× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

লোডশেডিংয়ে যেন ম্লান না হয় ঈদ উৎসব

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১১:০১ এএম

লোডশেডিংয়ে যেন ম্লান না হয় ঈদ উৎসব

চৈত্রের দাবদাহে এমনিতেই জনজীবনে চলছে হাঁসফাঁস। এর মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও কতটা নাজুক করে তুলেছে ৬ এপ্রিল প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। গরমে জীবনযাপনে যখন বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক, তখন লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত করছে, তেমন উৎপাদনব্যবস্থায়ও এর অভিঘাত লেগেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি অধিকতর খারাপ। তা ছাড়া রমজানে ইফতার ও সেহরির সময় লোডশেডিং মেনে নেওয়ার মতো নয়। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আগেই বলা হয়েছিল, রমজানে তারাবি-সেহরিতে লোডশেডিং থাকবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো, এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাতে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে তা অসঙ্গত নয়।

দুই দিন আগে প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ভিন্ন এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে দেশের পাঁচ বিভাগে তাপমাত্রা বেশি ছিল। আবহাওয়াবিদের বক্তব্য, চলমান তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে। আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। প্রচণ্ড গরমে শুধু মানুষই হাঁসফাঁস করছে না, প্রাণিকুলমাত্রেই বিপর্যস্ত। ঘরে-বাইরে কোথাও শান্তি নেই। অস্বস্তি লাগছে বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসেও। তাপপ্রবাহের কারণে বোরো ধান চাষেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সেচনির্ভর বোরো ধান উৎপাদন ও কর্তন পর্যন্ত দুই স্তরে ঝুঁকি থাকে। প্রথমত, যথাযথ সেচ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা থাকে, যা এবার ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ঝুঁকি থাকে ধান কাটার মৌসুমে বৈশাখী ঝড়ের। এপ্রিলের শুরুতেই লোডশেডিং আরও প্রকট হয়ে ওঠে এবং তা অব্যাহত আছে। ঈদুল ফিতর আসন্ন। ঘরমুখী হচ্ছে মানুষ ঈদের আনন্দ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে। কিন্তু প্রত্যাশিত আনন্দ লোডশেডিং ম্লান করে দেয় কি না এ শঙ্কাও আছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় দিনরাতের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না তা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরাও। তাদের ভাষ্য, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় দেশবাসীকে এ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, গরমের কারণে বাড়ছে রোগব্যাধি এবং এর ফলে শিশু ও বয়সিদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। এ অবস্থায় লোডশেডিংয়ের বিরূপ প্রভাব আরও সংকট সৃষ্টি করেছে। গত জানুয়ারিতে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, এ বছর গরমে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারে বলে ধারণা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে ২৫ হাজার ৪৯১ মেগাওয়াট। কিন্তু সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে। সরকার বিদ্যুতের অবকাঠামো বাড়িয়েছে, শতভাগ ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের প্রাথমিক উৎস গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের সংস্থান প্রয়োজনের নিরিখে করতে পারেনি, বিদ্যমান বাস্তবতা তা-ই বলে।

আমরা জানি, অতীতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল, সরকার লাভও করেছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেলেও এখন কমতির দিকে। এলএনজির দামও কমেছে। কিন্তু তা আমদানির ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ডলার সংকট। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল অনেকে এও বলেছেন, লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ কষ্টে আছে তবে এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। কিন্তু কী উপায়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে তার কোনো রূপরেখা দেওয়া হয়নি? লোডশেডিংয়ের নিরসন অর্থাৎ বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতেই হবে। সরকারি মহলের কেউ কেউ এও বলেছেন, গরম কমলে কিংবা বৃষ্টি হলে বিদ্যুতের চাহিদা কমবে। এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন হচ্ছে, জ্বালানি খাতে এত বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেও যদি প্রকৃতির খেয়ালের ওপরই নির্ভর করতে হয় তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কী হতে পারে। আমরা আগেও বলেছি, ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার রীতি পরিহার করতে হবে। সঞ্চালন লাইন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহ যদি ঠিক রাখা না যায় তাহলে খুঁটির পর খুঁটিতে তার টেনে লাভ কী? মানুষ দিনে-রাতে দু-তিন ঘণ্টা লোডশেডিং হয়তো সহ্য করতে পারে কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুদ্বিহীন বর্তমান জমানায় অচিন্তনীয়। আমরা জানি, উন্নয়ন-অগ্রগতির বড় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ।

চলমান প্রচণ্ড দাবদাহে জনজীবন ও শিল্পকারখানা লোডশেডিংয়ের অভিঘাত থেকে মুক্ত করতেই হবে। আসন্ন ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপনের ক্ষেত্রে লোডশেডিং যাতে বিরূপ অভিঘাত না ফেলে এজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমরা মনে করি, অপচয়ের পাশাপাশি চুরি ঠেকাতে পারলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় সম্ভব এবং এ থেকে লোডশেডিংয়ের অভিঘাত কিছুটা হলেও মোকাবিলা করা যাবে। আমরা জানি, বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট অসাধু দায়িত্বশীলরা আখের গোছাতে বিদ্যুৎ নিয়ে নয়ছয় কম করেন না, এ-ও অজানা নয়। আমরা মনে করি, আমদানিনির্ভর জ্বালানিনীতি পরিহার করে মাটির নিচের গ্যাসসম্পদ আহরণের মাধ্যমে এ খাত স্বাবলম্বী করতে কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই। এ প্রেক্ষাপটে বাপেক্সকে শক্তিশালী করার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক কারণেই অনিবার্য হয়ে ওঠে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে যে দুর্নীতি ও অপচয় হচ্ছে এ ব্যাপারে সরকার অবগত থাকলেও যথাযথ প্রতিবিধান নিশ্চিত করতে পারেনি বিধায় দেশবাসীকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে। আমরা এ-ও জানি, বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লসের নামে শত শত কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এর জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির বিরল। সহনীয় মাত্রায় লোডশেডিংয়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও মনে হয় না। আমরা বলব, অলীক আশ্বাস না দিয়ে জনদুর্ভোগ ও অর্থনীতির ক্ষতি কমিয়ে আনতে কাজের কাজ হোক। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব আছে আমরা তা মনে করি না। কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল যাদের এসব দেখভালের কথা তারা কতজন স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠ, এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সভ্যজগতের অপরিহার্য অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ ছাড়া স্বস্তিতে থাকার কথা কল্পনাও করা যায় না। বিশ্বের প্রায় সব দেশই বিদ্যুতের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। দেশে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সরকারের সাফল্যের নিরিখে সবার চাহিদামতো বিদ্যুত প্রাপ্তির বিষয় নিশ্চিত করা সরকারেরই গুরুদায়িত্ব। মানুষ যাতে চলমান রমজান এবং ঈদ স্বস্তির সঙ্গে উদ্‌যাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করার তাগিদ আমরা দিই। ভুক্তভোগীরা সমস্যার সমাধান চান, কোনো অজুহাত তাদের কাছে প্রত্যাশিত নয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা