× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইরান-ইসরাইল সংঘাত

মধ্যপ্রাচ্যে কি শান্তির আলো প্রস্ফুটিত হবে

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৫ পিএম

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, গত কয়েকিদন ধরে দেশের সংবাদমাধ্যমে এ খবরটি প্রাধান্য পাচ্ছে। ১৩ এপ্রিল রাতভর ইসরায়েলের ওপর ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের অনেক আগেই ইরান সতর্কবার্তা পৌঁছে দিয়েছে, এমন খবর দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের। ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করেছে। তবে এ হামলার পর ইসরায়েল যেন নতুন করে সংঘাতে না জড়ায় এজন্য সতর্ক করে হোয়াইট হাউস বলেছে, ইরানে কোনো পাল্টা হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না। অন্যদিকে জাতিসংঘে ইরানের দূত জানিয়েছেন, তারা নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আত্মরক্ষার তাগিদে এ হামলা করেছে। এ হামলার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। গাজা উপত্যকায় গণহত্যা পরিচালনার জন্য ইসরায়েল রাষ্ট্র ব্যাপক সমালোচিত। এমনকি আইসিজেও স্বীকার করেছে ইসরায়েলের কার্যক্রমে গণহত্যার আলামত রয়েছে।


দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে এবং আইসিজে তা পর্যালোচনা করছে। এ ক্ষেত্রে আইসিজে হুঁশিয়ারি দিলেও ইসরায়েল শুনছে না। শুধু আইসিজেই নয়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হওয়ার পরও ইসরায়েল তোয়াক্কা করেনি। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন পেয়েই তারা এমন গণহত্যা পরিচালনা করছে। এ মুহূর্তে গাজা উপত্যকায় গণহত্যা পরিচালনা ছাড়া ইসরায়েল রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে; অন্তত ইসরায়েলের ক্ষমতাসীনদের দেখলে তা-ই প্রতীয়মান হয়। তারা মনে করছেন, হামাসের সঙ্গে এ যুদ্ধে হেরে গেলে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ইসরায়েল সেটলার কলোনিয়ালিজমের পথে হাঁটছে। এমনটি আমরা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং বহু আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও দেখেছি। কিন্তু বেশিদিন এ ধরনের পন্থায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। কারণ অতীতে সেটলার কলোনিয়ালিজমের উদাহরণ থাকলেও একুশ শতাব্দীতে গোটা বিশ্বব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসায় তা এখন আর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য সঠিক নয়। পূর্ববর্তী শতকের একটি পন্থা বর্তমান শতকে কার্যকর থাকতে পারে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিগত সংঘাত-সহিংসতা রোধের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করে। মানবাধিকার, জেনেভা কনভেনশনসহ আরও কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের এ নীতিমালার ভিত্তিতে তারা এক ধরনের নিয়মতান্ত্রিক কাঠামোও প্রতিষ্ঠা করে তোলে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠিত এ নীতিমালা এখন যেন সামান্য আনুষ্ঠানিকতা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। অনেক বড় বড় পশ্চিমা রাষ্ট্র এখন এসব নীতিমালা মেনে চলছে না। আমরা জানি, ১ এপ্রিল ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েল হামলা করে। এর মাধ্যমে তারা ইরানের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলে দেয়। হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সাত সদস্যও মারা যান। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এমন আক্রমণ পুরোপুরি বেআইনি। এমনকি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অংশ হিসেবে কোনো অভিযানে গেলেও বিদেশি কোনো মিশনের ওপর হামলার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিদেশি মিশন একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অংশ এবং ভিয়েনা কনভেনশনের মাধ্যমে এসব বিষয়ে নির্দেশনা স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে। কিন্তু ইসরায়েল এ যুদ্ধকে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় করতে চাচ্ছে। যুদ্ধের পরিসর বিস্তৃত করার ক্ষেত্রে তারা কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না। কারণ ইসরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থনের ওপর প্রগাঢ় আস্থা রাখে। দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল ইরানকে নানা কারণে উস্কানি দিয়ে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইরানের সামরিক কর্মকর্তা কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করে। তবে এত দিন ইরান এ বিষয়ে শান্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের এ আগ্রাসন তাদের পক্ষে পুরোপুরি মেনে নেওয়া আর সম্ভব ছিল না।

বিশেষত ইরানের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাতের পর তাদের পক্ষে হাত গুটিয়ে বসে থাকাও সম্ভব ছিল না। মূলত এ হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান এক ধরনের সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে। ইরান বলতে চেয়েছে, আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আমরাও ক্ষমতা ধারণ করি। ইরানকে অতীতের শক্তিমত্তা দিয়ে বিচার করলে চলবে না। ইরানের এ সতর্কবার্তা পশ্চিমা সম্প্রদায়ও বুঝতে পেরেছে এবং এজন্যই তারা ইসরায়েলকে পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে। ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে ইরানের হামলার তিনটি দিক বিবেচনা করা জরুরি। প্রথমত, ইরানের হামলা করার প্রক্রিয়াটি। আমরা জানি, ইরান প্রথমে ড্রোন পাঠিয়েছে। ড্রোন দ্রুতগামী নয় এবং নিশানার লক্ষ্যে পৌঁছাতেও সময় বেশি লাগে। ফলে ইরান অতর্কিত হামলা পরিচালনা করেনি বিধায় ইসরায়েল ও তার সহযোগী রাষ্ট্রগুলো হামলা প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিতে পেরেছে। সৌদি আরব কিংবা তুরস্কের মতো রাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইরান আগে থেকেই হামলার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। আর আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এত বড় পরিসরের একটি হামলায় একজন মানুষও মারা যায়নি কিংবা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, এমনটি নিঃসন্দেহে বিরল। শুধু সামরিক নিশানার কিছু অংশ সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরানের এ হামলার দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য দিকটি হলো, সিভিলিয়ান বা সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ইসরায়েলের দাবি, তারা এ হামলা প্রতিরোধ করতে পেরেছে বলেই হয়তো বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইরান এমনভাবে হামলা করেছে যে তারা যে লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল সে লক্ষ্যেই যেন তা পৌঁছায়। মূলত প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রদর্শনে তারা বড় পারদর্শিতা দেখিয়েছে। হামলা পরিচালনায় তাদের পরিকল্পনাগত দক্ষতার দিকটি উল্লেখ করতে হয়। আমরা দেখছি, গাজায় ইসরায়েল প্রায়ই অতর্কিত হামলা পরিচালনা করছে এবং এসব হামলায় অনেক সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে। তাদের হামলার মধ্যে কোনো পরিকল্পনা নেই এবং যদিও তাদের দাবি এসব ঘটনা ভুলবশত কিন্তু বাস্তবে তা নয়। ইসরায়েলের এ দিকটিও তাদের গণহত্যামূলক কার্যক্রমের প্রমাণ। প্রযুক্তি ব্যবহারে ইরানের এ পারদর্শিতার দিকটিও পশ্চিমা দেশগুলো বুঝেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

প্রশ্ন হচ্ছে- ইসরায়েল কি পাল্টা জবাব দেবে? ইসরায়েলের কট্টরপন্থি রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যমগুলো ক্ষমতাসীনদের ওপর নানা ধরনের চাপ তৈরি করছে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য। ইসরায়েলের রাইট উইং মিডিয়াগুলোর দাবি, এ হামলার পাল্টা জবাব না দেওয়া হলে ইরানের বিজয়ই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে যা ভবিষ্যৎ ইসরায়েলের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কোনো পাল্টা জবাব না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে ইসরায়েলের ক্ষমতায় টিকে থাকা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও পর্যবেক্ষণ করা দরকার। ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা জানি, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তোড়জোড় চলছে। যদি এ নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হন তাহলে এক ধরনের সমীকরণ তৈরি হবে আবার জো বাইডেন ক্ষমতায় এলে অন্য ধরনের সমীকরণ কাজ করবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ডেমোক্র্যাটদের আবার জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিবে। নির্বাচনে জয়ী হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প কী করবেন তা যেমন আমাদের ভাবতে হবে তেমন ভাবতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ কেমন অবস্থান নেয়। তারা যদি যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে তখন ইসরায়েলের জন্যও তা সংকট হয়ে দাঁড়াবে। মধ্যপ্রাচ্যে যদি সংকট কোনো কারণে প্রকট হয়ে হয়েই ওঠে তাহলে এর বহুমাত্রিক বিরূপ প্রভাব বিশ্বে দৃশ্যমান হবে, এ আশঙ্কা অমূলক নয়। আমরা চাই, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আলো প্রস্ফুটিত হোক।

আপাতত পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করেছে। আমরা জানি, ইরান ও ইসরায়েল- এ দুই দেশই তাদের এয়ারপোর্ট খুলে দিয়েছে। অর্থাৎ কোনো ধরনের পাল্টা আক্রমণের শঙ্কা এখনও দেখা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল তা অনেকটাই যেন কেটে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আপাতত আমাদের নজরে রাখা জরুরি। ১৮ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নজরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের বড় আকারের শ্রমবাজার রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সংকট দেখা দিলে এ খাতে বড় প্রভাব পড়বে। তবে এখনও এ নিয়ে দুশ্চিন্তার তেমন কারণ দেখছি না। দেখার বিষয় ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়

  • কূটনীতি-বিশ্লেষক ও অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা