× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিন

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৫ পিএম

বাজার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিন

জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্তরাও এ ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় মানুষের জীবনযাত্রার নানা ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতার বিষয়গুলোও বারবার উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে তার চেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে আমাদের বাজারে, এ আমাদের অভিজ্ঞতা। আন্তর্জাতিক বাজারে উল্লেখযোগ্য হারে কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম কমলেও আমাদের এখানে এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায় না। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে, সে পণ্যটি আমদানি হওয়ার আগেই আমাদের বাজারে বাড়তি দাম রাখা হয়। তা ছাড়া দেশে উৎপাদন হয় এমন পণ্যের দামও বাজারে যুক্তিহীনভাবে ঊর্ধ্বমুখী। আর সেই রেশ কাটছেই না। ফলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। যার প্রমাণ উঠে এসেছে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে। ১৯ মার্চ ‘যৌক্তিক মূল্যের সুফল নেই ৩৪ দিনেও’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি বাজারে অব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণহীনতারই উদাহরণ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ১৫ মার্চ নিত্যপ্রয়োজনীয় ২৯টি পণ্যের ‘যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ’ করে ওইদিন থেকেই তা কার্যকরের নির্দেশনা দেয়। তাদের সে নির্দেশনার পর ইতোমধ্যে পেরিয়েছে ৩৪ দিন। কিন্তু সেই নির্দেশনা ‘কাজির গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ প্রবাদের সার্থক রূপ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেওয়া মূল্যে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পণ্য বিক্রি তো হ্য়ই না, বরং কোনো কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অযৌক্তিকভাবে। ঈদুল ফিতরের আগের দামের সঙ্গে ঈদুল ফিতরের পরের দামেরও রয়েছে বড় পার্থক্য। রমজানে আলু কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। দেশি রসুন ঈদের আগে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও তা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা কেজি। আমদানি করা রসুনও কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০-২০ টাকা। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি হচ্ছে ছোলা, মসুর ডাল, গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ব্রয়লার মুরগি, সোনালি মুরগি, শুকনো মরিচসহ অনেক নিত্যপণ্য। বাজারে সবজিও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।

বাজার পরিস্থিতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা ইতঃপূর্বে লিখেছি। আমাদের মজুদ ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টানা যায় না। তাদের অতিমুনাফালোভী মনোভাব এবং ব্যবসায়িক নিয়মনীতি উপেক্ষায় নাভিশ্বাস ওঠে ভোক্তার। গত কয়েক বছরে আরেকটি অসাধু চক্র যুক্ত হয়েছে, যারা রমজানে দাম না বাড়িয়ে রমজানের দুয়েক মাস আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। আবার দাম বাড়ায় রমজান-পরবর্তী সময়ে। সেই সঙ্গে বাজারে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সংকট না থাকলেও দাম বাড়ানোর কূটকৌশল নেওয়া হয়। এবারও সেই অসাধু প্রক্রিয়ার দেখা মিলেছে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে অযৌক্তিক হারে।

সরকার রমজান উপলক্ষে বাজারে কড়া নজরদারির পাশাপাশি নানান উদ্যোগ নেয়। আমরা শুধু রমজানেই নয়, সারা বছরই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলি। কারণ অসাধু চক্রটি প্রতিনিয়ত নতুন কৌশলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, বাজার অস্থিতিশীল করে তুলছে। গড়ে তুলছে সিন্ডিকেট। সেই সঙ্গে আমরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি টিসিবিকেও শক্তিশালী করার জন্য বলি। আমরা জানি, সরকার বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার পথ মসৃণ করতে নানা রকম সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রায় ১ কোটি পরিবারবকে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্য দিতে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রচলন করেছে। পাশাপাশি সরকারের তরফে খোলাবাজারে চাল বিক্রি, ওএমএস, ফেয়ার প্রাইস ইত্যাদি কার্যকর রয়েছে। ‘ট্রাকসেল’-এর কার্যক্রমও রয়েছে টিসিবির উদ্যোগে। আমরা মনে করি এ ধারাবাহিকতা রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ যেন উপকৃত হয় সে লক্ষ্যে বাজারে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। শুধু রাজধানী, বিভাগীয় শহর বা জেলা পর্যায়ে নয়, উপজেলা ও ক্ষুদ্র বাজারগুলোও মনিটরিংয়ের আওতায় আনার পাশাপশি অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে ভোক্তাকে বাজারমূল্য বা পণ্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। আমরা এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই এর আগে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি নজরদারি কঠোর করার তাগিদ দিয়েছি। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রায়ই উঠে আসছে কীভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের পকেট সমৃদ্ধ করছে। আড়তদার-মজুদদারদের নানামুখী কারসাজির কথাও বারবার উঠে আসছে। অসাধুদের দৌরাত্ম্যে লাগামহীন হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্য। অভ্যন্তরীণ বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি নতুন নয়। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, এ রকম নানান অপতৎপরতার খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে এলেও আমাদের সামনে এর দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকারের নজির নেই। আমরা প্রতিকার প্রত্যাশা করি। কারণ অসাধুদের যদি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, অপরাধীর যদি যথোপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হয় তা হলেই বাজার সিন্ডিকেটমুক্ত করা সম্ভব। তা হলেই সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে জীবন যাপন করতে পারবে। ইতঃপূর্বে বিভিন্নভাবে সরকারের দায়িত্বশীল মহলের তরফেও সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করা হয়েছে, সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা পরিষ্কার করা হয়নি বা সিন্ডিকেটের অপতৎপতার বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তি প্রয়োগ করা হয়েছে, তা-ও জানা যায়নি। আমরা আশা করি, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর যেকোনো ধরনের কারসাজি রুখতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। আমরা শুধু নির্দেশনা বা দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার মধ্যেই দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ থাক, তা চাই না। আমরা চাই মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকারের অঙ্গীকার শুধুই কথার কথা হয়েই থাকবে না, নির্দেশনাতেই সব থেমে থাকবে না। বরং অঙ্গীকার এবং নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে। সেই সঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী পক্ষগুলোর কাজের ক্ষমতা ও পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি তারা যেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন, সেজন্য তাদের সব সীমাবদ্ধতা দূর করতেও সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সরকার আইন করে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণের যে দায়িত্ব সংস্থার হাতে অর্পণ করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে সব প্রতিবন্ধকতা দূর করতেও উদ্যোগী হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা