× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ফিলিস্তিন সংকট

গাজার পতন মানে ফিলিস্তিনের পতন

মুহাম্মদ মুর্তজা

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৩ এএম

মুহাম্মদ মুর্তজা

মুহাম্মদ মুর্তজা

ইসরায়েলি আগ্রাসনের মুখে গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক হয়ে পড়েছে। ১৯৪৮ সালে নাকবার সময়ের তুলনায় এবারের যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বেশি। নাকবার সময় ফিলিস্তিনিরা একত্র হতে পেরেছিল। কিন্তু আজ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ফিলিস্তিনিরা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। গাজার পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বাস্তব চিত্র দেখে অনেক ফিলিস্তিনি ক্ষুব্ধ, হতবিহ্বল। কিন্তু বিদ্যমান সংকট নিরসনে তাদের আরও অনেক কিছু করার রয়েছে বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে তারা আরও উদ্যোগী হয়ে উঠতে পারত। গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ চিরতরে সমাপ্তি ঘটিয়ে গাজার সামাজিক ও অবকাঠামোগত সংস্কার করলেই সমস্যা মিটে যাবে এমন নয়। বরং ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা ঘোচানোর পরিকল্পনার বিষয়ে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

চলমান যুদ্ধাবস্থার আগের কথা একবার ভেবে দেখা যাক। কেউ বলেছি নাকবা শেষ হয়ে গেছে। ইসরায়েল ক্রমেই জাতিগত নিধনের যে অশুভ অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছিল তার পরিসর অনেক দূর বিস্তৃত। পশ্চিম তীরে অবৈধভাবে ভূমিদখল, বাড়িঘর ধ্বংস, জোর করে গ্রেপ্তার, সেটলারদের উচ্ছৃঙ্খলতা এবং সামরিক অভিযানের ফলে স্বাভাবিক জীবন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এসব অপরাধ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও বেড়েছে। ঐতিহাসিকভাবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন অংশের স্ট্যাটাস হিসেবে গাজার গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এ স্থিতাবস্থা থেকে ক্রমেই যেন সবাই সরতে শুরু করেছে। ইসরায়েলের নেতা গাজার ‘সলিলসমাধি’ ঘটাবেন- এমন বার্তা থেকে তা-ই যেন স্পষ্ট হয়। বিশেষত ফিলিস্তিনের কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতার ওই পঙ্‌ক্তি ‘গাজাই একমাত্র স্থান যা শত্রুপক্ষকে নিশ্চিন্তভাব হটিয়ে দিতে পারঙ্গম’।


পশ্চিম তীরের তুলনায় গাজার অধিবাসীরা জাতিগত নিধনের ক্ষেত্রে প্রতিবাদী বেশি। গাজার অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং ইসরায়েলি অপ্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানকারী অস্তিত্বের কারণে এ জায়গার দখল নেওয়া সহজ নয়। অন্তত এত দিন তা-ই ভাবা হচ্ছিল। অবশেষে বিদায়ি বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি নীতিনির্ধারকরা গাজা পুরোপুরি ধ্বংস করার সুযোগ পান। ইতোমধ্যে গাজার ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষকে ইসরায়েল বাস্তুচ্যুত করেছে। গাজার অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন পুরোপুরি ধ্বংসের মুখে। গাজার উত্তরাংশে শিশুরা খাদ্যের অভাবে দুর্দশাগ্রস্ত জীবন যাপন করছে। ইসরায়েল ঘন ঘন ভূখণ্ডটিতে বোমা বর্ষণ করছে। ফিলিস্তিনিদের অনেকে ধ্বংসস্তূপের মাঝে নিজের জীবন পুনর্গঠনের কাজে লিপ্ত হতে চায়। ইসরায়েলিরা তাতেও যেন নারাজ। গাজার মানুষ ঘাস এমনকি পশুর জাবনা খেয়ে দিনাতিপাত করছে। প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ রাফাহ সীমান্তে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। গাজায় ফিলিস্তিনিরা নিঃসঙ্গ সংগ্রাম চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যার মতো নৃশংস অপরাধের দায় ইসরায়েল এড়াতে পারে না। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে পরিচিত ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের মানুষের নিষ্ক্রিয়তাও অনেককে ক্ষুব্ধ করেছে।

Top of Form

রামাল্লায় প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি জনগণের স্বার্থে কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। তাদের নিষ্ক্রিয়তা স্পষ্ট বলে দেয়, এ সংগঠন অসলো শান্তিচুক্তির সফল প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনের নেতৃবৃন্দ চাইলে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন। তাদের তেমন সক্ষমতার অভাব নেই। এ যুদ্ধাবস্থার অবসান ঘটিয়ে পুনঃসংস্কারের কাজ সম্ভব হতো। কিন্তু তাতেও তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিম তীরে অনেক মানুষ নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। গাজা, লেবানন, পশ্চিম তীরÑএ তিন অঞ্চল একা সামলাতে হচ্ছে ইসরায়েলকে। কাজটি তাদের জন্যও কঠিন। এ সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করে ফিলিস্তিনিদের একত্র হতে হবে। নিজের অস্তিত্ব এমনকি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে হলেও তাদের একত্র হতে হবে। গাজায় জাতিগত নিধনে ইসরায়েল সফল হলে জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের প্রতিটি অংশেও একই পরিণতি হবে।

গাজাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্মুক্ত কারাগার বলে অভিহিত করা হয়। তবে এ অভিধার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হওয়া একটু কঠিন। ইসরায়েল গাজা এবং দখলকৃত পশ্চিম তীরকে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করেছে। এ আঙ্গিকে গাজাকে সর্ববৃহৎ কারাগার বলতেই হয়। পশ্চিম তীর মিলিটারি চেক পয়েন্ট ও বিভাজন দেয়ালে পরিপূর্ণ। বিচ্ছিন্ন ও ছোট কনসেনট্রেশন ক্যাম্পগুলো ধ্বংস করা কঠিন হয়। জাতিগত নিধনের কাজে নিযুক্ত ইসরায়েলিরা বড় কোনো অঞ্চল ধ্বংস করার ক্ষেত্রে যে ধরনের সুযোগ পায় তার চেয়ে বেশি পায় এসব ছোট ভূখণ্ডে। শুধু যে ধ্বংসযজ্ঞে তারা নিযুক্ত এমন নয়, ফিলিস্তিনিদের নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে তারা। জেরুজালেম থেকে রামাল্লা ও হাইফার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ সংগ্রাম আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তবে তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফিরে আসার অধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরি।

অতীতেও গাজা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ঐতিহাসিকভাবে প্রতিবাদ, স্ট্রাইক এমনকি জনসমাবেশের মাধ্যমে তারা নিজেদের অধিকারের কথা জানান দিয়েছে। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সমঝোতার বিষয়ে তারা সোচ্চার অবস্থানে থেকেছে এবং তাদের দাবি স্পষ্ট জানিয়েছে। গাজার অধিবাসীরা ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত। তারা এ দীর্ঘ যুদ্ধে নানাভাবে অত্যাচার-নিপীড়নের শিকার। তাদের পক্ষ ত্যাগ করা ঠিক হবে না। আমাদের জন্য তা মানানসইও নয়। গাজা হাতছাড়া হলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশাও আর থাকবে না।

  • ইন্টার্ন, জেরুজালেম ফান্ড, ওয়াশিংটন ডিসি

মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা