× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

মশা জনস্বাস্থ্যের হুমকি হলেও প্রতিরোধে শুধুই বাক্যবাণ!

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১০:৩৩ এএম

মশা জনস্বাস্থ্যের হুমকি হলেও প্রতিরোধে শুধুই বাক্যবাণ!

মশার উৎপাত থেকে নিষ্কৃতি মিলবে কীভাবে এই প্রশ্নটি এখন তুচ্ছ নয় বরং বড় প্রশ্ন হয়েই দেখা দিয়েছে। আমরা জানিনা, চরম হুমকি হয়ে ওঠা মশার বিনাশ ঘটিয়ে জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায় যাদের তাদের সংবিৎ ফিরবে কবে? ২৩ ও ২৪ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ দুই প্রতিবেদনে শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয় সারা দেশেই মশার ভয়াবহ বিস্তার এবং ডেঙ্গু নিয়ে যে নানামুখী আশঙ্কার চিত্র উঠে এসেছে তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। ‘মশা মারতে কামান দাগা’ এই প্রবাদটি আমাদের সমাজে বিদ্যমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে ফিরে ফিরে জন-আলোচনায় উঠে আসে। মশা অতি ক্ষুদ্র একটি কীট। কিন্তু অব্যবস্থাপনা, দায়িত্বশীলদের ‍অনেকেরই দায়িত্বপালনে নিষ্ঠার অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি একই সঙ্গে পরিকল্পনাগত ত্রুটির কারণে এই কীট জীবন হন্তারক হয়ে উঠেছে। উপরিউক্ত প্রবাদটির যখন প্রচলন হয় তখন সমাজ-বাস্তবতায় কামান অত্যন্ত শক্তিশালী মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় মশাকে তুচ্ছ না করে বরং এর বিস্তার এবং মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ বিশেষ করে ডেঙ্গুর মতো প্রাণঘাতী রোগের বিরূপ প্রভাব সমাজে-পরিবারে যে অভিঘাত ফেলেছে তা চরম উৎকণ্ঠার। বিগত কয়েক বছর ধরে এডিশ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের সাতটি দেশের কাতারে বাংলাদেশকে নির্ণয় করেছে।

ঢাকা মহানগরীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা এমনকি উপজেলা পর্যন্ত ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তারের পরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর এ ব্যাপারে কতটা শিরঃপীড়া রয়েছে এ নিয়ে সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দাঁড়ায়। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানে দেশব্যাপী প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণকারী মশার শুধু বংশ বিস্তারের চিত্রই উঠে আসেনি, মশা নিধনে কী পরিমাণ অর্থ ‘হাওয়া’ হয়ে গেছে এই তথ্যও বিস্ময়কর। আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আছে, সংকটকে পুঁজি করে অসাধু দায়িত্বশীলরা নিজেদের আখের গোছাতে কতটা মরিয়া হয়ে ওঠেন। বিগত করোনা দুর্যোগে আমরা যেমন অসাধুদের কদাচারের বহুমাত্রিক অপকর্মের ছক দেখেছি তেমনি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও বহুলাংশেই দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতা উৎকণ্ঠা জাগিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর ভয়াবহতার প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার কাঠামোর অন্যান্য স্তরের কার্যক্রম নিয়ে যেসব প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এর দায় এড়ানোর অবকাশ সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষেরই আছে বলে আমরা মনে করি না।

মশা নিধনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক এবং প্রক্রিয়া কতটা প্রশ্নবিদ্ধ তা-ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর অনুসন্ধানই বলে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় কিউলেক্স মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ বেড়েছে এবং কোনো কোনো এলাকায় এই হার আরও বেশি। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সরকার সিটি করপোরেশনগুলোতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। তা ছাড়া দেশের অন্য দশটি সিটি করপোরেশন, ২২৯টি পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ অন্যান্য সংস্থা মশক নিধনে বছরে অন্তত আরও আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ব্যয়ের সুফল দৃশ্যমান হচ্ছে না কেন? আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার ডেঙ্গু আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। জনস্বাস্থ্যবিদদের এমন কঠোর সতর্কবার্তার পরও আমরা দুঃখজনকভাবে দায়িত্বশীল সব পক্ষের উদ্যোগ-আয়োজনই দেখছি কিংবা উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকার শুনছি! কীটতত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, মশার জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে কাজ করছে না কীটনাশকও। উপরন্তু কোনো কোনো গবেষক এ-ও নির্ণয় করেছেন, এডিস মশার প্রজাতির বেশ কয়েকটি জেনেটিক পরিবর্তন হয়েছে প্রতিরোধসংশ্লিষ্ট, যা কিনা বাজারে বিভিন্ন কীটনাশকের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষা দেয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সম্প্রতি বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা হতাশা বৈ কিছু নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, দায়িত্বশীলদের এই অসহায়ত্ব কী স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে না?

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডেঙ্গুর ধরনের পরিবর্তনের কথা বলে জানিয়েছেন, তা এখন আর মৌসুমি রোগের পর্যায়ে নেই। এর নিয়ন্ত্রণে এবং চিকিৎসার ধরনেও পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের কৌশলপত্র প্রকৃতপক্ষে কতটা কাজে আসবে এ নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গবেষণায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের বিষয়টিও উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, প্রাকৃতিক পরিবর্তন জনজীবন কিংবা জনস্বাস্থ্যে যে অভিঘাত ফেলছে এর মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি কতটা রয়েছেÑ এ আত্মজিজ্ঞাসা জরুরি। যেকোনো ক্ষেত্রে সুফল পেতে হলে সর্বাগ্রে কাজের কাজ করতে হবে। তা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই সংকট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পক্ষগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ কিংবা কার্যক্রম পরিচালনায়ও ব্যবস্থা যে সুচারু নয়, তা-ও অদৃশ্যমান কিংবা অপ্রমাণিত নয়।

আমরা দেখেছি, নিকট অতীতেও মশক নিধনের ওষুধ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল অসাধু ব্যক্তি সংকট পুঁজি করে নিজেদের আখের গোছাতে কী ভয়াবহ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। মশার ওষুধ কেলেঙ্কারির পর সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রায় ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন উপস্থাপিত হলেও এর প্রতিবিধান কতটা কী হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরও প্রীতিকর নয়। ইতঃপূর্বেও মশক নিধন কার্যক্রমে কীটনাশকসহ নানা ক্ষেত্রে আরও বহুমাত্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি ঘটেছে যা খুব দূর অতীতের নয়। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করে দুর্নীতিবাজদের একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে যাওয়াও বিস্ময়কর এবং প্রশ্নবোধক। অনুকূল পরিবেশের ফলে জীনগত ও শরীরবৃত্তীয় যে পরিবর্তন মশার ক্ষেত্রে ঘটেছে এর বিপরীতে অতি জরুরি হয়ে পড়েছে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রেখে জৈবিক দমন ও উপযুক্ত কীটনাশকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়ে পরিকল্পিত ঝটিকা আক্রমণ। মশাবাহিত রোগ এবং মশা কোনোটিই এখন আর স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই।

অসচেতনতা, একই সঙ্গে অপরিচ্ছন্নতার বিষয়টি উপেক্ষার দায় নাগরিক সমাজেরও কম নয়। তবে এ-ও বলার অপেক্ষা রাখে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার কাঠামোর বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন এ নিয়ে গবেষণা, পরিকল্পিত পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি তেমনি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে বিদ্যমান সংকট উত্তরণের পথ বের করতে হবে সময়ক্ষেপণ না করে। প্রাণঘাতী ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত নানা বিপজ্জনক রোগের হেতু যেহেতু বাড়ছে সেই নিরিখে মশক নিধন কার্যক্রম নিয়মিতভাবে স্থায়ী চর্চারও বিকল্প নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতি এই তাগিদও দিচ্ছে, আমাদের স্বতন্ত্র একটি মশক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান খুব প্রয়োজন; যে প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য কাজ হবে মশা নিয়ে গবেষণা এবং নিয়ন্ত্রণে কাজ করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং তাদের কার্যক্রম নিশ্চয়ই আমাদের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অজানা থাকার কথা নয়। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় বিন্দুমাত্র উদাসীনতার অবকাশ নেই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা