× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সড়কে শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা ফিরছে না—এই দায় কার

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৭ পিএম

সড়কে শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা ফিরছে না—এই দায় কার

প্রায় সব দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশের মতো কোথাও এর হার এত ঊর্ধ্বমুখী কি না, এ এক অন্তহীন জিজ্ঞাসা বটে। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই ইতঃপূর্বে আমরা প্রশ্ন রেখেছিলাম, সড়ক কি মৃত্যুফাঁদ হয়েই থাকবে? আমরা দেখছি, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ক্রমবর্ধমান হারের প্রেক্ষাপটের পেছনে যানবাহনের চালক ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল অনেকের দায়িত্বহীনতা-স্বেচ্ছাচারিতা-শৃঙ্খলাভঙ্গের অপপ্রবণতা বহুলাংশে দায়ী। এরই ফের মর্মন্তুদ চিত্র উঠে এসেছে গত দুই দিনের প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদনে। ১৬ এপ্রিল ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১৪ জনের প্রাণহানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঝালকাঠিতে বেপরোয়া গতির ট্রাকচাপায় প্রাণ ঝরেছে তিনটি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও একটি প্রাইভেটকারের ১৪ জন আরোহীর। একেকটি দুর্ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে এগুলোর কোনোটিই নিছক দুর্ঘটনা নয়, বরং বলা যায় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড।

১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে ঈদের ছুটিতে সড়কে ঝরেছে ৩৬ প্রাণ। সংবাদমাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই সড়কে বিশৃঙ্খলার যে চিত্র উঠে আসছে, তা এক কথায় বলা যায় চরম নৈরাজ্য। সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে এ-যাবৎ কথা কম হয়নি। আলাপ-আলোচনায় সড়ক নিরাপদ করার বহুমাত্রিক সমাধানসূত্রও উঠে এসেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দিনকে দিন সড়কের মৃত্যুফাঁদ হয়ে ওঠা ঠেকানো যাচ্ছে না। সড়কে যানবাহন চলাচল আইন আছে, পথচারীদের জন্যও আছে আইন। তারপরও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দৌরাত্ম্য, ট্রাফিক আইন না মানার অপপ্রবণতার পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে জনসচেতনতারও ঘাটতি। অধিকাংশ চালকের যেমন নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স, এর সমান্তরালে অদক্ষ চালকের সংখ্যাও কম নয়। কিছুদিন আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদনে জানা যায়, দেশে গড়ে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে ৫৫ জন মানুষ। প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় গড়ে ১২ হাজার মানুষ। আর ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) তথ্যে প্রকাশ, গত এক বছরে দেশের সড়ক, নৌ ও রেলপথে ৭ হাজারেরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে এবং তাতে হতাহতের সংখ্যাও ক্রমেই স্ফীত হয়ে উঠেছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, যাতায়াতের কোনো পথই নির্বিঘ্ন করা যাচ্ছে না, তবে এর মধ্যে সড়কপথের অবস্থা ভয়াবহ।

সড়ক-মহাসড়কে ক্রমাগত বেদনাকাতর দৃশ্য কেন আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে এর কারণগুলো সচেতন মানুষমাত্ররই অজানা নয়। সড়ক দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণিত হলে চূড়ান্ত দণ্ডের বিধান রয়েছে এবং এর দায় শুধু চালকেরই নয়, গাড়ির মালিক এবং কোম্পানিসংশ্লিষ্ট অন্যদেরও। অথচ এক্ষেত্রে আইনটি যেন কাজির গুরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। আমরা দেখছি, সড়ক দুর্ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া একদিকে প্রলম্বিত অন্যদিকে কখনও বিচার সম্পন্ন হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাজা পান চালক ও হেলপার। দায়ী পরিবহন মালিক ও কোম্পানি অন্তরালেই থেকে যায়। সড়ক দুর্ঘটনা কেন ঘটে? কী কী কারণে এত বেশি দুর্ঘটনা, কী কী পদক্ষেপ নিলে দুর্ঘটনার হার কমানো সম্ভবÑ এর সবই বহুল আলোচিত। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন তো বটেই এর সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে গাড়িচালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অনৈতিক ব্যবসাপ্রবণতা এবং আইন কিংবা নিয়মনীতি ভঙ্গের অপপ্রবণতা পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যেন মজ্জাগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা সুরক্ষিত রাখতে আইন আছে তা জেনেও যারা তা মানছেন না, তাদের কারণে শুধু যে মর্মস্পর্শী ঘটনাই ঘটছে তা-ই নয়, একেকটি পরিবারে নেমে আসছে দুর্বিষহ স্থায়ী যন্ত্রণা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতিও। আইন মানানোর দায়িত্ব যাদের ওপর অর্পিত তাদেরও অনেকেই যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠ নন, এ অভিযোগও নতুন নয়। ট্রাফিক এবং হাইওয়ে পুলিশের অসাধু ব্যক্তিদের অনৈতিকতার কারণে সৃষ্ট মর্মস্পর্শী ঘটনার নজিরও কম নয়। সব মিলিয়ে বলা যায় সড়ক-মহাসড়কে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের ছায়া ক্রমেই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আইন মানা এবং আইন মানানোর প্রবণতা এই দুই ক্ষেত্রেই ব্যাপক ঘাটতি স্পষ্টত দৃশ্যমান। আমাদের ট্রাফিক বিভাগে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম, এ কথা অসত্য নয় বটে, কিন্তু যে সংখ্যক আছেন তাদেরই বা জবাবদিহি কোথায়? ট্রাফিক আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও আইন রক্ষকদের অনেকেরই ঢিলেঢালা ভাব ও দুর্নীতির কারণে গাড়িচালকদের মধ্যে আইন ভাঙার প্রবণতা বাড়ছে। আমরা মনে করি সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়দায়িত্ব যাদের, কোনোভাবেই তাদের দায়হীন থাকার অবকাশ নেই। আমরা এ-ও মনে করি, ট্রাফিক আইন মানার ক্ষেত্রে মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। যদি এর অন্যথা হয়, তাহলে তাদের নিয়ম মানতে বাধ্য করানোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর। আমরা এ-ও স্পষ্টতই মনে করি, শুধু নীতিবাক্য-সচেতনতাই নয়; সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনপ্রয়োগকারী ব্যক্তিদের নির্মোহ ও কঠোর অবস্থান জরুরি।

অবকাঠামোগত ত্রুটি-বিচ্যুতি সারাতে সময় লাগতে পারে কিন্তু নীতি-নৈতিকতার প্রতিফলন একই সঙ্গে আইনের বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ কেন হবে আমরা এ প্রশ্নও রাখি। ক্রমাগত এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যেহেতু ঘটনার কারণগুলো অচিহ্নিত নয়, সেহেতু এর সুরাহাও নিশ্চিয়ই দুরূহ হওয়ার কথা নয়। ভারী হোক, হালকা হোক কিংবা ছোট সড়ক আর বড় সড়ক যা-ই হোক না কেন, যানবাহন চলাচলের জন্য যে আইন ও বিধিবিধান রয়েছে কোনো ক্ষেত্রেই এর ব্যত্যয় ঘটতে পারবে না। সড়ক-মহাসড়কের যে মর্মস্পর্শী চিত্র প্রায় প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একেকটি ঘটনা ঘটছে তারপর সংবাদমাধ্যমে ও বিভিন্ন মহলে আলোচনা-পর্যালোচনার ঝড় ওঠে, দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নড়েচড়ে বসেন কিন্তু সময় যেতে না যেতেই আবার পরিস্থিতি একই। এর দায় কার? নিশ্চয়ই সরকার এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলো এর কোনো কিছুরই দায় এড়াতে পারে না। কারণ জানা, অথচ দৃষ্টান্তযোগ্য কোনো প্রতিবিধান নিশ্চিত হয় না, এর চেয়ে বিস্ময়কর আর কী হতে পারে। মানুষের জীবনরক্ষায় সড়কে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। আমরা সড়ক পরিবহন আইনের কার্যকারিতা এবং সুফল দেখতে চাই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা