সীমানা পেরিয়ে
ইয়োসি মেকেলবার্গ
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৩১ এএম
ইসরায়েল এখনও লেবানন ও সিরিয়ায় বিমানযোগে হামলা চালাচ্ছে, এ ঘটনায়
অবাক হওয়ার কিছু নেই। কয়েক বছর ধরেই ইসরায়েল এমন ‘যুদ্ধবর্তীকালীন ক্যাম্পেইন’ পরিচালনা
করছে। মূলত এই অঞ্চলে ইরানের তৎপরতা ও আঞ্চলিক শক্তি বৃদ্ধি রোধ করতেই তারা এমনটি করে।
অধিকাংশ অভিযান মূলত ইরান কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে দেশটির প্রক্সি অঞ্চল বিশেষত লেবানিজ
হিজবুল্লাহকে দমনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। এক যুগ ধরে এমনটিই হয়ে আসছে। কিন্তু ১ এপ্রিল
সিরিয়ার কুদস ফোর্সের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পসের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ
রেজা জাহেদি নিহত হওয়ার পর সন্দেহের তীর ইসরায়েলের দিকে নিপতিত হয়। লেবানন ও সিরিয়ায়
এমন এক হামলা ক্রমেই নাজুক হয়ে ওঠা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ভঙ্গুর করে তুলছে। ১ এপ্রিলের
এই হামলার পর তেহরান প্রশাসন শিগগিরই তৎপর হয়ে ওঠে। এ ঘটনার পর ইরান-ইসরায়েল সংঘাত
সৃষ্টির পথ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিগত কয়েক মাস ইসরায়েল ‘যুদ্ধবর্তীকালীন ক্যাম্পেইন’
পরিচালনা করছে ইরান এবং তাদের প্রক্সি সহযোগীদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে। এটি ইসরায়েলের
এক ধরনের আত্মরক্ষামূলক কৌশল। কিন্তু গত ছয় মাসে এই অঞ্চলের পরিস্থিতি নানা বাঁকবদলের
মাধ্যমে ভিন্নরূপ নিয়েছে। কৌশলগত ত্রুটি যেকোনো সময় ভয়াবহ কোনো যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়াতে
পারে।
সংগত কারণেই ধারণা করা যায়, কোনো পক্ষই দুই অঞ্চলের মধ্যে উত্তাপ
ছড়াতে চায় না। কিন্তু তাদের নিজস্ব সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে গোটা মধ্যপ্রাচ্যই যুদ্ধে
জড়িয়ে পড়তে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েল ইরানের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার
জন্যই নানা পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। তেহরান প্রশাসনকে সরাসরি খুঁচিয়ে তারা হিজবুল্লাহকে
ক্ষুব্ধ করতে চায়। যদি তা করা সম্ভব হয় তাহলে ইসরায়েল হিজবুল্লাহকে দমনের সুযোগ পাবে।
গাজায় হামাসের তুলনায় হিজবুল্লাহকে ইসরায়েলের অনেক সামরিক কর্মকর্তা বড় ঝুঁকি হিসেবে
মানেন। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ প্রক্রিয়া দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় লেবাননের সঙ্গে
যুদ্ধ শুরু হলে তার অবস্থা কেমন হবে। দামেস্ক ইরানের প্রশাসনিক ভবনে ইসরায়েলের হামলা
সরাসরি দেশটির সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করে। শুধু তাই নয়, কাশেম সোলাইমানির পর জাহেদিই
ইরানের সর্বোচ্চ পদধারী সামরিক কর্তা, যিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলার পর ইরানের নেতা
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই অশুভ জিওনিস্ট
অঞ্চল আমাদের বীর সেনাদের হাতে কঠোর শাস্তি ভোগ করবে। এই অপরাধ এবং তাদের চলমান সব
অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত তাদের করতেই হবে।’ অন্যদিকে ওয়াশিংটন প্রশাসন ইসরায়েলি সামরিক
অভিযান থেকে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা
অ্যাক্সিওস ইরানকে জানিয়েছে, ‘ইসরায়েলের এই আক্রমণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো
পূর্বধারণা ছিল না।’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান বলে দেয় তারা বোঝাতে চাচ্ছে
ইসরায়েল অনেকাংশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের পরবর্তী যেকোনো কার্যক্রমই বাইডেন প্রশাসনকে
ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে। নেতানিয়াহু প্রশাসনের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণও ক্রমেই হারিয়ে
যেতে বসেছে যেন।
দামেস্কে এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল যেন আরেকটি বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে
চাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশটি গাজার সঙ্গে ভয়াবহ এক যুদ্ধে লিপ্ত। ছয় মাসের ব্যবধানে ইসরায়েল
তার বৈশ্বিক সমর্থনও হারিয়ে ফেলছে। ইসরায়েল এই যুদ্ধ করছে কোনো সঠিক পরিণতির কথা না
ভেবেই। আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসরায়েলের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য নেতানিয়াহু কিছুটা হলেও
অজুহাত খুঁজে পাবেন। ইরান সরাসরি হামাস ও হিজবুল্লাহকে সমর্থন করে। ইসরায়েলের জন্য
তা ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটির পক্ষে এই ঝুঁকি নির্মূল করা সম্ভব হবে না। গাজায় যুদ্ধের মাধ্যমে
এ কথাও প্রমাণিত হয়েছে হামাসকে তাদের বর্তমান সামরিক সক্ষমতা দিয়ে নির্মূল করা সম্ভব
নয়। ইরানের সঙ্গে সংঘাত জিইয়ে রেখে সমাধান সম্ভব নয়। বরং ইসরায়েলকে কূটনৈতিক পর্যায়ে
সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির সহযোগিতায় সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক
গড়ার বিষয়ে এগোতে হবে। ইরানকে আঘাত করে অপমান করার মাধ্যমে ইসরায়েল সামান্য সময়ের আত্মতুষ্টি
পেলেও দীর্ঘকালে তা ভয়ংকর কিছুর আভাসই দেয়।