× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

ইতিহাসের কিংবদন্তি

কাজী সালাহউদ্দীন

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১০ এএম

সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ। ছবি : সংগৃহীত

সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ। ছবি : সংগৃহীত

বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদের নাম, ব্যক্তিত্বের প্রভাব বিচারালয়ের চার দেয়ালের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রধান মানবতাবোধসম্পন্ন, আলোকিত মানুষ ছিলেন। দেশভাগের আগে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময়ও দাঙ্গা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ সংক্ষেপে পরিচিত ছিলেন এস এম মোরশেদ নামে। ১৯১১ সালের ১১ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সৈয়দ পরিবারে জন্ম। মা আফজালুন নেছা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ভাগনি। বাবা সৈয়দ আবদুস সালিক ছিলেন তৎকালীন বিসিএস (বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস)।

১৯২৬ সালে রাজশাহী বিভাগে সব ফলপ্রার্থীর মধ্যে মাহবুব মোরশেদ প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯৩০ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ অনার্স পাস করেন। পর্যায়ক্রমে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ, এলএলবি উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডন যান। সে সময় তিনিই ছিলেন একমাত্র ভারতীয় ছাত্র।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ওই বছরই ঢাকা হাইকোর্টে বিচারক হিসেবে শপথ নেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার বুদ্ধিমত্তা এবং প্রজ্ঞার পরিচয় সর্বজনবিদিত। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা যে ১৯৫৪ সালের ২১ দফারই সারসংক্ষেপ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঊনসত্তরে ছাত্রদের উত্থাপিত ১১ দফার প্রতিপাদ্য বিষয় যে একই সূত্রে গাঁথা ইতিহাস-বিশ্লেষকদের তা-ও দৃষ্টি এড়ায়নি। এসব দাবি প্রণয়ন, তার মেধা ও মননশীলতার কারণেই তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ও প্রিয়মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী কমিটি গঠনে তৎকালীন সরকারের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আহ্বায়কের ভূমিকা পালন করেছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। ১৯৬৮ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের হয়।

বিচারপতি মোরশেদ এর প্রতিবাদস্বরূপ প্রধান বিচারপতির পদ ত্যাগ করে সাধারণ মানুষের কাতারে নিজেকে শামিল করেন। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে তাঁর কৌঁসুলি হিসেবে প্রখ্যাত আইনবিদ স্যার উইলিয়ামস নিযুক্ত হন। স্যার উইলিয়ামসের সবচেয়ে নিকটতম সহচর ছিলেন বিচারপতি মোরশেদ। বিচারপতি মোরশেদ তার অসাধারণ পাণ্ডিত্য, প্রজ্ঞা, মেধার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারকে মূল্য দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতির পদ ত্যাগ করে তিনি একদিকে আইয়ুব খান তথা সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, পাশাপাশি দেশবাসীর সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লাভ করেছিলেন। বিশেষত যারা স্বাধীনতাকামী অর্থাৎ বাংলাদেশ নামে একটি দেশের স্বপ্ন বুকে ধারণ করেছিলেন। সেই ক্রান্তিকালে বিচারপতি মোরশেদ নির্ভীকতার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তার তুলনা বিরল।

সৈয়দ মাহবুব প্রায়ই শেকস্‌পিয়রকে উদ্ধৃত করে বলতেন, সিংহের মতো শক্তি থাকা ভালো কিন্তু সেই শক্তি দুর্বলের ওপর পতিত হলে তা হয় অত্যাচার। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে তার সুচিন্তিত মত ‘ওয়ান ম্যান ওয়ান ভোট’ পদ্ধতি আজ সর্বজনস্বীকৃত; যা সত্তরের নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ শুধু একটি নাম নয়, ইতিহাসের কিংবদন্তি, অবিস্মরণীয়। তার জীবনেতিহাস জানার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের উৎস সম্পর্কে জানতে পারবে। এই মহান মানুষটি ১৯৭৯ সালের ৩ এপ্রিল সুন্দর পৃথিবী থেকে চলে গেলেও আজও রয়েছেন মানুষের মনে শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়।

  • লেখক, কবি এবং সচিব, মোরশেদ স্মৃতি সংসদ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা