× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বায়ুদূষণ

নিঃশ্বাসে বিষ, বহুমাত্রিক ক্ষতি

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৫ পিএম

নিঃশ্বাসে বিষ, বহুমাত্রিক ক্ষতি

বাংলাদেশের বায়ুদূষণের পরিমাণ এখন দিন দিন বেড়েই চলেছে দূষণ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দূষণ যেমন বাড়ছে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুজনিত নানা রোগ মানুষের গড় আয়ুও কমে যাচ্ছে একদিকে যেমন নগরায়ণ, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে দ্রুত, অন্যদিকে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে বায়ুদূষণ যেটা বাড়ছে সেটা আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকছে না দূষণ হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি এর প্রভাব পড়ছে বেশি ক্লিন এয়ার ফান্ডের একটি তথ্যমতে স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি ফান্ডিং ২০২৩-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নের তহবিল প্রাপ্তিতে তৃতীয় ছিল বাংলাদেশ এতে আরও বলা হয়, ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বায়ুর মান উন্নয়নে বাংলাদেশ . বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছে আরও একটি তথ্য অনুযায়ী শীতকালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি এবং অস্বাস্থ্যকর হলেও বর্ষাকালে দূষণ একটু কম থাকে

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের তথ্যমতে বিশ্বে দূষণের তালিকায় শীর্ষে এখন ঢাকা। সংস্থার তথ্যা অনুযায়ী শহরটির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর এখন ২৮০। পাকিস্তানের লাহোরের স্কোর ২৩৪, ভারতের দিল্লির স্কোর ২২৪ ও কলকাতার স্কোর ১৯০। অর্থাৎ বায়ুদূষণের দ্বিতীয় শীর্ষে লাহোর, তৃতীয় শীর্ষে দিল্লি এবং চতুর্থ শীর্ষে ছিল কলকাতা। উল্লেখ্য, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের ১০১ থেকে ১৫০ স্কোরকে সংবেদনশীলদের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ স্কোরকে অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ স্কোরকে খুব অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৪০০ স্কোরকে গুরুতর অস্বাস্থ্যকর ধরা হয়। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সের ২০২৩ সালের তথ্যমতে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা ৭৪ মাইক্রোগ্রাম। একই সময়ে ভারতে ৫৮.৭ মাইক্রোগ্রাম ও চীনে ৩০.২ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের ২০২১ সালের তথ্যমতে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর কমপক্ষে ৬.৮ বছর করে আয়ু কমে যাচ্ছে।

সরকার বায়ুদূষণ রোধে বিশেষ পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছে। কোনো এলাকায় বায়ুদূষণ বেড়ে গেলে সরকার এটাকে ডি গ্রেডের এয়ার শেড ঘোষণা করে। তখন ওই এলাকায় কোনো ইটভাটা বা অন্য কোনো দূষণকারী বিষয় থাকলে তা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শিল্পকারখানা দূষণের উৎস হলে তা বন্ধ করে দেওয়া বা অন্য কোনো পরিকল্পনায় শিল্পকারখানা চালানো যায় কি না তার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ইটের বিকল্প হিসেবে অপোড়ানো ব্লক ব্যবহারের ব্যাপারে সরকার এগিয়ে আসছে। ইটের বিকল্প হিসেবে অপোড়ানো ব্লক ব্যবহার একটি ভালো পরিকল্পনা। এর শতভাগ ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সাল ধরা হলেও বাস্তবতা বিবেচনায় ২০২৯ সাল ধরা হয়েছে। বাংলাদেশে বায়ুদূষণে প্রতি বছরে ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়। বাড়ছে বিষণ্নতা। এ ছাড়া বায়ুদূষণের কারণে জিডিপির ৪ ভাগের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় ৭৮ থেকে ৮৮ হাজার মানুষ মারা গেছে। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার বায়ুদূষণ রোধে সাড়ে ৬ কোটি মার্কিন ডলারের দুটি প্রকল্প হাতে নেয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২৫ কোটি ডলারের আরও একটি প্রকল্প রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি কারণ হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের ধোঁয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে প্রতি বছর বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে আনুমানিক ৩০ লাখ মানুষ মারা যায়। বায়ুদূষণের কারণে মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যানসার ও অন্যান্য রোগ, শ্বাসযন্ত্রের নানাবিধ সংক্রমণ হতে পারে। ঢাকার নিকটবর্তী গাজীপুর দেশের সবচেয়ে দূষিত জেলা। এখানকার মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে ৮.৩ বছর। বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান উপাদান বাতাসে পিএম বা অতিক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি। ২০২৩ সালে বাতাসে পিএম বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ পাওয়া গেছে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি। বাংলাদেশে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দূষণের মাত্রা এত থাকে যে এটি সারা বছরের প্রায় ৬৫ শতাংশ।

বাংলাদেশের বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান তিনটি কারণের একটি পুরোনো যানবাহনের চলাচল। পুরোনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও ঢাকা শহরে অনায়াসে চলাচল করতে দেখা যায় এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি। পুরোনো যানবাহনে ব্যবহার করা হয় অসম্পূর্ণ জ্বালানি। এখান থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। কারণ এখান থেকে নির্গত হয় নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড এবং যানবাহন যত বেশি পুরোনো হবে তত বেশি এ বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড নির্গত হবে। ঢাকার বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পাশাপাশি নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব এখন বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার : সাউথ এশিয়া শিরোনামে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণার তথ্যমতে ঢাকার বাতাসে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব এখন গুরুতর উদ্বেগের কারণ। কেননা নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে মানুষের শরীরে নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন এটি শ্বাসনালিতে জ্বালাতন সৃষ্টি করে, শিশু ও বয়স্কদের হাঁপানি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া এটি বড় যে দূষণটি করে তা হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে যে স্তরগুলো রয়েছে, তার মধ্যে ওজোনস্তরটি পৃথিবীকে রক্ষা করছে। এ ওজোনস্তরের ক্ষতি করবে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড।

ঢাকা শহরে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা এখন অত্যধিক। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত ৫ লাখ ৬৮ হাজার নিবন্ধিত গাড়ির ফিটনেস সনদ নেই। ২০২২ সালে এর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৮ হাজার। অর্থাৎ ৬০ হাজার বেশি। এ থেকে প্রতীয়মান বাংলাদেশে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঢাকা শহরে এখন ১৫ লাখের মতো যানবাহন চলাচল করে। বিশেষজ্ঞদের মতে এর এক তৃতীয়াংশেরই ফিটনেস নেই। ব্যক্তিগত গাড়ির তুলনায় গণপরিবহনের গাড়িগুলোর ফিটনেস বেশি নেই। এমনিতেই শহরে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বেশি। ব্যবসায়ীদের চাপে লরি, বাণিজ্যিক বাসের কর্মজীবন ২৫ এবং ২০ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করার আদেশ বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্তে ফিটনেসবিহীন লরি ও বাসের চলাচল আরও নির্বিঘ্নে হচ্ছে। এসব বাসের ইঞ্জিনের দক্ষতা কম। দূরে চলাচলে ধোঁয়া নির্গত হয়। উঁচুতে উঠতেও ধোঁয়া নির্গত হয় বেশি। বিশেষ করে ঢাকা শহরে ফ্লাইওভারে এসব যানবাহনের ওপরে উঠতে হলে অনেক ধোঁয়া নির্গত করতে হয়। সরকারের এসব ব্যাপারে নজর দেওয়া জরুরি। তা না হলে তিলোত্তমা ঢাকা ধীরে ধীরে পরিণত হবে কালো ভুতুড়ে, রুগ্ন ঢাকায়।


  • শিক্ষক ও গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা