× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রান্তিক মানুষের ঋণের মামলা নিষ্পত্তি হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৫৯ পিএম

আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:১২ পিএম

প্রান্তিক মানুষের ঋণের মামলা নিষ্পত্তি হোক

বিশেষ ঋণ, ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ, উদ্দেশ্যমূলক মামলায় স্থগিতাদেশপ্রাপ্ত ঋণ, রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের পুনঃতফসিলকৃত ঋণ লুকিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর অভিযোগ কম নয়। বেহাত হওয়া ঋণ আদায়ের যথাযথ চেষ্টা না করে খেলাপিদের নতুন ঋণ নেওয়ার পথ সহজ করে দেওয়ার কিংবা ঋণ অবলোপন নীতি শিথিলের অভিযোগও অনেক। এই প্রেক্ষাপটে যখন দেখা যায়, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক-জেলে-মৎস্যজীবীদের বিশেষ করে প্রকৃতির বৈরিতায় যখন তারা ঋণখেলাপির কাতারে নাম লেখান এবং তাদের ঋণ আদায়ে ব্যাংক কঠোর অবস্থান নেয়; এমনকি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পথও সুগম করে, তখন সংগতই প্রশ্ন জাগে। ২১ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন ঋণখেলাপিদের ঋণ আদায়ের নামে অহেতুক হয়রানি করা যাবে না এবং মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করতে মন্ত্রিপরিষদ থেকে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিলম্বে হলেও এই উদ্যোগের আমরা সাধুবাদ জানাই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অডিট আপত্তি থেকে বাঁচতে সার্টিফিকেট মামলা করেছেন অনেক ব্যাংক কর্মকর্তা। যাদের নামে মামলা হয়েছে, তাদের অনেকেই ঋণ পরিশোধ করেছেন আবার অনেকেই আসলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা পরিশোধ করেছেন। তারপরও সার্টিফিকেট শাখা থেকে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। 

প্রান্তিক কৃষক, জেলে বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যে ঋণ নেন এর পরিমাণ নিতান্তই কম। অনেকেই এই ঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন আবার কেউ কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়ে ঋণ পরিশোধে বিপাকে পড়েছেন। এমন অনেক প্রান্তিকজন মামলার ভয়ে পালিয়েও বেড়াচ্ছেন। ফলে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এর বিরূপ অভিঘাত লেগেছে। অনেক ঋণগ্রহীতা আসল টাকা পরিশোধ করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে সুদ মওকুফের আবেদন করেও বছরের পর বছর এ থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না। আমাদের স্মরণে আছে, আইএমএফ বলেছিল, ‘বাংলাদেশে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের মধ্যে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার প্রবণতার শিকড় অত্যন্ত গভীরে। আবার প্র্রভাবশালী, ওপর মহলে ভালো যোগাযোগ আছে- এমন অনেকেই ঋণ ফেরত দেওয়ার কোনো তাগিদই অনুভব করেন না। বাংলাদেশের আর্থিক খাতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকেন প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান এসব ঋণগ্রহীত।’ তা এমন বাস্তবতায় প্রান্তিক যারা অনিচ্ছাকৃত ও পরিস্থিতির কারণে বিপাকে পড়েছেন তাদের প্রতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রুদ্রমূর্তি সংগতই অনেক প্রশ্ন দাঁড় করায়। প্রান্তিক জনগণ, ভিন্নভাবে সক্ষম জনগোষ্ঠী, শ্রমিক ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় থাকা মানুষের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা রয়েছে। আমাদের স্মরণে আছে, করোনার দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জন্য একটি আবর্তনশীল পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ব্যাংকের রয়েছে। ‘প্রান্তিক কৃষকের ব্যাংকঋণ সম্প্রসারণ’ এই কর্মসূচিও সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছিল। 

ব্যাংকের ঋণ নিয়ে নিয়ম কিংবা রীতিমাফিক তা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করা ঋণগ্রহীতার নৈতিক দায়িত্ব। কিন্তু বলবান গোষ্ঠী বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়ে নানা কৌশলে খেলাপি হলেও ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের ওপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আচরণ সুস্পষ্টভাবে বৈষম্যমূলক নীতির প্রতিফলন। ‍কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতের সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ে যারা যুক্ত তারা দেশের অর্থনীতিতে কোনো না কোনোভাবে অবদান রাখছেন- তা অনস্বীকার্য। দেশের কৃষকদের বড় সমস্যা হলো- ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে না পারার কারণে কম মূল্যে তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণে তারা নায্য দামও পান না। তা ছাড়া কৃষি ও প্রাণিসম্পদ খাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাতও লাগছে। এই অতি কম সামর্থ্যবান মানুষদের ওপর যখন এমন বৈরী প্রভাব পড়ে, তখন তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর অবকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নানাভাবে আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে পড়ে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষুদ্রঋণ কতটা ইতিবাচক ফল বয়ে এনেছে এ নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে। আমরা দেখছি, অনেক বেসরকারি সংস্থা তাদের কার্যক্রমেও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ক্ষুদ্রঋণভিত্তিক। এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয়, কোনো কোনো বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে ঋণগ্রহীতা ভিটেমাটিহীন হয়ে পড়েছেন। কাউকে কাউকে আরও করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে- এমন মর্মস্পর্শী দৃষ্টান্তও আছে। আমরা মনে করি, ঋণ নীতিমালা সবারই এক হওয়া উচিত। একই সঙ্গে এও উল্লেখ্য, বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম আর ব্যাংকের কার্যক্রম নিশ্চয়ই জনগোষ্ঠীর কল্যাণে ভিন্নতর। 

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যাংকঋণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর তাগিদ ইতোমধ্যে কম দেওয়া হয়নি। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিঋণ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে গত নভেম্বরে বাংলাদেশে ব্যাংক নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বড় ঋণের পরিবর্তে ছোট ঋণ বিতরণে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। এও বলা হয়েছে, কোটি টাকা ঋণের পরিবর্তে দশ টাকার ক্ষুদ্র হিসাবধারী কৃষক, মৎস্যচাষি, খামারি এবং ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে যারা এখন পর্যন্ত কৃষি ও পল্লীঋণের সুবিধা পাননি তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দিতে হবে। কিন্তু অভিযোগ আছে, কিছু ব্যাংক ক্ষুদ্র কৃষক ও প্রান্তিক গ্রাহককে কৃষিঋণ দিতে অনীহা দেখাচ্ছে। উপরন্তু যাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হয়েছে, সেগুলোর নিষ্পত্তিতেও তাদের তরফে যথাযথ উদ্যোগ নেই। প্রান্তিক কৃষক, মৎস্যচাষি কিংবা খামারিদের অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে নানারকম হেনস্থার শিকার হন- এমন খবরও সংবাদমাধ্যমে ইতঃপূর্বে বহুবার উঠে এসেছে। অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, দালালচক্রের চক্রান্তে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই তাদের ‘তুষ্ট’ করলে, তবেই ঋণ মেলে- এমন অভিযোগও কম উঠে আসেনি। সার্বিক প্রেক্ষাপটে প্রান্তিক পর্যায়ের ঋণগ্রহীতাদের ঋণগ্রহণ থেকে শুরু করে পরিশোধ পর্যন্ত যেসব সংকট জিইয়ে আছে, এর নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি। 

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, মৎস্যজীবী, খামারিসহ এই পর্যায়ের যারা অনিচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হয়েছেন কিংবা যারা আসল টাকা পরিশোধ করে সুদ মওকুফের আবেদন জানিয়েছেন, একই সঙ্গে যারা সার্টিফিকেট মামলায় জড়িয়ে আছেন তাদের ব্যাপারে আশু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। মন্ত্রিপরিষদ থেকে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত কার্যকরের তাগিদ আমরা দিই। আমরা আশা করব, ক্ষুদ্রঋণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যাতে ব্যাহত না হয়। বরং ক্ষুদ্রঋণের বৃহৎ প্রভাব কীভাবে দৃশ্যমান করা যায়, সেই নিরিখে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ পদক্ষেপ নেবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা