× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সমাজ

আম্মান-ইমনদের দৌরাত্ম্য শেষ হবে কবে

মহিউদ্দিন খান মোহন

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১২:২৫ পিএম

মহিউদ্দিন খান মোহন

মহিউদ্দিন খান মোহন

‘দ্বীন’ একটি আরবি শব্দ, যা প্রধানত ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দ্বীন শব্দটিকে ধর্মের সমার্থক হিসেবেই ইসলামি পরিভাষায় গণ্য করা হয়ে থাকে। পবিত্র আল কুরআনে দ্বীন শব্দটি দ্বারা একজন ন্যায়নিষ্ঠ মুসলমানের জন্য পালনীয় পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তা এমন এক জীবন ব্যবস্থা, যা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত বিধান হতে লভ্য শিক্ষা, আদর্শ ও নির্দেশাবলি দ্বারা পরিচালিত হবে। দ্বীনের সঙ্গে ইসলাম অত্যন্ত গভীরভাবে সম্পৃক্ত। হযরত মুহাম্মদ (সা). কর্তৃক প্রবর্তিত ধর্ম ইসলাম। ফলে দ্বীন ও ইসলাম একটি আরেকটির সমার্থকও বলা যায়। দ্বীন ইসলাম একসঙ্গে বললে তা ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণ রূপকেই বোঝায়। অপরদিকে আম্মানও একটি আরবি শব্দ; যার অর্থ বিশ্বস্ত, সুন্দর ইত্যাদি। আর আরবি শব্দ সিদ্দিকীর অর্থ সত্যবাদী। এটা ইসলাম ধর্মর একটি উপাধি। হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর প্রধান সাহাবি ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা.)কে তাঁর সত্যবাদিতার জন্য সিদ্দিকী উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।


আরবি শব্দ নিয়ে গবেষণা আমার এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। যে চারটি শব্দের কথা ওপরে বলা হলো, সেগুলো এখন আমাদের দেশে বহুল উচ্চারিত, আলোচিত এবং একই সঙ্গে ঘৃণিতও। শব্দ চারটি দুজন মানুষের নামের সঙ্গে সংযুক্ত। একজন ‘দ্বীন ইসলাম’ আরেকজন ‘আম্মান সিদ্দিকী’। নাহ, ঠিক বলা হলো না। মানুষের নয়, মানুষের লেবাসে দুই অমানুষের নামে ওই শব্দ চারটি ব্যবহৃত।

মা-বাবা আশা করে নাম রেখেছিলেন ‘দ্বীন ইসলাম’। ভেবেছিলেন, ছেলে তাদের বড় হয়ে দ্বীন ইসলামের পায়বন্দ হবে। ভালো মানুষ হবে, মানবিক মূল্যবোধ আর সততার ধারক-বাহক হয়ে তার মনুষ্য জীবনকে সফল করবে। সেসঙ্গে তার নামের সার্থকতাও প্রমাণ করবে। তার নাম ফিরবে মানুষের মুখে মুখে। সে আশায় বাবা-মা ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করেছিলেন। লেখাপড়া শেষে ছেলে চাকরিও পেয়েছিল দেশের এক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কিন্তু সেই ছেলে শিক্ষিত হলেও আক্ষরিক অর্থে যে মানুষ হয়নি, তার প্রমাণ সে দিয়েছে। বাবা-মায়ের আশার প্রদীপ সে ছেলের নাম আজ সবার মুখে মুখে, পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের খবরে। তবে মানুষ হিসেবে নয়, অমানুষ হিসেবে। ঠিক তেমনি আম্মান সিদ্দিকী নামটিও আজ সর্বত্র উচ্চারিত ঘৃণ্য এক নরাধম হিসেবে।

দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই দুই ছাত্র-শিক্ষক অনৈতিকতা ও অপকর্মের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তার বিস্তারিত উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। এই দুই দুষ্কৃতকারীর কারণে একটি সম্ভাবনাময় তরুণীকে আত্মহননের মতো মর্মান্তিক পরিণতির পথ বেছে নিতে হয়েছে। ঘটনার বিবরণ এখন সচেতন সবার জানা। বখাটে আম্মান সিদ্দিকী প্রতিনিয়ত উত্ত্যক্ত করে চলছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্রী ফাইরুজ অবন্তিকাকে। বহুবার সে বারণ করেছে কিন্তু দুশ্চরিত্র আম্মান তা শোনেনি। অবন্তিকা উপায় না দেখে শরণাপন্ন হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের। কিন্তু প্রতিকার পায়নি। বরং শিক্ষক নামের ওই দুর্বৃত্ত অবন্তিকাকে কয়েকবার প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে অপমান করেছে। এমনকি এমনও হুমকি দিয়েছিল সে (দ্বীন ইসলাম) অবন্তিকাকে ইচ্ছা করলে জুটাপেটা করতে পারে। তাতে নাকি অবন্তিকার কিছুই করার থাকবে না। কথাটা একেবারে মিথ্যে ছিল না। দ্বীন ইসলাম আর আম্মান সিদ্দিকীদের মতো দুর্বৃত্তের অভয়ারণ্যে অবন্তিকারা তো অসহায় মৃগশাবক! ওরা ইচ্ছে করলে ওই মৃগশাবকদের যেকোনো সময় ছিঁড়েখুঁড়ে খেতে পারে! এক্ষেত্রে অবশ্য অবন্তিকা ওই হায়েনাদের সে সুযোগ দেয়নি। সে নিজেই এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে নিজের জীবনের গতিকে স্তব্ধ করে দিয়ে।

একজন অবন্তিকার মর্মান্তিক আত্নহনন জন্ম দিয়েছে হাজারো প্রশ্নের। আমরা যে সময়টা অতিক্রম করছি, সেটা যে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মহামারির সময় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের মধ্যে মানবিকতার অভাব প্রচণ্ড। তার জায়গা দখল করে নিয়েছে পাশবিকতা, হিংস্রতা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন এমন ঘটনা ঘটবে? শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ বিপথে যেতে পারে, অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে পারে। তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব শিক্ষকদের; যারা পরিবারের বাইরে একজন শিক্ষার্থীর আইনগত অভিভাবক। দ্বীন ইসলামও তাই ছিল। কিন্তু সে বখে যাওয়া শিক্ষার্থীর নির্যাতন থেকে ছাত্রীকে রক্ষার পরিবর্তে নিজেই সে নির্যাতনের অংশীদার হয়েছেন। দ্বীন ইসলাম ও আম্মান সিদ্দিকী এখন কারাগারে। পুলিশ অবন্তিকার আত্মহননের ঘটনায় এ দুজনের প্ররোচনার প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে বলে সংবাদমাধমের খবরে জেনেছি আমরা। এরপর হয়তো মামলা আদালতে যাবে। সেখানে কত দিন তা চলবে কেউ জানে না। এ ঘটনায় দ্বীন ইসলাম ও আম্মান সিদ্দিকীর কী সাজা হবে কিংবা আদৌ কোনো সাজা হবে কি না, তা আমরা জানি না। কেননা, আমাদের দেশে ‘আইনের ফাঁকফোকর’ বলে একটা কথা চালু আছে; যে ফাঁক দিয়ে বহু জঘন্য অপরাধী বীর বিক্রমে বেরিয়ে আসে। অবন্তিকা আত্মহত্যার প্ররোচনার এ মামলাটির পরিণতিও সে রকম হলে অবাক হব না। কেননা, ইতোমধ্যে দ্বীন ইসলাম ও আম্মানের পক্ষের লোকেরা অবন্তিকার চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে। সে নাকি ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে নানা ধরনের মন্তব্য করত।

গত ১৯ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আরেক কাহিনী। ঘটনা ২০২১ সালের। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ছাত্রী কাজী ফারজানা মীম একই বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন। পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও মীম সে হয়রানির বিচার পাননি। বরং অভিযুক্ত শিক্ষকের নারাজির ভিত্তিতে তদন্ত পিছিয়েছে বারবার। এমনকি ওই শিক্ষক মীমকে হুমকিও দিচ্ছেন। সেজন্য গত ১৮ মার্চ মীম তার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে অভিযুক্ত শিক্ষক ও ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

মীমকে অভিনন্দন যে, তিনি দুর্বৃত্তদের কাছে পরাভব না মেনে লড়াই করে চলেছেন, যেটা অবন্তিকা পারেননি। এমন হাজারো অবন্তিকা-মীম রয়েছে আমাদের দেশে; যারা দ্বীন ইসলাম, আম্মান আর ইমনদের মতো মনুষ্যরূপী হায়েনাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হচ্ছে, কেউ কেউ হারাচ্ছেন সম্ভ্রম ও জীবন। প্রশ্ন আজ একটাই, আর কতকাল শিক্ষাঙ্গনে আম্মান-ইমনদের দৌরাত্ম্য চলবে? কবে আমরা এদেশকে, এদেশের শিক্ষাঙ্গনকে অবন্তিকা-মীমদের জন্য নির্ভয় বিচরণক্ষেত্রে পরিণত করতে পারব? এক একটি মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটে আর সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর কিছুদিন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। আবার যেই সেই অবস্থা। এর নিরসন জরুরি

  • সাংবাদিক ও কলাম লেখক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা