

যৌতুকের অভিশাপ ঘোচাতে যূথবদ্ধ প্রয়াস জরুরি

বাঙালি সমাজে যৌতুক বা পণপ্রথা বহু বছরের পুরোনো ব্যাধি। যৌতুকের নানা ঘটনা ও নারী নিগ্রহের মর্মস্পর্শী চিত্র সভ্যতা-মানবতার কলঙ্ক নিরূপণ করে। এরই ফের প্রতিফলন দেখা গেছে ২২ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। ‘যৌতুকের দাবিতে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে তা কতটা বর্বরোচিতÑ ভাবলেও বিস্ময় জাগে। একই সঙ্গে আমাদের পীড়িত এবং ক্ষুব্ধও করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদারীপুরের সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের সুইচারভাঙ্গা গ্রামে ঈশিতা আখতারকে তার শ্বশুর পরিবারের সদস্যরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। প্রায় এক যুগ আগে পারিবারিকভাবে ঈশিতার বিয়ে হয় এবং তখন নগদ টাকাসহ মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র দেওয়া হয় তার স্বামীকে। এর পরও প্রতিনিয়ত আরও টাকার দাবিতে ঈশিতার ওপর তার স্বামী এবং পরিবারের লোকজন নানাভাবে নির্যাতন চালাত। এ ব্যাপারে নিগৃহীতা নালিশ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পিটিয়ে ঈশিতাকে হত্যা করার পরও তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা এই মর্মস্পর্শী ঘটনার নিন্দা জানাই এবং যথাযথ আইনানুগ প্রতিকারের দাবি করি।

যৌতুক সমাজবিরোধী প্রথা হলেও তা যেন অনেকটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়ের আধুনিকায়নে যৌতুকের মতো সামাজিক ব্যাধির যেখানে উপশম হওয়ার কথা, কিন্তু উল্টো যৌতুকের দাবিতে নারী নিগ্রহের মতো বর্বরোচিত ঘটনা এখনও ঘটছে। এর অনেকটাই থেকে যায় সংবাদমাধ্যম কিংবা সমাজ সচেতনদের দৃষ্টির অন্তরালে। অনেকেই নিপীড়ন মুখ বুজে সহ্য করেন আবার অনেকে বেছে নেন আত্মহননের পথ কিংবা নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারান। মাদারীপুরের ঈশিতা শেষেরটির দুঃসহ স্মারক। যৌতুকের ফলে নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা ও নারী নিগ্রহ কতটা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে এরও সাক্ষ্য মেলে এই মর্মন্তুদ ঘটনার মধ্য দিয়ে। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, খুব দূর অতীতের নয় যৌতুক একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আমরা দেখছি, উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত সব ক্ষেত্রেই যৌতুক বা পণপ্রথা সংক্রামক রোগের মতো ছড়িয়ে গেছে। এমন নজিরও আছে, এই রোগের সংক্রমণে অনেক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বরপক্ষের চাহিদামতো পণ জোগাড় করতে গিয়ে অনেক পরিবারে নেমে এসেছে দুঃসহতার ছায়াÑ এমন নজিরও কম নেই। যৌতুক নারীর জন্য কতটা অবমাননা ও আত্মমর্যাদাহানিকর এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন।

আমাদের স্মরণে আছে, নুসরাত জাহানের কথা। যৌতুকের জন্য স্বামী ও শ্বশুরের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী। নির্যাতিতা মেয়েকে উদ্ধার করতে গিয়ে নুসরাতের বাবা-মা ও ভাইও চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহায়তায় তারা উদ্ধার হয়েছিলেন। কিন্তু ওই বর্বরোচিত ঘটনার পরও থানা কোনো মামলা নেয়নি এই বার্তাও উঠে এসেছিল সংবাদমাধ্যমে। কারণ অভিযুক্ত দুই নির্যাতনকারী নুসরাতের স্বামী এবং তার শ্বশুর অত্যন্ত ক্ষমতাবান ছিলেন। ছেলে ও বাবার পরিচয় তাদের এমন প্রভাবশালীতে পরিণত করেছিল যে, থানা-পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়নি। এমন নুসরাত জাহানের সংখ্যা এই সমাজে কম নয়। প্রভাব প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক কারণে অনেক নির্যাতনকারীই পার পেয়ে যান তা আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় মূর্ত। এ থেকে প্রতীয়মান হয়Ñ যৌতুক আমাদের সমাজে অভিশাপের ছায়া কতটা বিস্তৃত করেছে। সমাজ থেকে যৌতুক কিংবা পণপ্রথা বিলুপ করতে হবে এবং যৌতুকের জন্য নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধÑ এমন অঙ্গীকার সরকারের তরফে এবং সামাজিক পরিসরে বারবার ব্যক্ত হলেও এর সুফল দৃশ্যমান নয়। যৌতুক বা পণপ্রথার বিরুদ্ধে আইন থাকা সত্ত্বেও যৌতুক লোভীদের লোভের আগ্রাসনের পথ রুদ্ধ করা যায়নি। নিশ্চয়ই এমনটি সরকার ও সমাজের স্পষ্টতই ব্যর্থতা। আমরা দেখছি উন্নয়ন-অগ্রগতির সড়কে ধাবমান বাংলাদেশে যৌতুকের দাবিতে এখনও যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জার।

যৌতুক নারী নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ধর্মীয় ও আইনগত দিক থেকে অবৈধ এই কুপ্রথার শিকার হয়ে জীবনের ক্ষয় কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সুস্থ মানসিকতার, বলিষ্ঠ জীবনবোধ, সমাজকল্যাণমূলক ভাবনা ও গঠনশীল দৃষ্টিভঙ্গিই পারে এর নিরসন ঘটাতে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া অবশ্যই জরুরি বটে, কিন্তু এর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি। অর্থাৎ যূথবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া এই অভিশাপ ঘোচানো যে দুরূহ হয়ে পড়েছে বিদ্যমান বাস্তবতা এ সাক্ষ্যই দেয়। যৌতুক যে অপরাধ তা অনেকেই জানেন। কিন্তু এর পরও এর রাশ টানা যাচ্ছে না। আমাদের স্মরণে আছে, নিকট অতীতে বেসরকারি সংস্থা ‘জীবিকা’র উদ্যোগে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে যৌতুক না দেওয়ার পক্ষে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। জেলা প্রশাসনও এই আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং এর সুফল ওই অঞ্চলে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। তাতে প্রতীয়মান হয়, সংঘবদ্ধ উদ্যোগ যেকোনো নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সতীদাহ প্রথাকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ধর্মের অংশ মনে করতেন। ১৮২৯ সালে আইন করে সেই প্রথা বন্ধ করা সম্ভব হয়। তাই আমরা মনে করি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ থাকলে যৌতুক বা পণপ্রথা বন্ধ করা কঠিন কিছু নয়। সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি জনসচেতনতা এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারই এর যথাযথ প্রতিবিধান বলে আমরা মনে করি।

মাদারীপুরের ঈশিতা আখতারের মর্মন্তুদ ঘটনা থেকেই শুরু হোক এর কার্যকর অগ্রযাত্রা। আমরা বিশ্বাস করি, সুশাসন নিশ্চিত হলে অন্ধকার দূর করা কঠিন কিছু নয়। বিগত দেড় দশকে দেশে নানা পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন কার্যকরভাবে দৃশ্যমান যেমন জরুরি, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে নারীর স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পথও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মানুষ হিসেবে পরিবারের, সমাজের বা রাষ্ট্রের প্রতি স্ব-স্ব ক্ষেত্র থেকে দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করতে হবে। যৌতুকের চাপে আর যাতে কোনো সর্বনাশ না হয়, নীরবে কারও অশ্রু না ঝরে, বর্বরতার থাবায় যাতে জীবন প্রদীপ নিভে না যায় এবং কোনো পরিবারে যাতে নেমে না আসে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো অভিঘাতÑ তা নিশ্চিত করার দায় সর্বাগ্রে সরকারের, একই সঙ্গে সমাজের সচেতন মহলের। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা