× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় গণহত্যা দিবস

বিশ্বস্বীকৃতিতে বাধা কোথায়

মোস্তফা কামাল

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১০:২৬ এএম

আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১১:০৯ এএম

মোস্তফা কামাল

মোস্তফা কামাল

আরও আগে হওয়া উচিত থাকলেও বছর কয়েক ধরে তেজোদ্দীপ্ত একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি। যেকোনো গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় একটু কঠিন। সময়সাপেক্ষও। গত শতাব্দীতে বিশ্বে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে অর্ধশতাধিক। নির্মমতা-বীভৎসতা বিচারে এগুলোর মধ্যে একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পূর্ববাংলায় পাকিস্তানি হানাদারদের চালানো গণহত্যাযজ্ঞ ভিন্নমাত্রার। কেবল ওই রাতে নয়, একাত্তরের ৯ মাসে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত হত্যা-অপকর্মের তথ্যও গায়েব করে ফেলার প্রবণতা রয়েছে। পাকিস্তানের সমর নায়করা ও সরকারগুলো মাঝেমধ্যেই ওই ঘটনা পাশ কাটিয়ে যান। অস্বীকারও করেন। তাদের অস্বীকারেরর উদ্দেশ্য দায় স্বীকারের পর্ব যেন না থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একাত্তরে বিশ্ব কাঁপিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দ্বিতীয় নজির নেই। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর ৯৩ হাজার সৈন্যের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয় কোনো গোপন বিষয় নয়। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের আগমুহূর্ত পর্যন্ত ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও ৪ লাখের অধিক মা-বোন ধর্ষণের শিকারও নথির বাইরে নয়।


ট্র্যাজেডি হচ্ছে- বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস আছে, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আছে, কিন্তু গণহত্যার বিশ্বস্বীকৃতি বা দিবস নেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগার থেকে ফিরে আসার পর যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট গণহত্যা-ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের অভিযোগ আছেÑএমন প্রায় ৩৬ হাজার রাজাকার-আলবদর, আলশামসের বিচারের পাশাপাশি পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও সরাসরি হত্যা-ধর্ষণ, লুটপাটে যুক্ত চূড়ান্তভাবে ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের জন্য শনাক্ত করা হয়। ত্রিপক্ষীয় সিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান তাদের অপরাধের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তাকে নিজ দেশে নিয়ে বিচার করবে মর্মে মুচলেকা দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা আর বিচার করেনি। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা সরকারগুলোর বেশিরভাগই গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা, যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ, সম্পদের হিস্যাসহ বিভিন্ন দাবি তোলে, যা পাকিস্তানকে গাত্রদাহ দেয়।

বাংলাদেশের মতো গণহত্যার ভিকটিম কিছু দেশও তাদের গণহত্যা দিবসকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সবার আবেদন বিবেচনা করে মূল উদ্দেশ্যের বিষয়ে একমত হয়ে ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘ গণহত্যা কনভেনশন (কনভেনশন অন দ্য প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দ্য ক্রাইম অব জেনোসাইড) ঘোষণা করেছিল। আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের ঘোষণায় জাতিসংঘ বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি গণহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি দিবস পালন প্রয়োজন। জাতিসংঘের এই ঘোষণার পর ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় একাত্তরের ৯ মাসের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি জরুরি। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ১১ মার্চের (২০১৭) প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের পাশাপাশি এই দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সরকার উদ্যোগ নেবে। ভারত, নেপাল, ভুটান, রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোসহ যেসব দেশ একাত্তরে বাংলাদেশের গণহত্যার প্রতিবাদ ও নিন্দা করেছে তাদের সঙ্গে একটি ক্যামেস্ট্রি দরকার।

গণহত্যার অভিশাপ থেকে বর্তমান বিশ্ব এখনও মুক্ত নয়। গণহত্যা চলছে প্রতিবেশী মিয়ানমারে। ফিলিস্তিনে তো চলছেই। চলছে আফ্রিকার কিছু দেশেও। এসবের শতকরা ৮০ ভাগ গণহত্যার বিচার দূরে থাকÑআনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও মিলছে না। গণহত্যার অভিশাপ থেকে বিশ্বকে মুক্ত এবং আক্রান্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে গণহত্যার স্বীকৃতির প্রধানত এ দায়িত্ব বিশ্বসভা জাতিসংঘের। তাদের স্বীকৃতি ও ঘোষণা দেশে-বিদেশে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের গণহত্যা অস্বীকারের অপচেষ্টা প্রতিহত করবে। চিরতরে বন্ধ করে দিতে পারে বিতর্কের দুয়ার। জাতিসংঘ একাত্তরের গণহত্যার এক ধরনের স্বীকৃতি দিয়েই রেখেছে। বাকি রয়েছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। স্বীকৃতি ঘোষণার পর বিচারের প্রশ্ন। বলার অপেক্ষা রাখে না, একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকাণ্ড ছিল না, তা ছিল মূলত বিশ্বসভ্যতার জন্য এক কলঙ্কজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা। এর পর ৯ মাসের প্রতিটি দিনই চলেছে হত্যাযজ্ঞ। এ নিয়ে তথ্যের অভাব নেই। নতুন করে প্রমাণেরও কিছু নেই।

টাইম ম্যাগাজিনের ডেন কগিন, যিনি মুক্তিযুদ্ধর প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক, একজন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের বরাত দিয়ে লিখেছেনÑ২৫ মার্চে ঢাকা শহরেই লক্ষাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ইউনাইটেড নেশনস হিউম্যান রাইটস কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, মানবসভ্যতার ইতিহাসে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তাতে অল্প সময়ের মধ্যে সব থেকে বেশিসংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে। প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ১২ হাজার মানুষ তখন খুন হয়। গণহত্যার ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ গড়। ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণার সুযোগ আর নেই। স্বীকৃতিতে তো বাধা নেই। দৃশ্যত বড় বাধা কেবল পাকিস্তানই। তাদের বাধা বা চালাকি শেষতক মোটেই শক্ত কোনো বাধা হতে পারবে না। তবে যত বিলম্ব তত সুবিধা পাবে পাকিস্তান। উল্লেখ না করলেই নয়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা ও মুসলিম বিশ্ব তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের পাশে ছিল না। স্বভূমি থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বিতাড়ন ও হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নিধনে জাতিসংঘসহ সব রাষ্ট্র গণহত্যার স্বীকৃতি দিচ্ছে। অথচ একাত্তরে রোহিঙ্গাদের চেয়ে ১০ গুণ বাঙালি বিতাড়ন ও ৩ হাজার গুণ নিধনে তারা ছিল নীরব। তাই বাস্তবতার নিরিখে তাদের স্বীকৃতি আদায়ে বিদেশে আমাদের মিশনগুলোর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে গণহত্যাবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার আবশ্যকতা রয়েছে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি যত না দেওয়ার বিষয়, তার চেয়ে বেশি আদায়ের বিষয়। এর নেপথ্যেও নানা বিষয়-আশয়। ১৯১৫ সালে আর্মেনিয়ান গণহত্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিদার। জাতিসংঘ প্রণীত গণহত্যার মানদণ্ড বিচারে বাংলাদেশে একাত্তরের ঘটনার ব্যাপকতা কম নয় বরং বেশি। স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসের মতো কিছু তারিখ আমাদের চেতনা-প্রেরণার স্মারক। কিন্তু কিছু দিবস ও ঘটনার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে এখনও ফাঁক রয়ে গেছে। যুদ্ধ জয়ের পর একে একে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বের সব দেশ। পরাজিত পাকিস্তানও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু গণহত্যার স্বীকৃতির বিষয়টি উহ্য থেকে যাওয়া নিদারুণ কষ্টের।

  • সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা