× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

চিকিৎসক যেন দায় ও কর্তব্য ভুলে না যান

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৪ পিএম

চিকিৎসক যেন দায় ও কর্তব্য ভুলে না যান

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন আছে অন্তহীন। মফস্বলে চিকিৎসকরা যেতে চান না তা পুরোনো অভিযোগ। সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য উঠে এসেছে একটি গবেষণায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকদের গবেষণার তথ্য বলছে, শতকরা ৯৬ ভাগ চিকিৎসক গ্রামে থাকতে চান না। তাদের গবেষণায় এ-ও জানা গেছে, প্রশিক্ষণের কারণে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন ৬৫ ভাগ চিকিৎসক। পারিবারিক কাজের জন্য অনুপস্থিত থাকেন ৪১ ভাগ এবং বরাদ্দ করা আবাসস্থলে থাকেন না ৬৩ ভাগ চিকিৎসক। ‘অনুপস্থিত কে এবং কেন? বাংলাদেশে চিকিৎসক অনুপস্থিতিতে প্রভাব বিস্তারকারী কারণসমূহ’ শিরোনামের এই গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তা একদিকে প্রশ্নবোধক, অন্যদিকে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটির বিষয়গুলোও উন্মোচিত করেছে। গত ৪ এপ্রিল প্লস গ্লোবাল পাবলিক হেলথ জার্নালের অনলাইন সংস্করণে গবেষকদের গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে লিখিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।

টানা পঞ্চমবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘দেশের তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য খাতকে উন্নত করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গ্রামে চিকিৎসকদের থাকার জন্য পরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা চলছে। তারপরও কোনো চিকিৎসক গ্রামে যেতে না চাইলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জনপরিসরে এ প্রশ্নও আছে, গ্রামে বা উপজেলায় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা থাকতে পারলে চিকিৎসকরা পারবেন না কেন। আমরা জানি, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ পরিবেশের উন্নতি অনেকটাই সাধিত হয়েছে। ওই জরিপে এ-ও উঠে এসেছে, অনেক চিকিৎসকই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করলেও তাদের পদায়ন কোনো না কোনো সময় উপজেলায় ছিল। চাকরি পাওয়ার পর পদায়ন করা এলাকায় দুই বছর কাজ করা চিকিৎসকদের জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, ২৬ শতাংশ চিকিৎসক জানিয়েছেন তারা তা করেননি। প্রশিক্ষণ চাকরির অনুষঙ্গ। কিন্তু প্রশিক্ষণব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যে অনুপাতে প্রশিক্ষণপ্রার্থী কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও কার্যক্ষেত্রে এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কিন্তু আমরা দেখছি, এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকের ঘাটতি বরাবরই রয়েছে। আবার কেউ কেউ সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পেশার মহান দায়িত্বপালনে নিষ্ঠ রয়েছেন, এ-ও সত্য।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাবেক সভাপতির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যেভাবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে চিত্রায়িত করে বাস্তবতা তা থেকে ভিন্ন। আমরা জানি, চিকিৎসকরা অনেক সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করেন। কিন্তু চিকিৎসা পেশা আর দশটা পেশার মতো নয়। চিকিৎসা সেবাদান একজন চিকিৎসকের পেশাগত অঙ্গীকার, দায় ও কর্তব্য। চিকিৎসকরা কেন গ্রামে থাকতে চান না, এরও বিভিন্ন ব্যাখ্যা চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট অনেকের তরফেই ইতোমধ্যে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখছি, জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট এই বিষয়টির প্রতি সেভাবে নজর দিয়ে দেশে চিকিৎসকদের চাকরির জুতসই কোনো নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়নি। মফস্বলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সংকট তুলনামূলক বেশি। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা অতীতে বলেছি, শহর ও গ্রামে ব্যবস্থাপনায় সাম্য প্রতিষ্ঠা হলে চিকিৎসকরা তাদের পদায়নকৃত স্থানে দায়িত্বপালনে অনাগ্রহ প্রকাশের অবকাশ থাকত না। যেকোনো পেশায় ক্যারিয়ার পরিকল্পনা কিংবা নীতিমালা অত্যন্ত বাঞ্ছনীয়। এর ঘাটতি থাকলে আচরণ কিংবা দায়িত্বপালনেও ঘাটতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর ছায়া পড়েছে।

তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা উন্নত করতে না পারলে দেশের স্বাস্থ্য খাতকে সরকারের অঙ্গীকার অনুসারে উন্নত করা সম্ভব নয়। আমরা দেখছি, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উপজেলায় চিকিৎসক এবং চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতির কারণে মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছে। জনবলকাঠামো অনুযায়ী প্রত্যেকটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা হলেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চাহিদার নিরিখে চিকিৎসক না থাকায় এর চাপ পড়ছে জেলা হাসপাতালগুলোতে এবং এর ফলে সেবা কার্যক্রম অনেকাংশেই বিঘ্নিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি আছে সমন্বয়হীনতার অভাব।

চিকিৎসাসেবা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। আমাদের স্মরণে আছে, ২০১৪ সালে একযোগে ৬ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে মফস্বলে পদায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশ, তাদের প্রায় ৭৫ শতাংশই কর্মস্থলে থাকেননি। অনেক উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামোগত সংকটের পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত সংকটও রয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অবকাঠামো আছে, বরাদ্দ আছে, চিকিৎসা সরঞ্জামও আছে কিন্তু চিকিৎসা নেই। কারণ চিকিৎসা যারা দেবেন তারা নেই। এ-ও অসত্য নয়, পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মতো মানসিকতাও অনেক চিকিৎসকের নেই। চিকিৎসকদের নিজ নিজ জেলা বা পার্শ্ববর্তী জেলায় পদায়নের বিধি রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে চিকিৎসক হলে তাদের একই বা পাশাপাশি কর্মস্থলে পদায়নের সুযোগও রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারপরও মফস্বলে অনেকেই যেতে চান না।

আমরা মনে করি, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে যত চেষ্টাই অব্যাহত থাকুক না কেন যারা চিকিৎসা দেবেন তাদের দায় ও কর্তব্যবোধে ঘাটতি থাকলে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। সমস্যার গভীরে যাওয়া দরকার। কোনো বিষয়ই এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা সমীচীন নয় বলেও আমরা মনে করি। দেশভেদে চিকিৎসকের দায়িত্ব ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু তাদের দায়বোধের বিষয়টি একই। চিকিৎসাসেবাপ্রার্থীর সঙ্গে যেমন একজন চিকিৎসকের অনৈতিক আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত তেমনি চিকিৎসকের মর্যাদার ব্যাপারেও সেবাপ্রার্থীর সচেতন থাকা বাঞ্ছনীয়। চিকিৎসাসংকট কাটাতে চিকিৎসকদের যেমন নৈতিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে তেমনি ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা দূরীকরণেও মনোযোগ গভীর করা জরুরি। রোগীবান্ধব চিকিৎসাপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার জরুরি কিছু অনুষঙ্গ রয়েছে এবং এর মধ্যে চিকিৎসকের কর্মস্থলে দায়িত্বপালন অন্যতম অনুষঙ্গ।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা