× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত

মধ্যপ্রাচ্যের ভয়াবহ নতুন প্রেক্ষাপট

ঘাসান কারবাহাল

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪০ পিএম

ঘাসান কারবাহাল

ঘাসান কারবাহাল

১৩-১৪ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্যের স্মৃতিতে আলাদা জায়গা দখল করে রাখবে। ২০০৩ সালে বাগদাদে মার্কিন রকেট বর্ষণের সময় যেমন ব্যস্ততায় নিউজরুমগুলোকে পার করতে হয়েছে, বিগত কদিনেও তেমনই কেটেছে। তবে ২০০৩ সাল থেকে এবারের ঘটনাটি ভিন্ন। কারণ মার্কিন সামরিক বাহিনী এমন কোনো হামলা পরিচালনা করে না যেটিতে তারা পরাজিত পক্ষ হয়ে উঠবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের নতুন এ ঘটনাটি আলাদা অর্থবহ। পরিস্থিতির বাঁকবদল ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। মধ্যপ্রাচ্য শিগগিরই আরও নাজুক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে চলেছে। অঞ্চলটিতে এয়ারপোর্ট এবং আকাশসীমা আপাতত বন্ধ। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ সভয়ে আকাশে উড়ন্ত ড্রোন আর রকেটের দিকে তাকিয়ে। ড্রোন ও মিসাইল ভূপাতিত করার জন্যও ভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে। দীর্ঘ একটি রাত। সামরিক বাহিনীর বড় কর্তাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে সেদিন।

কয়েক বছর ধরে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হবে ধরনের যে হুমকি দেওয়া হয়েছে ১৩-১৪ এপ্রিল তেমন কোনো হামলা পরিচালিত হয়নি। ইরান ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু হয়নি। বরং এটি এক ধরনের সতর্কবার্তা। ইসরায়েলি এলাকার ওপর যেকোনো সময় ইরান হামলা করতে পারে তা মনে করিয়ে দেওয়াই এ হামলার উদ্দেশ্য। এ হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন কিছু মেরুকরণ ঘটেছে। রাত গভীর হওয়ার আগেই হামলা পরিচালিত হয়। কিছু যে হয়েছে তা বোঝা কঠিন কিছু ছিল না। হোয়াইট হাউসের কর্তা নিজের ভ্যাকেশনের মাঝপথে আচমকা সামরিক কর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। গোটা বিশ্ব নড়েচড়ে বসে এবং সারা রাত জেগে থাকে। নতুন এ রাতের সূচনা ঘটে চলতি মাসের শুরুতেই। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ভয়াবহ এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের সাতজন গুরুত্বপূর্ণ অফিসার দামেস্কে বৈঠক করছিলেন। তাদের এ বৈঠকটিকে তিনি বড় সুযোগ হিসেবে ধরে নেন। ইরানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে তিনি বোধ হয় অতটা ভাবেননি। বৈঠকস্থলে তিনি হামলার নির্দেশ দেন। বাগদাদ এয়ারপোর্টের কাছে কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে সাহস দেখিয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি সাহস দেখিয়েছেন নেতানিয়াহু।


নেতানিয়াহুর এ সিদ্ধান্ত একাধিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তিনি কি প্রক্সি যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত? ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে এ প্রক্সির নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে চাচ্ছেন অবশেষে? পশ্চিমাদেরও কি তিনি কোনো বার্তা পৌঁছে দিতে চাচ্ছেন? ইয়েমেনি রকেট, ইরাকের ড্রোন আর লেবাননের সঙ্গে সংঘর্ষের বদলে কি তিনি চরম যুদ্ধের দিকেই এগোতে চাচ্ছেন? নাকি ইরানের জন্য তিনি ভয়াবহ কোনো ফাঁদ পেতেছেন? দামেস্কে হামলার জবাব ইরান না দিয়ে পারত না। নেতানিয়াহু সরাসরি ইরানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। তবে ইরান সরাসরি ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে না। কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। কোনো ধরনের বড় যুদ্ধে না জড়িয়ে ইরান অন্তত দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করে। অবশেষে তারা ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায়। রাজনীতি ও সামরিক কর্তারা এ বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা করেছেন। ইরান মূলত ইসরায়েলকে এক ধরনের বার্তা পাঠিয়েছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভিন্ন আরেকটি বার্তা পাঠিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তারা বুঝিয়েছে, ইরান কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না।

ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলার রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় নেতানিয়াহুর হামলার সমালোচনা করে একটি বার্তা পাঠায়। তার মানে এই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পরিত্যাগ করবে। ইরানের রকেট ও ড্রোন ভূপাতিত করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী একা নিযুক্ত ছিল এমন নয়। ব্রিটেন ও ফ্রান্সও সেদিন রাতে নানাভাবে যুক্ত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইরানকে পশ্চিমা সম্প্রদায়ের বার্তা পাঠিয়েছে। ইসরায়েলকে ভয়াবহ হামলায় নাজুক করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সেদিন রাতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে, ইরানের সামরিক প্রযুক্তির তুলনায় পশ্চিমা ও ইসরায়েলি প্রযুক্তি আরও উন্নত। এমন বার্তা লেবাননে হিজবুল্লাহকে কিছুটা ভাবাবে অবশ্যই। এ হামলাকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে জানা যায়, ইসরায়েল পশ্চিমা প্রতিরক্ষার আরামে বেশ আছে।

এ হামলার পর একটি বিষয় বোঝা যায়, ইরান কি ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে? করলেও কীভাবে? ইরানের এ হামলার পর প্রশ্নটি আবার উত্থাপিত হয়। ইসরায়েল কি ইরানের সীমায় আঘাত করবে? যদি করে তাহলে কীভাবে? ইরানের হামলার মুখে ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে প্রশ্ন ছাড়া সহযোগিতা করেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন এও স্পষ্ট করেছে, ইসরায়েলের প্রতিটি সিদ্ধান্ত তারা মুখ বুজে মেনে নেয় না। ভবিষ্যতে অপরিণামদর্শী কোনো কর্মকাণ্ডে তারা সহযোগিতা করবে না। যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অসংখ্য প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হবে। মধ্যপ্রাচ্যের এ সংকটে নেতানিয়াহু কি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারবেন? তার সরকারে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাসঘাতকদের ব্যাপারে কী করবেন? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শই বা তারা কতটা আমলে নেবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কি তারা সামরিক সহযোগিতার দিকেই ঝুঁকে থাকবেন যাতে রাফাতে তার সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে পারে। নাকি ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ মুলতবি রেখে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে বেশি জোর দেওয়া হবে? নাকি এ সংঘাতের ইতি টানার দিকেই তার সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকবে। বিগত কয়েক মাসে ভয়াবহ সংঘাতে ইসরায়েলের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আগামীতে অঙ্কের সংখ্যা আরও স্ফীত হবেএ আশংকা বহুলাংশে অমূলক নয়।

আমরা শুধু অপেক্ষাই করতে পারি। এ সংঘাত থেকে দুই অঞ্চল কেমন পরিসীমা টানবে সেটাই দেখার বিষয়। অগ্নিবিনিময়ের মাধ্যমে যে আতঙ্কের সঞ্চার করা হয়েছে তা কি অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অশনিসংকেত নয়?

  • প্রধান সম্পাদক, আশরাক আল আওসাত

আশরাক আল আওসাত থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা