× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিকল্পিত নগরায়ণ

তিলোত্তমার বহুবিধ উপসর্গ

ড. হারুন রশীদ

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪২ পিএম

ড. হারুন রশীদ

ড. হারুন রশীদ

একবিংশ শতাব্দীতে উন্নত নগরায়ণ মানুষের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে। জীবনযাত্রার অনিবার্য প্রয়োজনে মানুষ এখন নগরমুখী। সে কারণেই নগরায়ণকে পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর ও সুষম হওয়ার কথা বলা হচ্ছে। বলা যায়, নগরজীবন স্বচ্ছন্দ, পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও উন্নয়নমুখী করা এখন সময়ের দাবি। আসলে পরিকল্পিত নগর বলতে বোঝায় একটি পরিকল্পিত জনবসতি। যার সবকিছু হবে পরিকল্পনা অনুযায়ী। কোথায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, কোথায় অফিস-আদালত, কোথায় বসবাসের জায়গা সবই হবে পরিকল্পনামাফিক। পরিকল্পনামাফিক প্রতিটি নগরেই মানুষ শৃঙ্খলাপূর্ণ নাগরিক সুযোগসুবিধা ভোগ করে। এতে তার নাগরিক জীবন হয় মর্যাদাপূর্ণ, গ্রাম কিংবা মফস্বলের তুলনায় উন্নততর, স্বস্তিদায়ক। কিন্তু এ নগরই আবার পরিকল্পনাহীনভাবে বেড়ে উঠলে তাতে নাগরিকের জীবন অস্বস্তিকর হয়ে হঠে। জনজীবন বিপর্যস্ত করে ফেলে। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপে ইতোমধ্যে বাস-অনুপযোগী শহর হিসেবে ঢাকা সুখ্যাতি হারিয়েছে। এ অবস্থা যে আমাদের জন্য গৌরবজনক নয় তা কি বলার অপেক্ষা রাখে? জরিপকারী প্রতিষ্ঠান একটি শহরের বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এর মান নির্ণয় করে। এর মধ্যে রয়েছে নগরীতে বসবাসের সুযোগসুবিধা, জনসংখ্যার ঘনত্ব, সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগসুবিধা, অপরাধের হার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, পরিবেশ, যোগাযোগব্যবস্থা, অবকাঠামোর গুণগতমান, পানি সরবরাহের মান, খাদ্য, পানীয়, ভোগ্যপণ্য এবং সেবা, সরকারি বাসগৃহের প্রাপ্যতা ইত্যাদি। এসব দিক থেকে আমাদের নগরগুলোর কী অবস্থা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


ঢাকা ভূমিকম্পঝুঁকিতে রয়েছে। ইতঃপূর্বে অন্য জরিপে প্রকাশ পেয়েছে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরগুলোর অন্যতম। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোর করুণ অবস্থায়ই এ জরিপের সত্যতা প্রমাণে যথেষ্ট। এ ছাড়া যানজট, যানবাহন এবং কলকারখানার কালো ধোঁয়া, ট্যানারি বর্জ্য, খাদ্যে ভেজাল, সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিম্নমানও ঢাকার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অধিক জনসংখ্যার চাপে ন্যুব্জ এ শহরে নেই পয়ঃনিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা। জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবহন। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি নাগরিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুতেই পরিকল্পনাহীনতার ছাপ। অথচ রাজধানী ঢাকাই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। দেশের এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি মানুষ এখন শহরে বাস করছে। এজন্য পরিকল্পিত নগরায়ণের কোনো বিকল্প নেই। ঢাকা আবাসস্থল থেকে পরিণত হয়েছে বিরাট বাজারে। বস্তুত এ শহরের সুনির্দিষ্ট কোনো চরিত্র নেই। যত্রতত্র যে যেখানে পারছে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এতে নগরী তার বিশিষ্টতা হারাচ্ছে। এক জগাখিচুরি অবস্থায় রাজধানীবাসী এখানে বাস করছে। ফলে অনেক নাগরিক সুবিধা থেকেই তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

যানজট ঢাকাকে কার্যত অচল ও স্থবির নগরীতে পরিণত করেছে। এটি একটি স্থায়ী সমস্যা হিসেবে দেখা দেওয়ায় পরিবহন খাতে বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো ছাড়া কোনো উপায় নেই। যানজট সমস্যার সমাধান না হওয়ায় প্রতিদিনই অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। পিছিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অগ্রগতি। শুধু তাই নয়, শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণে নানা সংক্রামক ব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছে রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ। যানজটে নগরবাসীর প্রতিদিনকার জীবনযাত্রাও মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে দিন দিন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। সব রুটে যাত্রীদের চলাচলে কমপক্ষে তিন কর্মঘণ্টা অপচয় হয় প্রতিদিন। যানজটের কারণে বিপুল পরিমাণ জ্বালানিরও অপচয় হয়। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন সময় নানামুখী কর্মসূচি-পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম। ফলে সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। অথচ দুর্বিষহ যানজটের জন্য পরিকল্পনা ও সমন্বয়হীনতার অভাবকেই দায়ী করা হয়।

রাজধানীতে যানজট অনিবার্য বাস্তবতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ায় যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। যার সর্বশেষ নজির দেখা গেল এবারের রমজানে। যানজট নিয়ন্ত্রণে কঠোর ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ, ব্যক্তিগত গাড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ, যত্রতত্র প্রাইভেট কার পার্কিং নিষিদ্ধ করা, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নদীপথ এবং ঢাকার ভেতরের খাল দখলমুক্ত করে নৌপথের উন্নয়ন করা, রিকশামুক্ত সড়কসহ নানা পরিকল্পনার কথা বলা হয়। কিন্তু এগুলো নিয়ে কথাবার্তা যতটা হয় কাজ ততটা হয় না যে তা যানজটের বর্তমান হালই বলে দিচ্ছে। কিন্তু যানজট এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতেই হবে। যানজট বর্তমান নগরবাসীকে স্থবির ও অচল করে রেখেছে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফল যে অত্যন্ত ভয়াবহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্য পানিতে মিশেও ঢাকার পরিবেশ করে তুলছে বিষাক্ত। বিশেষ করে ট্যানারি বর্জ্যের দূষণ নগরবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ট্যানারির বর্জ্য অত্যন্ত বিষাক্ত। এ বর্জ্য পানিতে মিশলে তা দেখে মনে হবে রঙ মেশানো পানির মতো। আর এ রঙিন পানিই দিনের পর দিন নদীতে গিয়ে পড়ে পানি কী পরিমাণ দূষিত করছে তা সহজেই অনুমেয়। বুড়িগঙ্গাকে বলা হয় ঢাকার প্রাণ। কিন্তু দখল-দূষণে এ নদীর অবস্থা এখন বড়ই করুণ। বিশেষ করে ট্যানারির বর্জ্য মিশে নদীর পানি মারাত্মক দূষিত করেছে। পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে। যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে তাতে জলজ প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হলে ট্যানারি শিল্পের বর্জ্য যাতে নদীতে আর না পড়তে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকাকে তিলোত্তমা হিসেবে গড়ে তোলার কত রকম প্রয়াসের কথাই শোনা যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে, কিন্তু তিলোত্তমা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বহুবিধ উপসর্গ জিইয়ে আছে এখনও। এর নিরসন না করে ফল্য আশা করা কি বাঞ্ছনীয়? নগরজীবন স্বচ্ছন্দময় ও গতিশীল করতে হলে নাগরিক সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিত নগরায়ণই হবে মুক্তির পথ। যেখানে থাকবে না যানজট, দখল-দূষণসহ নেতিবাচক যেকোনো কর্মকাণ্ড। মনে রাখতে হবে, নগরজীবনের সব সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অসম্ভব। এ লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণই এখন সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সক্রিয় হবেন- এমনটিই প্রত্যাশা করি।

  • সাংবাদিক, গবেষক ও কলাম লেখক

[email protected]

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা