× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস

নারী ফুটবলে বাংলাদেশের ক্রমবিকাশ

ইকরামউজ্জমান

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০৪ পিএম

ইকরামউজ্জমান

ইকরামউজ্জমান

আজ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস। উন্নয়ন ও শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস পালনের সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন, সম্প্রদায়ের বিকাশ এবং শান্তি ও সহযোগীতা বৃদ্ধিতে খেলাধূলার চর্চার বিষয়গুলো মুখ্যত প্রাধান্য পায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রস্তাবে সায় দিয়ে ৬ এপ্রিল দিনটিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমান বিশ্বে ক্রীড়ার বহুমাত্রিকতা ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে এবং বিশ্বের অনেক দেশেই বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে নিজ নিজ দেশের অবস্থান নির্ণয় করেছে কোনো কোনো ক্রীড়াকে উপজীব্য করে। আমাদের বিকাশ ইতোমধ্যে কম হয়নি। বিশেষ করে ক্রিকেট এবং নারী ফুটবলার ও ক্রিকেটাররা বাংলাদেশকে ক্রীড়ার জগতে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আজ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবসে বাংলাদেশের নারী ফুটবল নিয়ে এই পর্যালোচনা আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের ক্রমবিকাশের একটি খন্ডিত রূপ মাত্র।


ভারত বাংলাদেশে নারী ফুটবলের জন্মলগ্ন থেকে তার ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা, বিতর্ক, কুসংস্কার, কুৎসা, পারিবারিক বিরোধিতাÑ সর্বোপরি পদে পদে সামাজিক প্রতিকূল অনুশাসনের বিপক্ষে লড়ে নারী ফুটবলাররা মাঠে এসেছেন। আবার একপর্যায়ে এলাকার মেয়ে দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গন থেকে যখন সাফল্য নিশ্চিত করেছেনÑ তখন মনমানসিকতা এবং চিন্তাভাবনা পাল্টে গেছে। প্রথম থেকেই উভয় দেশের ফুটবলে মেয়েরা এসেছেন শহর থেকে, অনেক দূরের জনপদ থেকে। তারা অধিকাংশই অসচ্ছল পরিবারেরÑ যারা দুবেলা পেটভরে খাওয়া পান না, ভোগেন অপুষ্টিতে। মেয়েদের ফুটবলের এক্সপোজার প্রথম থেকে শহরে খুব কম। শহরের মেয়েরা রাত জেগে আন্তর্জাতিক ফুটবল দেখেন। মাঠে নামার চেয়ে ফুটবল উপভোগ করাটা বেশি পছন্দ। প্রথম থেকেই ভারত বাংলাদেশে আর্থিকভাবে সচ্ছল সক্ষম সেসব শ্রেণি থেকে খেলোয়াড় নেই নারী ফুটবলে। দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা ছাড়াও উভয় দেশের ট্রাইবান এরিয়ার আদিবাসী সমাজ থেকে মেয়েরা এগিয়ে আসছে ফুটবলকে ভালোবেসে। প্রতিকূলতার বিপক্ষে যুদ্ধ করে যা সম্ভব করে দেখিয়ে দিয়েছে মেয়েরা খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব চেতনাটা কী ?

দক্ষিণ এশিয়ায় নারী ফুটবলে ভারতের একচেটিয়া প্রাধান্য এবং জয়জয়কার। কয়েক বছর ধরে বয়সভিত্তিক এবং নারী জাতীয় বাংলাদেশ দল ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ নারী জাতীয় দল দক্ষিণ এশিয়া নারী ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরপরও নারী ফুটবল ঘিরে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর ধারণা, অসচেতনতা তো সার্বিক সামাজিক সমস্যা। অনেকেই হয়তো জানেন না সেই সত্তর দশকের গোড়ায় ভারতে নারী ফুটবল শুরুর অগ্রদূত হলেন বাঙালি নারীরা। কালের চক্রে ভারতের বয়সভিত্তিক এবং জাতীয় দলে বাঙালি নারীদের প্রতিনিধিত্ব এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। দেশে নারী ফুটবলের সূচনালগ্ন থেকে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগের অভাব। আর্থিক অনুদান পরিকাঠামো পুরোপুরি অবহেলিত। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড়রা প্রমাণ করেছে দেশের ফুটবলে তাদেরপোটেনশিয়ালটি’ অনেক বেশি। বেশ কয়েক বছর আগেই ভারত নারী ফুটবলে স্ট্রাকচার স্ট্যাটিজিক রোডম্যাপ তৈরি করে কাজ শুরু করাতে যথেষ্ট ফল পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা হলো, নারী ফুটবলে অর্থের ভীষণ অভাব। ফুটবল ফেডারেশনকে ধন্যবাদ মাহফুজা কিরণের (একসময় ফিফা গভর্নিং বডিতে ছিলেন। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় গৌরবের বিষয়। কিরণ একমাত্র নারী ফুটবল সংগঠক যিনি এশিয়া থেকে ফিফার কার্যনির্বাহী পরিষদে ছিলেন।) নেতৃত্বে ওয়েমেনস উইং অনেক বেশি আন্তরিক সক্রিয়। তারা সব সময় কাজ করছে ভীষণ সীমাবদ্ধতার মধ্যে।

ফুটবল ফেডারেশন বছরের পর বছর আবাসিক ক্যাম্প পরিচালনা করাতে দেশের ফুটবলের ইতিহাসে আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ট্রফি জিতেছে নারী ফুটবলাররা। খেলায় সাহায্য-সহযোগিতা বড় ফ্যাক্টর। কোনো খেলায় যদি সাফল্য আসে নিয়মিতভাবে তাহলে স্বভাবতই সেই খেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ে। বাংলাদেশের নারীরা এত সাফল্য অর্জনের পরও তাদের নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উৎসাহ নেই। তারা নারী ফুটবলে বিনিয়োগ করতে চান না। এই মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি

ফুটবলে মেয়েরা আগ্রহী। কিন্তু তাদের পার্টিসিপেশনের সুযোগ নেই। ঘরোয়া ফুটবল বলতে যা বোঝায় সেটি ভীষণভাবে অবহেলিত নারী ফুটবলে। দেশজুড়ে বঙ্গমাতা প্রাথমিক নারী ফুটবল শুরু হয়েছে এক যুগের আগে। নারী ফুটবলে এটি আলোকবর্তিকা। এই ফুটবল শুরু হওয়াতে প্রতিবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাখ লাখ বালিকা ফুটবল খেলার সুযোগ পাচ্ছেন। ফুটবলে মেয়েদের উৎসাহ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। তৃণমূল পর্যায়ের এই প্রতিযোগিতা থেকে প্রতিবছরই নতুন নতুন প্রতিভার বিকাশ ঘটছে। রূঢ় বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক বছর ধরে শুরু করা হয়েছে নারী অনুর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্ট। তাতে প্রাথমিক স্কুল ফুটবল শেষ করার পর আবারও খেলার সুযোগ বেড়েছে। খেলায় ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে। সমস্যা যেটি সেটি হলোÑ ঘরোয়া ফুটবলকম্পিটিটিভ’ ফুটবল খেলার সুযোগ খুব কম নারী ফুটবলে। ঢাকার বাইরে তো নেইÑ খোদ ঢাকায় মহিলা লিগ নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয় না। দল নেই খেলা হবে কীভাবে। বড় বড় ক্লাব ফুটবল নিয়ে অনেক কথাই বলে কিন্তু তারা নারী ফুটবল দল গঠন করতে রাজি নয়। তাদের মতে, এটি হলো আর্থিকভাবে আরেকটি বোঝা। নারীরা নিয়মিতভাবে ঘরোয়া ফুটবলে খেলতে পারলে তারা তাদের ফুটবলকে উঁচু থেকে আরও উঁচুতে তুলে নিয়ে যেতে পারত। আসন্ন নারী লিগের ইতিবাচক দিক হলো, একটি সার্ভিসেস দল (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী) নারী লিগে অংশ নেবে। নারী ফুটবল পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সব সময় ধুঁকছে। বাফুফের নারী একাডেমির বাইরে দেশের কয়েকটি স্থানে নিজস্ব ব্যবস্থায় কিছু একাডেমি মেয়েদের ফুটবল নিয়ে কাজ করে বলেই মেয়েরা ফুটবলে আসছে। নারী ফুটবলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ভালো এবং উজ্জ্বল দেখতে হলেÑ সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা এবং নিয়মিত বড় অনুদান ছাড়া উপায় নেই।

পুরুষদের মতো নারী ফুটবলাররা দেশে দেশে প্রফেশনাল লিগ খেলছেন। নারী ফুটবল মাঠে গিয়ে উপভোগের গ্রাফ সব সমই ঊর্ধ্বমুখী। চলতি ফুটবল মৌসুমে বাংলাদেশের নারী ফুটবলার সাবিনা সানজিদা ভারতের প্রফেশনাল লিগে দুটি দলের হয়ে খেলেছেন। এটি অবশ্যই অনুপ্রেরণা দেশের নারী ফুটবলারদের জন্য। ইতিহাসে মহিলা ফুটবলের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় আঠারো শতকের গোড়ার দিকে ইউনাইটেড কিংডমে। সেখানকার অসংখ্য মেয়ে নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। ১৯৭০-৭১ সাল থেকেই সুশীল একটি শক্তিশালী মহিলা ফুটবল দল গড়ার জন্য বাংলার ময়দান থেকে তুলে আনেন বহু প্রতিভা। ১৯৭৫ সালে বোর্ড গঠনের পর প্রথম যে ভারতের মহিলা দলটি তৈরি হলো, তার দায়িত্বে থাকলেন সুশীল। সেই সময়ে ভারতের মহিলা দলের রাজ্যভিত্তিক খেলোয়াড়সংখ্যা দেখলে অবাক হতে হয়। কারণ সিংহভাগ খেলোয়াড়ই ছিল বাঙালি। এর পেছনে বাংলায় ফুটবলের সমৃদ্ধ ইতিহাসটি অস্বীকার করার জায়গা নেই।

জাতীয় ক্রীড়া পাক্ষিকক্রীড়াজগত’ বর্ষ ২৭, সংখ্যা ২৩, ১৬ জুন ২০০৪ সালে মরহুমা সালমা রফিক (পাক্ষিকের নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন) ‘স্মৃতিতে সাহেব আলী’ বিশেষ প্রতিবেদনে লিখেন২৭ বছর আগে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের মেয়েরা ফুটবলে তালিম গ্রহণ করে কোচ সাহেব আলীর কাছ থেকেই। তিনি প্রথম বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে হাতেখড়ি দেন। দেশে কিশোরী ফুটবলাররা ফুটবলে কিক করার দিনটি ছিল ৭৭ সালের ১০ আগস্ট। সাহেব আলী মহিলা ফুটবল প্রশিক্ষণ থেকে কোনো সম্মানী বা পারিশ্রমিক নেননি। তিনি উদ্যোক্তা আলেয়া ফেরদৌসীর সঙ্গে সঙ্গে চাইতেন মহিলা ফুটবল প্রচলন হোক। লবঙ্গলতিকা বঙ্গললনারা প্রমাণ করুক বাংলাদেশের মেয়েরা পিছিয়ে নেই। কিন্তু অর্থাভাবে মহিলা ফুটবল তখন এগোতে পারেনি।’ আমরা এর নিরসন চাই।

  • ক্রীড়া বিশ্লেষক। সাবেক সিনিয়র সহসভাপতিএআইপিএস এশিয়া
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা