স্মরণ
এ এন রাশেদা
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২০ পিএম
ড. গোলাম মহিউদ্দিন
২০০৪ সালের ১৮ এপ্রিল ড. গোলাম মহিউদ্দিন
মৃত্যুবরণ করেন। নীরবেই চলে গেল ২০টি বছর। তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি অনেক সংগঠনের সঙ্গে
যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে গ্যাস সংকটের এই ক্রান্তিকালে গ্যাস রপ্তানির বিরুদ্ধে তার অবদানের
কথাটি প্রথমে স্মরণ করতে চাই। তিনি ‘জাতীয় স্বার্থে তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা
জাতীয় কমিটি’র সদস্য সচিব ছিলেন আমৃত্যু। বিভিন্ন জেলা শহরে গিয়ে সভাসমাবেশও করেছিলেন
সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মো. শহীদুল্লাহসহ আরও অনেকের সঙ্গে।
১৯৭০ সালে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল
বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে পঞ্চম স্থান অধিকারের পর রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রভাষক
পদে যোগ দেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য
অধিদপ্তরে প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যোগদান করেন। ড. গোলাম মহিউদ্দিন
সুশীল ও পেশাজীবী সমাজকে সংগঠিত করার জন্য আজীবন সংগ্রাম, ত্যাগ ও পরিশ্রম করেছেন।
তিনি আইইবি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট (একাডেমিক), ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান, বহুবার কেন্দ্রীয়
কাউন্সিল ও ঢাকা কাউন্সিলের সদস্য, যন্ত্রকৌশল বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান, ইকুইভেলেন্স
কমিটির চেয়ারম্যান, মালটি ডিসিপ্লিনারী জার্নাল-এর সম্পাদক, প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার্স
রেজিস্টেশন বোর্ড-এর সদস্য ও বিইএটিই-এর সদস্য-সচিব ছিলেন। আইইবি-র বাইরেও বাংলাদেশের
কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদ সদস্য, বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন
ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট, ন্যাশনাল ওশেনোগ্রাফিক অ্যান্ড
ম্যারিটাইম ইনস্টিউট (নাওমি)-এর সদস্য সচিব ছিলেন। এমনি আরও অনেক সংগঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ
পদে নির্বাচিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আইইবির উদ্যোগে ‘'বাংলাদেশ প্রফেশনাল
ইঞ্জিনিয়ার্স রেজিস্ট্রেশন বোর্ড (বিপিইআরবি)’ স্থাপনে ড. মহিউদ্দিন ছিলেন একজন সক্রিয়
কর্মী।
একজন স্ত্রী হিসেবে কম কথা বলাই ভালো।
তবু সামান্য না বললেই না। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ডিরেকটোরেট অব কন্টিনিউইং এডুকেশন
(ডিসিই)-এর ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। ড. গোলাম মহিউদ্দিন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়েও
ভাবতেন। তাই প্রতি বছর শিক্ষা বাজেট নিয়ে মাসিক শিক্ষাবার্তায় লিখতেন। আন্তর্জাতিক
অঙ্গনের খবর রাখতেন এবং লিখতেন। তাই লিখেছিলেন ‘শিক্ষার প্রাইভেটাইজেশন : অভিজ্ঞতা
ল্যাটিন আমেরিকার’, ‘শিক্ষার প্রাইভেটাইজেশন ও শিক্ষক আন্দোলন : গুজরাটের অভিজ্ঞতা’,
‘নামিবিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা ও ট্র্যান্সন্যাশনাল করপোরেশন’, ‘বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা’,
‘শিক্ষকের চাকুরিবিধি : অধিকার ও কর্তব্য’ ইত্যাদি। ইতঃপূর্বে আমলাদের সঙ্গে শিক্ষকদের
চাকরিবিধি নিয়ে আলোচনা খুব একটা চোখে পড়ে না। শুধু শিক্ষা নয়, তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও
যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর তিনি নগর কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির
সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তখন সভাপতি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম।
উদীচীর ভাইবোনেরা তার চিকিৎসা চলাকালে রক্ত দান করেন এবং নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতায়
এগিয়ে এসেছেন।
ড. গোলাম মহিউদ্দিনের শিক্ষক প্রফেসর ড.
মো. আনোয়ার হোসেন [পরে উপাচার্য, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি)] লিখেছেন
: ‘মহিউদ্দিন অত্যন্ত খোলা মনের শিক্ষক ছিল। নতুন নতুন বিষয়বস্তু পাঠক্রমে ঢোকানো,
নতুন নতুন বিষয় চালু করার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। সবকিছুই করত ডিপার্টমেন্টের কথা
ভেবে, ছাত্রছাত্রীদের কথা চিন্তা করে, স্নাতকদের বর্তমান মুক্তবাজারে চাকরির কথা স্মরণে
রেখে। এজন্য মাঝেমধ্যে তাকে বেশ বাধাবিপত্তিরও সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবু সে এগিয়ে যেত
তার সংস্কারমূলক প্রগতিশীল কার্যক্রম নিয়ে। ছাত্রছাত্রীদের ভেতর সে অত্যন্ত জনপ্রিয়
ছিল। খোলামেলা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সে তাদের ভীষণভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারত।’
এখানেই তো শিক্ষকের কৃতিত্ব। ড. গোলাম মহিউদ্দিন একজন সফল মানুষ ছিলেন। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।