× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বন্য প্রাণী পাচার

আইন অমান্যের পরও নেই প্রতিবিধান

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫১ এএম

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র

বন্য প্রাণী পাচার বলতে সংরক্ষিত উদ্ভিদ প্রাণী প্রজাতির অবৈধ ব্যবসা বোঝায়। এ অবৈধ ব্যবসা অনেক কিছু নিয়েই হতে পারে। এটা খাবার, চামড়া, কাঠ পাচারও হতে পারে। অনেক বন্য প্রাণী পাচার হয় যা হয়তো বিপদসংকুল প্রজাতি নয়। কিন্তু বন্য প্রাণী পাচারের কারণেই অনেক এলাকা এখন বিপদসংকুল। অপ্রতুল জীববৈচিত্র্য আর বন্য প্রাণী পাচারের কারণে লাতিন আমেরিকা এখন বিপদসংকুল। ব্রাজিলের একটি সংস্থার মতে, প্রতি বছর ১২ মিলিয়ন বন্য প্রাণী পাচার হয় সে দেশে। পৃথিবীর অধিকাংশ বন হারিয়ে গেছে কাঠের জন্য কৃষিবন করে। এ ছাড়া প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫১ থেকে ১৫২ বিলিয়ন ডলার অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের কারণে ধ্বংস হচ্ছে। অবৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের কবলে পড়ে অনেক দেশের বন হারিয়ে যেতে বসেছে। গত ২৫ বছরে ঘানায় ৮০ ভাগ প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০১১ সালের তুলনায় কম্বোডিয়ায় প্রায় ৬৪ ভাগ বন নেই হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে ৬০ ভাগের বেশি বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে অবৈধ বন্য প্রাণী ব্যবসার কারণে। প্রতি বছর ১০০ মিলিয়ন উদ্ভিদ ও প্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ ব্যবসার কবলে পড়ছে। মূলত পোষ মানা, ওষুধ ও খাদ্যের কাজে বন্য প্রাণী ব্যবহারের জন্য এসব বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি বছর ৪ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের অবৈধ ব্যবসা হচ্ছে। অবৈধ বন্য প্রাণীর ব্যবসা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এর ফলে দূষণ, বন কাটা ও অন্যান্য আবাসভূমির ধ্বংস শুরু হচ্ছে। এটা স্থানীয় অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।


আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা এখন অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে গন্ডার শনাক্ত ও হত্যা করছে। অধিকাংশ জেলে হাঙরের পাখনা সংগ্রহ করতে চায়। কারণ এটা অত্যন্ত মূল্যবান। অনেকে একে সৌভাগ্যের প্রতীক ভেবে চড়া দামে কেনে। হাজার হাজার বছর ধরে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে হাঙর অন্যতম প্রধান উপাদান। পুষ্টি সরবরাহ ও কার্বন শোষণের মাধ্যমে এরা বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে হাঙর আর বাস্তুতন্ত্র দুটিই হুমকির মুখে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১০০ মিলিয়ন হাঙর প্রতি বছর হত্যা করা হয়। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হাঙর প্রজাতি হুমকির মুখে এবং বেশ কিছু হাঙর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। হাঙরের হারিয়ে যাওয়া সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। হাঙরের মতো এ রকম অর্থনৈতিক মূল্যবান মাছের সংখ্যা কমে যাওয়া বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় বিমান চলাচল রুটে সতর্ক থাকতে হবে। বন্য প্রাণী পাচারে বিমান রুট ব্যবহার করা হয়।

এসব অবৈধ বন্য প্রাণী ব্যবসা বন্ধে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে। এর মধ্যে বিখ্যাত একটি মামলা হচ্ছে ২০১৬ সালে ভার্জিনিয়ায় লুম্বার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা। ওই কোম্পানিকে তখন ১৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছিল। একটি তথ্যমতে, বাংলাদেশের আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, চুনতি এসব এলাকার গভীর বন থেকে পাচারকারীরা প্রাণী সংগ্রহ করে। তারপর সাতক্ষীরা ও চকরিয়া পথে পাচার করে। ২০২১-২২ বছরে মোট ৪২৫টি বন্য প্রাণী পাচার হয়েছে চট্টগ্রামে। ক্রমে বন্য প্রাণী পাচারের বড় রুট হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম। বান্দরবান ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ধরা বন্য প্রাণী চট্টগ্রাম রুটে পাচারের পথে আটকও করা হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট ১৬ হাজার বন্য প্রাণী মুক্ত করেছে। সংস্থাটি এ অবৈধ ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করেছে। অবৈধভাবে বন্য প্রাণী ধরার জন্য মোট ৩৮ ব্যক্তিকে এ সময় পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। অবৈধ বন্য প্রাণী ব্যবসা বিশেষ করে বাঘ, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি মূল্যবান প্রাণী বিক্রি হয়।

ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির মতে, বছরে ৪.২ থেকে ৯.৫ বিলিয়ন মূল্যের বাণিজ্য হয় অনিয়ন্ত্রিত অবৈধ মাছ ব্যবসার মাধ্যমে। অবৈধ বন্য প্রাণী নিয়ে ব্যবসা হয় বছরে ৭.৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার আর অবৈধ কাঠ ব্যবসা হয় বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার। নানা কারণে এ অবৈধ বন্য প্রাণী পাচার বেড়েই চলেছে। বন্য প্রাণীর মাংস বিক্রি, ওষুধের কাজ, অলংকার তৈরি, পোষ মানাতে বন্য প্রাণীর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বন্য প্রানীর এ অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে জাতিসংঘের সংগঠন কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এন্ডেনজারড্‌ স্পেসিস অব ওয়াইল্ড ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা। এখন এর ১৭০টি সদস্য। এর মাধ্যমে বন্য প্রাণী, মাছ ও উদ্ভিদ রক্ষা করা হয়। বন্য প্রাণীর ব্যবহার বন্ধে আইন প্রথম দিকে শুধু বন্য প্রাণীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতো। পরে কাষ্ঠল উদ্ভিদসহ ওষুধের কাজে ব্যবহৃত উদ্ভিদও এর আওতায় আনা হয়।

বাংলাদেশেও বন্য প্রাণীর অবৈধ ব্যবসার মূল কারণ বন্য প্রাণীর মাংস বিক্রি। হরিণের মাংস বিক্রির খবর প্রায়ই পত্রিকায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট সক্রিয় থাকলেও সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারে অপারগ। বাঘ ও কুমিরের শরীরের নানা অংশ অবৈধভাবে ব্যবসা হয়। পত্রিকার খবর দেখে বোঝা যায় নানা দুর্বলতার সুযোগে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে পাচার ঘটছে। বাংলাদেশে বন্য প্রাণী ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও ২০১২ সাল থেকে বন্য প্রাণী ধরা-মারা নিষেধ। তার পরও বন্য প্রাণী হত্যার রেওয়াজটা এখনও আছে। বন্য প্রাণীর অবৈধ ব্যবসা অনেক প্রজাতির জন্যই হুমকিস্বরূপ। এসব বন্ধে বন্য প্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে ২০১২ সাল থেকে বন্য প্রাণী আইন কার্যকর। এ আইন অনুযায়ী বাঘ বা হাতি হত্যা বা বিক্রির সাজা, জামিন ও জরিমানা রয়েছে। হাতি বা বাঘের কোনো অংশ পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল অথবা ৩ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে। ২০১৯ সালে ঢাকায় বিমানবন্দর দিয়ে কচ্ছপ পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে পাচারকারী। সঙ্গে সোনাও পাওয়া যায়। সে সময় এটা সংবাদপত্রে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল।

বন্য প্রাণী পাচার বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সমস্যা। বন্য প্রাণী ধরা-মারা নিষিদ্ধ হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা নিয়ে তেমন কথা বলেন না। তবে সংবাদ ও সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে কথা হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বন্য প্রাণী ধরা-মারা-পাচারের বিরুদ্ধে একমত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুফল কেন মিলছে না এর অনুসন্ধান জরুরি। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকেও আরও এগিয়ে আসতে হবে। বন্য প্রাণী হত্যাও যে ঘৃণ্য অপরাধ- এ চেতনা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই পাচার বন্ধ হবে।

  • শিক্ষক ও গবেষক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা