জন্মদিন
দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু
প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৩৭ পিএম
আবেদ খান। ছবি : সংগৃহীত
আবেদ খান,
বহুমাত্রিক পরিচয়ের অধিকারী। পেশায় আপাদমস্তক সাংবাদিক। মননে সাংবাদিকতার চাষ। স্বপ্নে
সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট সৃজনের বুনন। অঙ্গীকারে লেখকও। ১৭ বছর বয়সে ১৯৬২ সালে আবেদ খানের
সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি তৎকালীন বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিক জেহাদ-এ। ১৬ এপ্রিল ১৯৪৫ সালে
খুলনা জেলার রসুলপুরে (বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা) জন্ম আবেদ খানের। তার মাতামহ অবিভক্ত
ভারতের দৈনিক আজাদের সম্পাদক মওলানা আকরম খাঁকে বলা হয় এই ভূখণ্ডের সাংবাদিকতার অন্যতম
পথিকৃৎ।
দৈনিক জেহাদ
পত্রিকায় খুব বেশি দিন স্থিত হননি তিনি। তারপর দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক-এ বিভিন্ন
পদে দায়িত্ব পালন ক্রমেই তাকে বিকশিত করে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় অন্যতম শীর্ষজন।
সাংবাদিকতায় নতুন ধারা সৃষ্টিকারী আবেদ খান পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালন করেন সম্পাদকের।
ভোরের কাগজ, কালের কণ্ঠ, সমকাল-এ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর দৈনিক জাগরণের প্রকাশক
ও সম্পাদক হিসেবে স্বপ্নের বীজ বপন করেন। তারপর দৈনিক কালবেলার প্রধান সম্পাদক হিসেবে
কিছুদিন দায়িত্ব পালন করে আপাতত অবসরে।
একুশে টেলিভিশনের
প্রতিষ্ঠালগ্নে সংবাদ ও চলতি তথ্য বিষয়ে প্রধান হিসেবে কাজ করেন। এটিএন নিউজের প্রধান
নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কিছুদিন। এর আগে বাংলাদেশ
টেলিভিশনে আবেদ খান ও তার সহধর্মিণী ড. সানজিদা আখতারের যুগল উপস্থাপনায় বিশেষ অনুষ্ঠানগুলো
আজও অনেককেই করে স্মৃতিকাতর। ‘ঘটনার আড়ালে’ নামক বিটিভিতে প্রচারিত তার অনুসন্ধানমূলক
সাংবাদিকতার অনুষ্ঠানটিও দর্শক মনে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তার ওপেন সিক্রেট, অভাজনের নিবেদন,
লেট দেয়ার বি লাইট, তৃতীয় নয়ন, টক অব দ্য টাউন, প্রাঙ্গণে-বহিরাঙ্গনে, গৌড়ানন্দ কবি
ভনে শুনে পুণ্যবান ইত্যাদি নামে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রথম পাতায় তাৎক্ষণিক অনুসন্ধানী
প্রতিক্রিয়া ও কলামগুলো তুমুল জনপ্রিয়তায় পাঠকের কাছে যেন একসময় হয়ে ওঠে টক অব দ্য
কান্ট্রি। একাত্তরের ১ মার্চ তিনি পুরান ঢাকার নারিন্দা-ওয়ারী অঞ্চলে স্বাধীন বাংলা
সংগ্রাম পরিষদ কমিটির কনভেনর হিসেবে নির্ভিকতার স্বাক্ষর রাখেন। ২৫ মার্চ কালরাতে ও
দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, ডেইল পিপল ভবন এবং অপারেশন সার্চ লাইটের নামে পাকিস্তানি
সেনাদের বর্বরতার ভয়াবহ অনেক কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী আবেদ খান কলকাতার আকাশবাণী বেতার
কেন্দ্রের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন এই ভূখণ্ডের মর্মন্তুদতা।
তার প্রকাশিত
গ্রন্থ প্রায় ১৬টি এবং প্রতিটিই পাঠকনন্দিত। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক
আবেদ খান আট নম্বর সেক্টরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধকালে। রাজনীতিতেও তার ছিল দাপুটে পদচারণা।
বাম ধারার রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ও তখন ১২টি বাম দলের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম
সমন্বয় পরিষদের পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সাংগঠনিক দক্ষতার
আরও পরিস্ফুটন ঘটে। তিনি কোনো অর্জনই বোঝার মতো বয়ে বেড়ান না। তিনি শুধু উচ্চারণেই
দৃঢ় তা-ই নয়; তার সারল্য-উদারতার কারণে সুযোগ সন্ধানীরা নানাভাবে সুযোগ নেওয়ার পরও
মানুষের প্রতি ভালোবাসায় তিনি অকৃপণ। দেশের গণমাধ্যম সংস্কৃতিতে সুদীর্ঘকাল তিনি যে
অনবদ্য অবদান রেখেছেন, তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাহিত্য, সংস্কৃতি, সামাজিক কর্মকাণ্ডসহ
নানা ক্ষেত্রে তার রয়েছে অনবদ্য অবদান। তিনি এর স্বীকৃতিস্বরূপ বেসরকারি অনেক সম্মাননা
পুরস্কার অর্জন করলেও রাষ্ট্র তার প্রতি সুবিচার করেনি। রাষ্ট্রীয় পদক পুরস্কার নিয়ে
যখন দফায় দফায় বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠে, তখনও আবেদ খানের মতো ব্যক্তিত্বকে রাষ্ট্র
মূল্যায়ন করেনি।
সাংবাদিকতায়
আমার দীক্ষাগুরু ও শিক্ষাগুরু তিনি। দীর্ঘদিন খুব কাছে থেকে, তার সঙ্গে কাজ করে বইয়ের
প্রতিটি পৃষ্ঠার ম্তো তাকে পড়ার চেষ্টা করেছি। তাতে সমৃদ্ধও হয়েছি। ‘ইতিহাসের কাছে
আমার দায়’ শিরোনামে একটি দৈনিকে তিনি লিখেছিলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের আগে গোপন সংবাদের
ভিত্তিতে তিনি খবরের পেছনের খবর সন্ধান করতে গিয়ে কীভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের ডেরায় হাজির
হয়ে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আবেদ ভাই আপনাকে প্রণতি। শুভ জন্মদিন। আপনি প্রজন্মের বাতিঘর।