× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মূল্যায়ণ

আগামীর অর্থনীতি ও মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের পর্যবেক্ষণ

আব্দুল বায়েস

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৮ পিএম

আব্দুল বায়েস

আব্দুল বায়েস

আজ ১৮ এপ্রিল প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের শুভ জন্মদিন। ১৯৪২ সালের ১৮ এপ্রিল হবিগঞ্জের রতনপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম। তারপর সিলেট এমসি কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অর্থনীতি অধ্যয়নের জন্য। পড়ার ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান কিন্তু ‘বেরসিক’ এবং জটিল রসায়ন তার উৎসাহের গোড়া কেটে দিলে তিনি বিজ্ঞানের বন্ধনমুক্ত হয়ে অর্থনীতি বেছে নেন। সত্যি কথা বলতে কি, সমাজ ও রাজনীতি সচেতন এ মানুষটির জন্য অর্থনীতি যে কতটা উপকারী ছিল তা নিশ্চয় তিনি টের পেয়েছিলেন পরবর্তী জীবনে। তিনি বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। সম্প্রতি আশি পেরিয়ে ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ শিরোনামে তিনি একটি বই লিখলেন (ইউপিএল, মার্চ ২০২৪)। সর্বসাকল্যে ৬৩ পৃষ্ঠার একটি চটি বই তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজনীতির বিদ্যমান সংকট সময়ের জন্য বইটি খুবই প্রাসঙ্গিক এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য উপযোগী বলে মনে করা যায় বিধায় বই থেকে পর্যবেক্ষণের নির্যাস নিবেদন করা গেল। 


দুই

৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নয়নে আমরা উল্লসিত, সন্দেহ নেই। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা বিভিন্ন অভিধায় অভিষিক্ত- রোল মডেল, উন্নয়ন ধাঁধা ইত্যাদি। এমনকি কিছু কিছু নির্দেশকে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও ভারতকে পিছু ফেলেছে; নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন মনে করেন বাংলাদেশ নির্দিষ্ট আর্থসামাজিক নির্দেশকে ভারতের চেয়ে ভালো করেছে। আমাদের আপাত নিশানা ২০৩০ নাগাদ নিম্নমধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করা। ২০১০ সাল থেকে কোভিড আগমনের আগ পর্যন্ত ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধির হার এবং আর্থসামাজিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সাপেক্ষে অনেক আশাভরসা জাগরূক ছিল, কিন্তু যে গতিতে দেশটি এগোচ্ছিল, কোভিড আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এসে সে গতি শুধু শ্লথ করে দেয়নি, নানান জটিলতার জালে নিক্ষিপ্ত করেছে। রিজার্ভ হ্রাস, ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি, নাজুক বিনিময় হার এর অন্যতম। অবশ্য ফরাসউদ্দিনের বই মনোযোগসহকারে পড়লে মনে হবে ওইসব সমস্যায় অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনাজনিত দুর্বলতা কম দায়ী নয়। বিভিন্ন বিষয়ের অবতারণা করেছেন কৃষি, আইনের শাসন এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, ন্যায়পাল নিয়োগ, ব্যাংকিং, প্রাইস কমিশন গঠন, সুনীল অর্থনীতি, ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে বিষোদগার ইত্যাদি। আজকের নিবন্ধে দুয়েকটি বিষয়, বলা যায় টক অব টি স্টল নিয়ে আলোচনা করা হলো।

তিন

তিনি মনে করেন, পণ্যের মূল্য বেঁধে দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, বরং এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকারের কৃতসংকল্পতা, তদারকি ও বাস্তবায়ন না থাকলে সমূহ সমস্যার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মূল্য নির্ধারণ করবে বাজার। প্রতিকূলতা সৃষ্টিকারী, মজুদদার, মুনাফাখোর ও মাস্তানদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর আমলে শক্তিশালী টিসিবিকে আবারও উজ্জীবিত করে বাফার স্টক তুলতে সাহায্য করা, কৃষকের মধ্যে সমবায় বিপণন ব্যবস্থার প্রচলন, পণ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে ঋণসুবিধা এবং মুক্তবাজারে বিক্রির সময়সীমা কয়েক মাস ধরে রাখা ইত্যাদি পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে টোটকা হিসেবে কাজ করে।

কর-জিডিপি অনুপাত কম কেন? এ নিয়ে বিপুল বিতর্ক এবং গলদঘর্ম হওয়ার ঘটনা হামেশা। কিন্তু একটু আন্তরিক হলে ঘরের পাশে দেখব আরশিনগর অর্থাৎ হাতের কাছেই সম্ভাবনা লুকিয়ে। অথচ দেখেও না দেখার ভান! যেমন বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের হিসাবে বাংলাদেশে আড়াই কোটি মানুষের মাথাপিছু আয় ৫ হাজার টাকা। আগামী সাত বছরে তাদের আয়করের আওতায় আনা গেলে করহার কমিয়েও কর-রাজস্ব জিডিপি অনুপাত ২০২৪ সালে ১০ শতাংশ থেকে ২০৩০ নাগাদ ২০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব এবং জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ পৌঁছাবে ৪০ শতাংশের কোঠায় বলে মনে করেন লেখক। এক. দেশের সর্বোচ্চ বিত্তবান ৮৭ লাখ ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ৯ লাখ কর দেয়। বাকিদের শনাক্ত করে তাদের কাছ থেকে উচ্চতম স্তরে শতকরা ৩০ ভাগ আয়কর আদায়ের সুপারিশ আছে বিভিন্ন মহল থেকে; যা বাস্তবায়নে অনুপাতটির উন্নতি লক্ষ করা যাবে। দুই. পেশাজীবীরা যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজ্ঞ এমনকি ছায়াছবির নায়ক-নায়িকারা কবে থেকে সর্বজনীনভাবে তাদের আয়ের ওপর কর দিয়ে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করবেন? তিন. আপেক্ষিক সুবিধার ভিত্তিতে শিল্পপণ্য ও উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। লোকসানি শিল্পকারখানা (বিশেষত চিনিকল) ব্যক্তি খাতে হস্তান্তর করে কর্মরত জনবলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করে সরকারি ব্যয় সংকোচন নীতি নিতে পারলে সরকারি আয় বাড়বে। চার. কয়েক বছর আগে স্বল্পশুল্কের মূলধনি মালামাল আমদানির নামে শত কোটি টাকার অতি উচ্চমূল্যের মুলধনি মালের চালান ধরতে গিয়ে কর্মকর্তাদের চাকরি যাওয়ার জোগাড়। এমন অবস্থায় কর থেকে উৎসারিত আয় বাড়াবার সৎ উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

রিজার্ভের সমস্যা? এক সূত্র বলছেন, এবং জাতিসংঘও এতে একমত, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার পাচার হয়। তার মানে ৭ বিলিয়ন ডলার বা মোট প্রায় চার মাসের রেমিট্যান্স আয়ের সমান। ‘সরকার কেন নীরব ও নিষ্ক্রিয় তা বোধগম্য নয়’ বলে জানান বইটির লেখক। এক. গত দুই বছরে (২০২২-২৩) রোমহর্ষক কয়েকটি মানি লন্ডারিং ঘটনা খবরের কাগজে এলে সরকারি কর্মকাণ্ড কেন ‘পুতিয়ে’ যাচ্ছে? দুই. বেগমপাড়া, সেকেন্ড হোম ইত্যাকার বিষয়ে দুর্বলকণ্ঠ বক্তৃতা-বিবৃতির বদলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। তিন. একজন সাবেক মন্ত্রীর বিদেশে ২৫০টি বাড়ির মালিকানা এবং ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড, স্তার্লিং (রিজার্ভের ১ শতাংশ দেশান্তরিত হওয়ার যে খবর ব্লুমবার্গ রিপোর্ট দিয়েছে তার সঙ্গে অন্যান্য মুদ্রা পাচার, করমুক্ত দ্বীপরাষ্ট্রে সম্পদের নোঙর করা বৈদেশিক মুদ্রা ফিরিয়ে আনতে পারলে রিজার্ভ শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চার. বৈদেশিক রিজার্ভ থেকে জাতীয় সর্বোচ্চ জরুরি ছাড়া কোনোভাবে কোনো প্রকল্প নেওয়া সমীচীন নয়। পাঁচ. একক বিনিময় হার প্রচলন, যার মধ্যে রেমিট্যান্স প্রণোদনা যুক্ত হয়ে প্রেরকের হাতে পৌঁছাবেÑকরতে পারলে কার্ব মার্কেটের কেরামতি কমানো সম্ভব। বিদেশি বাণিজ্য সহযোগীদের সঙ্গে বিনিময় হারের আনুপাতিক ওজন নিয়ে প্রকৃত কার্যকর বিনিময় হার (রিয়েল ইফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট) এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যাতে হারটি কার্ব মার্কেটের হারের কাছাকাছি থাকে। ছয়. রপ্তানি আয়ের শতকরা ১২ ভাগ বিদেশে থেকে যাচ্ছে বলে প্রকাশ। এটা মোটেও কাম্য নয়। বড়জোর তা ৫ শতাংশ হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও বৈদেশিক মুদ্রা হাতছাড়া হচ্ছে। রপ্তানিকারক স্পষ্ট নীতিমালার আওতায় ভিন্ন ভিন্ন খাতে সুনির্দিষ্ট হারে রিটেনশন কোটা পেয়ে থাকেন, তার পরও কেন তারা বিদেশে রপ্তানি আয় পার্ক করবেন? ওয়াসার স্বেচ্ছাচার ও কথিত দুর্নীতি, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি তথা সমাজে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি এবং বিশাল আন্ডারগ্রাউন্ড অর্থনীতি তার লেন্সের বাইরে ছিল না। তিনি মনে করেন কুইক রেন্টাল বাতিল করলে দুর্নীতি কমবে। দুর্নীতি দমনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার সহযোগে ব্যাংকিং দক্ষতা দরকার।

চার

আগেই বলেছি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা, কূটনীতি, বিভিন্ন খাতে সংস্কার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ মোট ১৪টি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনার প্রস্তাব করেছেন যাতে আগামী সাত বছরের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছার পথটি নিষ্কণ্টক ও নির্বিঘ্ন হয়। আমরা মনে করতে পারি প্রস্তাবগুলো নীতিনির্ধারক, পেশাজীবী এবং রাজনীতিবিদদের আলোচনার পথ প্রশস্ত করবে। বিদ্যমান ব্যবস্থাপনায় যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর হওয়া বেশ কঠিন কাজ, এমনকি অসম্ভব, সে কথা যেন ভুলে না যাই। বহিঃস্থ বৈরী উপাদানের পাশাপাশি দেশি ‘যে সকল অপূর্ণতা, উলটো রথযাত্রা ও দুর্বলতা রয়েছে, তা দূরীকরণে সুদৃঢ় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিই হবে স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রধান সোপান

পাঁচ

আগেও বলেছি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অগাধ আনুগত্য ছিল অতুলনীয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অনেক সমর্থক যখন পালিয়ে ঘরে ঢুকে যেতে ব্যস্ত, তিনি তখন ঘর থেকে বেরিয়ে অকুতোভয়ে ৩২ নম্বর অভিমুখী হয়েছিলেন। এর প্রমাণ একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণÑফরাসউদ্দিন সে সময় বঙ্গবন্ধুর প্রাইভেট সেক্রেটারি-২ ছিল। ওকে ফোন করলাম। ফরাস প্রথম উৎসাহের সঙ্গে জানাল, ‘একদল লোক অভ্যুত্থান করার চেষ্টা করেছিল। জামিল ভাই (কর্নেল জামিল) ওদিকে চলে গেছেন। ৩২ নম্বরের দিকে। আমিও ওখানে যাচ্ছি। আমিও উৎসাহিত হলাম। ভাবলাম, অভ্যুত্থা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু পরে তো জানলাম, জামিল সাহেবকে ওখানেই সোবহানবাগ মসজিদের কাছে মেরে ফেলেছে। ফরাসকে পিটিয়েছে, তারপর বের করে দিয়েছে। আমি যখন ফরাসের কাছে পরে গেলাম, বুঝলাম, খুব ঝুঁকিপূর্ণভাবেই সে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিল। একজন বুরোক্র্যাট বা আমলা হিসেবে সে এতটা সাহসের পরিচয় দেবে, সেটা ভাবিনি।’ (তোয়াব খান, আজকের পত্রিকা ডটকম, ১৯ আগস্ট, ২০২১)।

আপনার একটা দীর্ঘ ‘উৎপাদনশীল’ জীবন কামনা করি, মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। শেষ করি রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে। তিনি বলেছেন, ‘আলোকের এই ঝর্ণাধারায় ধুইয়ে দাও।/আপনাকে এই লুকিয়ে-রাখা ধুলার ঢাকা ধুইয়ে দাও/যে জন আমার মাঝে জড়িয়ে আছে ঘুমের জালে/আজ এই সকালে ধীরে ধীরে তার কপালে/তারে আনন্দের এই জাগরণী ছুঁই’য়ে দাও।/বিশ্বহৃদয়-হতে-ধাওয়া প্রাণে-পাগল গানের হাওয়া,/সেই হাওয়াতে হৃদয় আমার নুইয়ে দাও।’

  • অর্থনীতিবিদ ও সমাজ-বিশ্লেষক। সাবেক উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা