× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

ব্যাংকের ক্ষত উপশমে রাজনৈতিক বিবেচনার অবকাশ নেই

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩১ পিএম

ব্যাংকের ক্ষত উপশমে রাজনৈতিক বিবেচনার অবকাশ নেই

ব্যাংক নিয়ে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস ড্যানফোর্স কোয়েলের বক্তব্যটি আমাদের বিদ্যমান বাস্তবতায় অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘ব্যাংকের ব্যর্থতাগুলো কতিপয় হীনস্বার্থবাদীদের দ্বারা সৃষ্ট হয়, যারা ক্ষতি করতে তৎপর কিন্তু ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো ব্যথা অনুভব করে না।’ আর্থিক খাতগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো ব্যাংক। ‘দুর্বল ব্যাংক’ শব্দযুগল বহুল প্রচলনের মধ্য দিয়ে সম্প্রতি এর বিবর্ণ চিত্রের আরও বেশি ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এই দুর্বল ব্যাংক এক দিনে সৃষ্ট  নয় এবং এ প্রেক্ষাপটে আমাদের স্মরণে আসে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম আবুল মাল আবদুল মুহিতের মন্তব্যও। তিনি তার মন্ত্রিত্বকালে  বলেছিলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনেক ক্ষেত্রে যে লুটপাট হয়েছে, সেটা শুধু পুকুরচুরি নয়, সাগরচুরি’। অনস্বীকার্য এর বহু নজির আমাদের সামনে রয়েছে। ব্যাংক খাতের দুরবস্থা ঘোচাতে সরকারের গৃহীত উদ্যোগে ফের ভুলের তথ্য উঠে এসেছে ১৭ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে। ‘ব্যাংকে ভুল শোধরাতে গিয়ে আবার ভুল’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে একীভূতকরণ নীতিমালায় যে ত্রুটিগুলো উঠে এসেছে তা যেন ক্ষতের ওপরে সৃষ্ট আরেক ক্ষত।  

দেশের অর্থনীতির আকারের তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি, অর্থনীতিবিদরা এ কথা বারবারই বলে আসছেন। তারা এ-ও বলেছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া আরও বড় ভুল হয়েছে। আমরা জানি, দেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা ষাটেরও ঊর্ধ্বে। কিছু ব্যাংকের অবস্থা একেবারেই নাজুক এবং এই প্রেক্ষাপটে সরকার দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের মধ্য দিয়ে আগের ভুল শোধরাতে চাইছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকের সংখ্যা কমাতে গত ৪ এপ্রিল একটি নীতিমালাও জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য, ঘোষিত নীতিমালায় বেশ কিছু গলদ রয়েছে। অনিয়ম ও যেসব অসাধু ব্যাংক পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়েছে তাদের জবাবদিহি ও শাস্তির ব্যবস্থা নেই ঘোষিত নীতিমালায়! উল্টো বিশেষ ছাড় দিয়ে ফের পরিচালক হওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাদেরই! একই সঙ্গে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে দায়িত্বপালনে ব্যর্থ কর্মকর্তাদেরও।

যে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং যেগুলোর মূলধন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেসব বিষয়ে কোনো সুরাহা না করেই ব্যাংকগুলো একীভূত করার সিদ্ধান্ত আমাদের বিস্মিত না করে পারে না।  গুরুতর ব্যাধি উপশমে যথাযথ ‘দাওয়াই’-এর ব্যবস্থা না করে প্রলেপ দিয়ে ‘দুর্বল’কে ‘সবল’ করার উদ্যোগ কতটা সফল হবে কিংবা হতে পারে এ নিয়ে সঙ্গতই প্রশ্ন উঠেছে। আমরা জানি, বেনামি ঋণ এবং খেলাপি ঋণের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির কারণেই বেশ কিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক কঠিন ব্যাধিতে ভুগছে। এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাংককে একীভূত করার  উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলো কোন নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালনা করা হবে, এ  নিয়েও প্রশ্ন আছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার’ বহুল প্রচলিত প্রবাদটিও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

ব্যাংক খাতের দুরবস্থা একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলে  দিয়েও যারা সুরক্ষার ছায়ায় রয়েছেন তাদের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের বিষয়টিও প্রশ্নবোধক। যেকোনো দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ব্যাংক। এমনও বলা হয়, ব্যাংক খাত অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ডের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে তেমনি ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা-স্বচ্ছতা-গতিশীলতা একই সঙ্গে পুষ্টতা অর্থনীতির রক্তসঞ্চালনও স্বাভাবিক রাখে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা কিংবা আমাদের কোনো কোনো উন্নয়ন সহযোগীর পরামর্শে বাস্তবতাবিবর্জিত ও প্রভাবিত সিদ্ধান্তের কারণে দেশের ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এ-ও পুরোনো অভিযোগ। আমরা দেখছি, প্রভাবশালীদের সুবিধার্থে অনেক নীতি প্রণয়নেও ছাড় দেওয়া হয়, যা পরবর্তী সময়ে আবার পরিবর্তনও হয়! এর ফলে এক ক্ষত শুকিয়ে ওঠার আগেই ফের নতুন ক্ষত সৃষ্টির বার্তা এসে হাজির হয়। লাগামহীন খেলাপি ঋণ, কোনো কোনো ব্যাংক পরিচালকের বেনামি ঋণ, সুশাসনের ঘাটতি ইত্যাদি কারণে আমানতকারীর আস্থা ব্যাংকের ওপর থেকে ক্রমেই কমে যাচ্ছে। আমাদের স্মরণে আছে, কিছুদিন আগে গোপালগঞ্জের রূপালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় কয়েকজন গ্রাহকের টাকা ওই ব্যাংকের অসাধু ব্যক্তিদের যোগসাজশে নয়ছয় হয়। এমন চরম উদ্বেগজনক ঘটনা এর আগেও ঘটেছে, কিন্তু প্রতিবিধান কতটা কী হয়েছে, আমাদের তা জানা নেই। অর্থ পাচার আমাদের অর্থনীতির তথা জাতীয় স্বার্থের জন্য বড় হুমকির কারণ হয়ে দাাঁড়িয়েছে। অর্থ পাচারের পাশাপাশি ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে লোপাট করা হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা, এমন নজিরও আছে অনেক। এর ফলে তারল্য সংকটের পাশাপাশি বহুমুখী জটিলতায় পড়েছে অনেক ব্যাংক।

ব্যাংকে যে টাকা জমা থাকে তা জনগণের টাকা। টাকা ব্যয়ের খাত অবশ্যই সুবিবেচনার বিষয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাংক খাতে নিয়মকানুনের বাস্তবায়ন ও সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহির কোনো বিকল্প নেই। এমন নজিরও কম নেই, খেলাপি ঋণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাই ঋণ পুনরায় তফসিলীকরণের নিয়ম করে দেন। এই প্রেক্ষাপটে ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি-ভুল-অব্যবস্থাপনা দূর করে খাতটির ব্যাধি উপশমে একীভূতকরণ নীতিমালায় যে ভুলের তথ্য উঠে এসেছে তা আরও কঠিন প্রশ্নবোধক। আমাদের আশঙ্কা, ক্ষত উপশমে যথাযথ ‘দাওয়াই’ না দিয়ে উপরন্তু পুরোনো বোতলেই নতুন করে পানি ভরার এই প্রক্রিয়া বড় আত্মঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই নিকট অতীতে আমরা বলেছি, ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি কমানো, বহিঃখাত-শ্রম খাতসহ অর্থনীতির অন্য সূচকগুলো যেহেতু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আশাব্যঞ্জক নয়, এমতাবস্থায় ভারসাম্যপূর্ণ সুব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। ইতঃপূর্বে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনেই জানা যায়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে আমাদের অর্থনীতিও অভূতপূর্ণ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে  যাচ্ছে এবং এর সুরাহা খুব দ্রুত হবে বিদ্যমান বাস্তবতায়র প্রেক্ষাপটে তেমনটিও আশা করা যায় না।

ব্যাংক খাত সংস্কারের প্রশ্নে সব ধরনের প্রভাববলয় কীভাবে মোকাবিলা করা হবে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সরকার কতটা দৃঢ় মনোভাব দেখাবে এমন প্রশ্ন যখন সামনে রয়েছে তখন ব্যাংকের ভুল শোধারাতে ফের ভুলের বিষয়টি নতুন করে সঙ্গতই প্রশ্ন তুলেছে। আমরা মনে করি, ‘আইনের চোখে সবাই সমান’-এই নীতির প্রতিপালনেই কেবল সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। অনিয়মকারী কাউকে যেমন ছাড় দেওয়া যাবে না, তেমনি প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে কেউ যেন নিজেদের ফায়দা লোটার সুযোগ আর না পায়, এ ব্যাপারে অনমনীয় অবস্থান নিতেই হবে। জবাবদিহির সংস্কৃতি অনুশীলন অপরিহার্য। নীতির ভুল সংশোধনের পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষায় কোনো রকম রাজনৈতিক বিবেচনার অবকাশ নেই তা-ও ভুলে না গেলেই মঙ্গল। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা