× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সুপেয় পানি সবার জন্য নিশ্চিত হোক

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ১০:০১ এএম

সুপেয় পানি সবার জন্য নিশ্চিত হোক

২২ মার্চ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পানি দিবস পালিত হয়। আমরা জানি, ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ সভায় এই দিনটিকে বিশ্ব পানি দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর আগে ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে জাতিসংঘ পরিবেশ ও উন্নয়ন সম্মেলনের (ইউএনসিইডি) এজেন্ডা ২১-১-এ প্রথম বিশ্ব পানি দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও পরিশুদ্ধ পানি ও পানিসম্পদ রক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এদিন বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করে। আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। এবার বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘শান্তির জন্য পানি’। জীবনের জন্য সুপেয় পানি কতটা অপরিহার্য এর ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনও সুপেয় পানির সংকট প্রকট। আমাদের প্রেক্ষাপটেও উঠে আসে প্রায় একই তথ্যচিত্র।

২৩ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপেয় পানির দাবিতে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলে নদীতে খালি কলস ভাসিয়ে প্রতিবাদ করেছে শত শত নারী-পুরুষ-শিশু। সচিত্র ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মুন্সীগঞ্জ-হরিনগর সড়কে খালি কলস উল্টে বিক্ষোভও দেখিয়েছে ওই এলাকার জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটি অংশ। আমরা জানি, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে পরিশুদ্ধ কিংবা সুপেয় পানির অভাব প্রকট হয়ে ওঠে, বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে। তা ছাড়া বছরব্যাপীই সুপেয় পানি উপকূলের জন্য অন্যতম বড় সংকট। দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকায় পানি থইথই করলেও বিশুদ্ধ সুপেয় পানি কতটা বড় সংকট হিসেবে জিইয়ে আছে সাতক্ষীরার সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলে বিশ্ব পানি দিবসে খালি কলস নিয়ে মানুষের সুপেয় পানির দাবি এক নিদারুণ বাস্তবতা। শুধু উপকূলীয় অঞ্চলই নয়, দেশের পাহাড়ি ও সমতলের বিভিন্ন অঞ্চলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। আর্সেনিকের দূষণসহ প্রাকৃতিক ক্ষেত্র থেকে পানিপ্রাপ্তির উৎসগুলো কতিপয় মানুষের অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে বিনষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেও এক্ষেত্রে অভিঘাত লাগছে। তাছাড়া দেশের নদ-নদীতে বহুমাত্রিক দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় জীবনধারণের মুখ্য উপাদান পানির সংকট জীবনযাপনের সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই ভূখণ্ড কীভাবে এত সুপেয় পানি সংকটে পড়ল, এর পশ্চাৎকারণ সচেতন মানুষমাত্রই জানা। তাছাড়া দেশের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ জুড়ে লবণাক্ত পানির আগ্রাসন শুধু জীবনযাপনেই নয়, কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায়ও অভিঘাত ফেলেছে। গোটা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় কেসস্টাডি হতে পারে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নানা দেশি-বিদেশি উৎস থেকে অর্থের জোগানের খবর আমরা সংবাদমাধ্যমে পাই বটে, কিন্তু সেসব অর্থ বরাদ্দ বা সহায়তার সুফল কতটা জলবায়ু-উদ্বাস্তু কিংবা ভুক্তভোগীরা পাচ্ছেন এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। মহানগর-নগর-শহর এমনকি গ্রামপর্যায় পর্যন্ত বিশুদ্ধ পানি ক্রমেই যেন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ছে। কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশকের প্রয়োগ, একই সঙ্গে নদ-নদীর স্বাভাবিকতা বিনষ্টে স্বার্থান্বেষী বলবান চক্রের হীনস্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টাও সংকট প্রকট করে তুলছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে অযত্ন-অবহেলার পাশাপাশি দায়িত্বশীল অনেকেরই দায়িত্বহীনতা এবং ভূমিদস্যু চক্রের লোভাতুর থাবায় সুপেয় পানি ক্রমেই অপেয় হয়ে উঠছে। তাছাড়া সরকারি সেবা সংস্থা ওয়াসা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরবরাহকৃত খাবার পানি কতটা সুপেয় এ নিয়েও অনেক ক্ষেত্রেই ভীতিকর, অস্বাস্থ্যকর তথ্য সংবাদমাধ্যমেই ইতঃপূর্বে উঠে এসেছে। বিশুদ্ধ পানির নামে কোনো কোনো কোম্পানির বোতলজাত পানিও যে সুপেয় নয় এরও বহুবার নজির মিলেছে সংবাদমাধ্যমেই। নিরাপদ পানিপ্রাপ্তি বহুলাংশেই দুষ্কর হয়ে পড়ছে পানির উৎসে দূষণসহ বহুমাত্রিক নেতিবাচকতায়।

প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত বিশেষ করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় এসেছে এবং দূরদর্শী পরিকল্পিত পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে কিন্তু বাস্তবায়নের দৃষ্টান্তযোগ্য নজির কতটা আছে? একই সঙ্গে পানির অপচয় সমাজের নানা ক্ষেত্রে ব্যাধির মতো জেঁকে বসে আছে। পানির অপচয় কমাতে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সেন্সর পদ্ধতির মোটরের ব্যবহার অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে, তা-ও আলোচনায় এসেছে বহুবার। কিন্তু জনগুরুত্বপূর্ণ এসব কিছুই যেন আলোচনা-পর্যালোচনা কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যেই থেমে থাকে, অগ্রগতির চিত্র বিবর্ণ। আমরা দেখছি, জেলা-উপজেলায় স্থানীয় সরকার কাঠামোর বিভিন্ন স্তরের দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা রাখার ব্যবস্থার বিষয়াদি সম্পর্কে কাগজপত্রে অনেক কিছুই লিপিবদ্ধ আছে বটে, কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তাছাড়া গভীর-অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকলেও এক্ষেত্রেও অনিয়ম-দুর্নীতির ছায়া কম বিস্তৃত নয়। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে সুপেয় পানিপ্রাপ্তির বড় উৎসস্থল নদ-নদীগুলোই হতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে নদ-নদী দখলে-দূষণে এতটাই বিপর্যস্ত যে এর উল্লেখযোগ্য অংশেরই প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। আমরা যদি নদ-নদীকে সুপেয় পানির উৎসস্থল হিসেবে প্রকৃতই নির্ভরকেন্দ্র করতে পারতাম তাহলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসত। মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, মাত্রাতিরিক্ত হারে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের কারণে বহুমুখী ঝুঁকিও সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা জানি, বিশ্ব পরিমণ্ডলে নদ-নদী বিভিন্ন দেশে ৬০ শতাংশ মিঠাপানির চাহিদা পূরণ করছে। কিন্তু এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা তো দূরের কথা, নদ-নদীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি এশিয়া প্যাসিফিকের নদীর পানির মধ্যে বাংলাদেশের নদীর পানি সবচেয়ে বেশি দূষিত বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। দেশের প্রায় ত্রিশটি নদী মারাত্মকভাবে দূষণের শিকার। বাংলাদেশে জলাভূমি হারানোর হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অথচ আমাদের সংবিধানে জলাশয় রক্ষাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জীবনের অধিকার সুপেয় পানিপ্রাপ্তির অধিকারের সমার্থক। বিশুদ্ধ পানি ও বাতাসের অধিকার না থাকলে জীবন বিপন্ন হতে বাধ্য। উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করে নদ-নদী ও জলাশয়ের ভৌগোলিক অবস্থান নির্ণয়ক্রমে সর্বাগ্রে পানির উৎসের সংকট দূর করতে হবে। সুপেয় পানি ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে এমন সবকিছু বন্ধ করতে হবে। পানির অপচয় বন্ধে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সুপেয় পানি সবার জন্য নিশ্চিত করার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা