দিবস
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৭ এএম
১৯৪৮ সালের ৭
এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার দুই মাস পর ২৪ জুন এ সংস্থার
প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জেনেভায়। ওই সময় বিশ্বের ৪৬ সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধি উপস্থিত
ছিলেন। ওই সম্মেলনেই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসচেতনতা তৈরিতে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে
প্রতি বছর নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য
দিবসের মূল প্রতিপাদ্যÑ‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’। সারা বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতের
উন্নতির জন্য নানাভাবে সংগ্রাম করছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও দেশের অধিকাংশ
মানুষ স্বাস্থ্য খাতের সব সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভেজাল ও বিষাক্ত পদার্থ মিশ্রিত
খাদ্যের কারণে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিরোধমূলক
ব্যবস্থার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়া, চিকিৎসাব্যবস্থায় মারাত্মক দুর্বলতা এবং অপ্রতুল
চিকিৎসাসুবিধার কারণে মানুষ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।
প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক
কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমেই সবার জন্য সর্বত্র সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা
সম্ভব। শুধু প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। প্রতিরোধমূলক
ব্যবস্থা হিসেবে নিরাপদ ও পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য, সুস্থ পরিবেশ, দূষণমুক্ত পানি ও
বায়ু, মাদক ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাঠ, পার্ক, জলাধার, হাঁটার পথ ব্যবহার উপযোগিতার
নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আধুনিক যন্ত্রপাতিসংবলিত প্রয়োজনীয়সংখ্যক
হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন, চিকিৎসক, সেবিকা, প্যারামেডিক্স ও অন্য সহযোগী
নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসম্মত দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। এ ছাড়া
মানুষকে সচেতন করতে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নীতিমালা ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
রয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালা ও আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসব রোগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সুযোগের অভাব, বৃহত্তর লিঙ্গবৈষম্য, নিরাপদ পরিবেশ,
বিশুদ্ধ পানি, নির্মল বায়ু ও নিরাপদ খাদ্যসংকট এবং সংকটাপন্ন স্বাস্থ্যপরিষেবা।
মানুষের অস্বাস্থ্যকর
অভ্যাস এবং আচরণ থেকে মুক্তি পাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করা এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনের
দিকে এগোনো উচিত। নিজ স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষ ও আত্মীয়স্বজনরাও
যেন তাদের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হয় সেদিকে লক্ষ রাখা জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা
এবং আপনার চারপাশে সবার সুস্থতা নিশ্চিত করাই স্বাস্থ্য দিবসের লক্ষ্য। এ দিনটি বাদেও
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও আটটি দিবস/সপ্তাহ পালন করে। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রচারমূলক
আয়োজনের অন্যতম হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। বাকি সাতটি দিবস হলোÑবিশ্ব যক্ষ্মা দিবস,
বিশ্ব রোগ প্রতিরোধ সপ্তাহ, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, বিশ্ব তামাকবিরোধী দিবস, বিশ্ব
রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ও বিশ্ব এইডস দিবস।
স্বাস্থ্যসংক্রান্ত
সমস্যা ও উদ্বেগগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এটি একটি বার্ষিক
ইভেন্ট হিসেবে পালিত হয়, একটি নির্দিষ্ট থিম নির্বাচিত করা হয় বছরব্যাপী স্বাস্থ্যকার্যক্রম
চালানোর জন্য। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে অবশ্যই আমরা সক্ষম হব এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা
আরও শক্তিশালী করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে- এই হোক প্রত্যাশা।