× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও নববর্ষ: কল্যাণের আলো ছড়াক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ০০:৩৫ এএম

পবিত্র ঈদুল ফিতর ও নববর্ষ: কল্যাণের আলো ছড়াক

আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম এই ঈদ সমতা, মানবিকতা, সহানুভূতি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ঈদ অর্থ আনন্দ, উৎসব ও ফিরে আসা। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের জীবনে প্রতিবছর এ আনন্দ-উৎসব ফিরে আসে। ঈদের দিন নতুন জামা-কাপড় পরে মুসল্লিরা সকালেই ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহর কাছে রমজানের সব আমল কবুলের আরজি পেশ করেন। পারস্পরিক কুশলবিনিময়, কোলাকুলি আর নানা স্বাদের খাবারের আয়োজন-আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে দিনটি আনন্দময় হয়ে ওঠে। ঈদুল ফিতরে জাকাত-ফিতরা ও সাধারণ দানের মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র-অসহায় মানুষের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার আহ্বান জানানো হয় শিক্ষা সম্প্রীতির সমাজ গঠনে।

ঈদুল ফিতরের আনন্দের মাঝেই বাংলা বর্ষপঞ্জি থেকে বিদায় নেবে ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির ১৪ এপ্রিল ভোরের আলোয় নতুন সূর্য জানিয়ে দেবে বাংলা নতুন বছরে নতুন দিনের কথা। গত বছরে আমাদের প্রাপ্তির বহর অনেক। অর্ধশতাব্দী উত্তীর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো অর্জনও জমা হয়েছে আমাদের ঝুলিতে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ অর্জনের অন্যতম স্বারক। তারপর পথ খুলেছে স্বপ্নের মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী নদীর তলদেশে কর্ণফুলী টানেল; যা আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার অন্যতম স্মারক হিসেবে চিহ্নিত।

উৎসব-পার্বণে মানুষ চায় প্রিয়জনের সান্নিধ্য। স্বাভাবিকভাবেই উৎসব ঘিরে মানুষের আবেগ বেশি। কর্মক্লান্ত মানুষ ঘরে ফিরতে চায়। কিন্তু সেই যাত্রাপথ সুখকর হওয়ার অভিজ্ঞতা কম। একদিকে টিকিট প্রাপ্তির বিড়ম্বনা, বাড়তি দাম আর এর সঙ্গে যুক্ত হয় পথের বাড়তি দুর্ভোগ। পথে প্রয়োজনীয় যানবাহনের যেমন সংকট থাকে, আবার স্বল্প পাল্লার অতিরিক্ত গাড়ির দাপটে সড়ক-মহাসড়কজুড়ে তৈরি হয় নৈরাজ্যকর অবস্থা। অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরুর ঘোষণা মাত্র ভোজবাজির মতো মিলিয়ে যায় সকল টিকিট। বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের হারিয়ে যাওয়া নানা প্রশ্ন দাঁড় করায়। আমরা বরাবরই মানুষের টিকিটপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা প্রত্যাশা করি। তেমনি প্রত্যাশা করিÑ কেউ যেন সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে। ঈদযাত্রায় প্রতিবারই দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ার চিত্র দেখা যায়। ঈদে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নানা উদ্যোগের কথা সংবাদমাধ্যমের কল্যাণেই জানা যায়। এসব উদ্যোগ যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন পথে নামতে না পারে, চালকদের যেন যথাযথ বিশ্রামের সুযোগ থাকে, অদক্ষ কেউ যেন চালকের আসনে বসতে না পারেÑ আমরা এদিকগুলোতে সতর্ক নজরের তাগিদ দেই। ধারণক্ষমতার চেয়ে কেউই যেন অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই করে গন্তব্যে রওনা করতে না পারে; সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার জন্য বলি। সেই সঙ্গে সড়ক ও নৌপথে দুর্ঘটনা রোধে প্রচার এবং সতর্কতামূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি রেলওয়ের শিডিউল যেন ভেঙে না পড়ে সেদিকেও নজর দিতে হবে। ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং ফেরার পথে সতর্কতার বিকল্প নেই।

ঈদে বাস-ট্রেন-লঞ্চ যাত্রায় মানুষ যেন ভোগান্তি না পোহায়, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। ঈদ ও নববর্ষ উদযাপন শেষে মানুষ যেন নিরাপদে আবার কর্মস্থলে ফিরতে পারে, ঘরমুখী এবং উৎসব শেষে কর্মস্থলমুখী মানুষকে যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, যানজটে নাকাল হতে না হয়Ñ সেদিকটি নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথাÑ এবার অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেওয়ায় শুরু থেকেই ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমেছে। উত্তরবঙ্গের মহাসড়কে কয়েকটি ওভারপাস এবং আন্ডারপাসসহ দেশের নানা স্থানে সড়ক সংস্কার এবং নতুন সেতুর কল্যাণে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হয়েছে। যানজট নিরসনে এবার এসব স্থানে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বয়ে কাজ করার কথাও জানানো হয়েছে।

ঈদ ও নববর্ষের দীর্ঘ ছুটিতে নতুন শঙ্কা নিয়ে হাজির হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ের অস্থিতিশীলতা এবং রামপালের মতো অতি সংবেদনশীল স্থাপনায় দুর্বৃত্ত হামলা। নানা মাধ্যম থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটিতেও ফাঁকা রাজধানী েবং জননিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশ্ন রয়েছে। আমরা যখন ঈদুল ফিতর এবং নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন ফিলিস্তিনের ওপর চলছে বর্বরোচিত হামলা। ইতিহাসের জঘন্যতম ও অন্যায় এ হামলার মাধ্যমে মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠস্বরই শুধু ‍রুদ্ধ করা হয়নি, বরং বিশ্ববিব্কেকে কাঁদিয়ে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। ঈদুল ফিতরের আনন্দ মুক্তিকামী ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে আনন্দের বার্তা বয়ে আনুক, সে লক্ষ্যে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হোকÑ এও আমাদের প্রত্যাশা। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাজছে যুদ্ধের দামামা। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বোঝা বহন করতে হচ্ছে আমাদের। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা যেমন বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা, তেমনি প্রত্যাশা দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে সরকার এবং বিশ্ব সম্প্রদায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।

শুধু মহাবিশ্বের কাছেই নয়, একটি বছর ফুরিয়ে যাওয়ার তাৎপর্য রয়ে যায় ব্যক্তির জীবনেও। নববর্ষকে তাই শুধু স্বাগত জানানোই নয়, আমরা হৃদয়েও ধারণ করি। মূল্যুস্ফীতির কঠিন কষাঘাতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পথে বড় অন্তরায় হয়ে আছে। তবুও প্রত্যাশা, কল্যাণ ও সাম্যের আলোয় আলোকিত হবে সমাজ। আমরা প্রত্যাশা করি, নতুনের আহ্বানে নতুন আশা ও স্বপ্ন বুকে ধারণ করে হানাহানি ও হিংসা ভুলে পরস্পরের মঙ্গল কামনার সঙ্গে দেশ গঠনে অংশ নেব। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা বিশ্বে শান্তি আসুক। বিশ্বজুড়ে বন্ধ হোক যুদ্ধের দামামা। সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে অবারিত হয়ে উঠুক শান্তি ও সুযোগের দ্বার। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম সংবাদমাধ্যমে থাকছে টানা ছয় দিনের ছুটি। লম্বা একটি সময় পাঠক বঞ্চিত হবেন ছাপা কাগজের আনন্দ থেকে। তবে আমাদের অনলাইন সংস্করণ পাঠকের সর্বক্ষণ সঙ্গী হবে। ঈদ ও নববর্ষে আমাদের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকার ভাই এবং শুভানুধ্যায়ীদের জানাই শুভেচ্ছা।

 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা