× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উপজেলা নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করাই ইসির চ্যালেঞ্জ

ড. মোসলেহউদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:০৬ পিএম

অলঙ্করণ প্রবা

অলঙ্করণ প্রবা

শুরু হয়েছে উপজেলা পরিষদের ষষ্ঠ সাধারন নির্বাচনের কার্যক্রম। নির্বাচন কমিশন প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ৮ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত চার ধাপে উল্লিখিত দুই ধাপের নির্বাচন আয়োজনের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। স্থানীয় সরকারের স্তরের নির্বাচন ধারাবাহিকভাবেই সম্পন্ন হয়। যদিও স্থানীয় সরকার কাঠামোর প্রতিটি স্তরের নির্বাচন আনুষ্ঠানিকতার মতোই মনে হতে পারে কিন্তু এটিরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ ধরনের নির্বাচনের আভাস কিংবা আমেজ জাতীয় পরিসরের নির্বাচন থেকে একেবারে ভিন্ন। এখানে প্রতিদ্বন্দ্বীতাও বেশি হয় এবং প্রার্থী সম্পর্কে ভোটারদের ধারণাও থাকে।

৭ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর একটি প্রতিবেদন অবশ্য সে বার্তাই দিচ্ছে। ‘বিনাভোটের উপজেলাগুলোয় এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে শতাধিক উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী ভোটে জয়ী হলেও এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন হবে। আর এই উৎসবমুখর পরিবেশের সুষ্ঠ অবস্থা নিশ্চিত করতে হলে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরি। নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনকে এ বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ দিয়ে নির্বাচনী আয়োজনের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে। যত বেশিসংখ্যক ভোটার স্থানীয় সরকারমুখী হবে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার পর ততই মসৃণ হবে। 

স্থানীয় সরকার কাঠামোর জন্য উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে জেলা পরিষদ অপ্রত্যক্ষভাবে যুক্ত হলেও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত সরকার কাঠামোব্যবস্থা। উপজেলা পরিষদে কার্যক্রম পরিচালনা অধিক সহজ। যেকোনো প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে উপজেলায় বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে উপজেলা পরিষদে যদি বেশিসংখ্যক ভোটার উপস্থিত করা যায় তাহলে লাভবান হবে স্থানীয় সরকারকাঠামো। জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি তার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। আর এই সচেতনতার অবস্থান থেকেই প্রতিনিধিরা উপজেলার উন্নয়নকল্পে কাজ করবেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের বর্তমান অবস্থার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেই হয়। এই অঞ্চলে স্থানীয় সরকার কাঠামো গড়ে তোলে ব্রিটিশরা। ব্রিটিশরা যে অবকাঠামো কিছুটা হলেও গড়ে দিতে পেরেছিল তা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় পাকিস্তান শাসনামলে। ব্রিটিশরা মূলত স্থানীয় স্ব-শাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল। পাকিস্থান শাসনামলে তা সরকারের তাবেদারে পরিণত হয়। স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর অতিক্রান্তেও আমরা এই অবস্থা থেকে বেরুতে পারিনি। স্থানীয় সরকার কাঠামোর সুসংহত কাঠামো আমরা এতদিনেও গড়তে পারিনি। উপজেলা পরিষদ স্থানীয় মানুষের কল্যাণকামী প্রতিষ্ঠান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও আর্থিকভাবে সাবলম্বী করে তোলা গেলে জনকল্যাণের পথ সুগম হবে।  

অতীতে আমরা দেখেছি স্থানীয় সরকার নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশেই সম্পন্ন হতো। কিন্তু বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আমরা দেখছি, এ ধরনের নির্বাচনেও প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেছে। দেশের মানুষ নির্বাচনী আয়োজনকে উৎসব হিসেবেই ভাবে। উৎসবমুখর পরিবেশে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নির্বাচনের নজির আমাদের সামনে রয়েছে। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে বিকেন্দ্রিকরণের কথাও অতীতে কয়েকবার হয়েছে। তবে স্থানীয় সরকার কাঠামোর প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার কারণটি বোঝা জরুরি। আমরা দেখছি, জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে উৎসবের ভাটা পড়েছে। মানুষের মনে এমন একটি ধারনা জন্ম নিয়েছে, জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনেই যদি এত সংকট জিইয়ে থাকে তাহলে স্থানীয় সরকার কাঠামোর বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনেও সুষ্ঠ-অবাধ ও আনন্দমুখর পরিবেশ প্রত্যাশিত হতে পারে না। ভোটদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগের মতো স্বতস্ফূর্ততা ও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না। আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক দলের মধ্যকার আস্থার সংকট নানাভাবে ভোটারদেরকেও প্রভাবিত করছে। মূলত স্থানীয় পর্যায়ের সরকারকাঠামো সাধারন মানুষের চাহিদাকে পূরণ করার মতো শক্তিশালী নয় বিধায়ও অনেকে এ ধরনের নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখায় না। তাছাড়া স্থানীয় সরকার মূলত স্থানীয় পর্যায়ে স্বায়ত্তশাসন পরিচালনা করে। অথচ দেশে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা অনেকাংশে ক্ষমতাসীন দলের তাঁবেদার হয়ে রয়েছে। স্থানীয় সরকার কাঠামোয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সরকারকে কীভাবে সহযোগিতা করবে তা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়নের সুষম বণ্টন ঘটে না। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত না করলে কোনো স্থানীয় উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করতে পারেন না।

স্থানীয় সরকার কাঠামো নিয়ে এখনও রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন। আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতের পাঞ্জাব, কেরালাসহ কয়েকটি অঞ্চলে স্থানীয় সরকার কাঠামো ‘পঞ্চায়েত’ বলে পরিচিত। ভারতে ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় সরকারের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করে না। এমনকি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোয় স্থানীয় সরকারই জনগণের যাবতীয় সেবার মান সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোয় স্থানীয় সরকার মানুষের আবাসন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও নিয়ে থাকে। স্থানীয় সরকার কাঠামোর সর্বজনব্যাপী সেবার বিষয়টি আমরা এখনও প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। স্থানীয় সরকার কাঠামোর নারী প্রতিনিধিদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি বিভিন্ন মহলে এখনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। একদিকে বলা হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নের কথা, অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষমতাহীনভাবে দায়িত্বপালনের প্রক্রিয়া। নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মুক্তি একটি বড় বিষয়। এ মুক্তির কাজটি স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করা অত্যাবশ্যক এবং এ সুযোগও আমাদের রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে ভাবা জরুরি। স্থানীয় সরকার কাঠামোকে বিভিন্নভাবে শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে। 

লেখক : স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা