× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিপ্রেক্ষিত

বিপন্ন আত্রাই

মো. হাসান-উল-বারী

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৭ পিএম

আত্রাই নদী। প্রবা ফটো

আত্রাই নদী। প্রবা ফটো

দেশের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোর মধ্যে আত্রাই অন্যতম। মহাভারত ও দেবীপুরাণে বর্ণিত নদীগুলোর একটি আত্রাই। ভারত-বাংলাদেশের আন্তঃসীমান্ত নদীটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪০ মাইল। ভারতের হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে নদীটি পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদীটি বাংলাদেশ অংশে নওগাঁর ধামইরহাট, পত্নীতলা, মহাদেবপুর, মান্দা ও আত্রাই উপজেলা হয়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলা দিয়ে চলনবিলে পতিত হয়েছে। আত্রাইয়ের কয়েকটি উপনদীর মধ্যে পুনর্ভবা উল্লেখযোগ্য। অন্যগুলোর মধ্যে ডান তীরে ফকিরনি (বর্তমান নাম রানী নদী) ও বড়াল নদ এবং বাঁ তীরে করতোয়া অন্যতম।

আত্রাই নদীতে একসময় ঢেউয়ের তালে তালে চলত পালতোলা নৌকা। ভাটিয়ালি আর পল্লীগীতির সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে যেতেন বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ব্যবসা কেন্দ্রে। নৌকায় নানা কৃষিপণ্য নিয়ে সওদাগররা ছুটে যেতেন বিভিন্ন প্রান্তে। নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল অনেক হাটবাজার। শুধু হাটবাজার নয়, গড়ে উঠেছিল নদীকেন্দ্রিক অসংখ্য নগর-বন্দর। মাইলের পর মাইল জুড়ে সে কি নয়নাভিরাম দৃশ্য! বর্তমানে কৃষিজমিগুলো পরিণত হয়েছে ধু-ধু প্রান্তরে। অফুরন্ত মাছের উৎস ছিল এ নদী। জীবিকার জন্য জেলেরা রাতদিন সমানে ডিঙি দিয়ে মাছ ধরত। জেলেপাড়াগুলোও এখন প্রায় বিলীন। নদী গবেষকদের মতে, নদী কখনও একা মরে না। নদীর মৃত্যু হলে পারের জনপদও একটু একটু করে মরতে শুরু করে। বাস্তবে আত্রাই নদী ও এর অববাহিকায় গড়ে ওঠা জনপদ দেখলে বোঝা যায় কথাটি কত সত্য।

কালের বিবর্তনে আত্রাই নদীতে পলি পড়ে নাব্য হ্রাস পেয়েছে। এ হাইড্রো-মরফোলজিক্যাল পরিবর্তনের কারণে নদীটি ক্রমাগত তার গতিপথ পরিবর্তন করছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য খনন জরুরি। খননের ফলে নদীর পানিধারণ ক্ষমতাও বাড়বে, কৃষক পানি ব্যবহার করে সেচকাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারবে। এ ছাড়া নৌপথ পুনরায় চালু হবে। একটি দেশের উন্নয়নের প্রধান শর্ত যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি। আর এ যোগাযোগ শুধু সড়কপথ বা রেলপথের উন্নতি করা নয়। জোরালোভাবে প্রয়োজন নদীপথের সংস্কার তথা নাব্য ফিরিয়ে আনা। নদীপথের অনেক সুবিধা; যেমন নদীপথে পরিবহন খরচ কম, নদী সংস্কার খরচ সড়ক বা রেল পথের তুলনায় কম। এ ছাড়া পরিবহনকালীন মালের ক্ষতির সুযোগ কম থাকে। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্রাইয়ের উৎসের অববাহিকায় বৃষ্টিপাত কম হওয়া, ভারতের অভ্যন্তরে সাময়িক বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার, পলি জমে তলদেশ ভরাট, ইরিগেশনের সময় ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারসহ জলবায়ুর পরিবর্তন নদীটির অস্তিত্ব সংকটের প্রধান কারণ। তারা আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে তলদেশ ড্রেজিং, রাবার ড্রাম তৈরি করে পানি সংরক্ষণ ও ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে দিলে অন্যান্য নদ-নদীর মতো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে না নদীটি।

নদীরক্ষার জন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬৪ জেলার ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সব নদ-নদী পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহায়তায় আত্রাই নদীর মান্দা অংশ ছাড়া অন্যান্য অংশে খনন ও সংস্কার কিছুটা হলেও সম্পন্ন হয়েছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আত্রাইয়ের মান্দা অংশে সংস্কারসহ খননের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হোক বৃহৎ স্বার্থে।

  • শিক্ষক, মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বগুড়া
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা