দিবস
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫২ এএম
যক্ষ্মা বা টিবি
ফুসফুসের গুরুতর রোগ। প্রাণঘাতী রোগ হিসেবে এর পরিচিতি সম্ভবত প্রস্তরযুগ থেকে। মিসরে
তিন হাজার বছরের পুরোনো মমির ফুসফুসে যক্ষ্মার ক্ষত পাওয়া গেছে। যক্ষ্মাকে ‘ক্ষয়রোগ’
বলেও অভিহিত করা হতো। সপ্তদশ শতাব্দীতে ফ্রান্সিসকাস সিলভিয়াস নামে নেদারল্যান্ডসের
লিডেনবাসী এক ব্যক্তি মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ফুসফুসে গোটা আকৃতির ক্ষত দেখতে পেয়ে এর
নাম দেন টিউবারসেল। জোহান শনলেইন ১৮৩৯ সালে এই রোগের নাম দেন টিউবারকুলোসিস। ড. রবার্ট
কচ ১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ জার্মানির বার্লিনে যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার করেন। এরপরই বিসিজি
টিকা, টিউবারকুলিন টেস্ট, নানা প্রকার ওষুধ, ডটস পদ্ধতি ইত্যাদি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন
সাধিত হয়েছে। আমাদের দেহের টিবি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে।
মানব দেহের একটি ইমিউন সিস্টেম রয়েছে যা তাদের শনাক্ত করতে পারে এবং অসুস্থতা ধরা
থেকে আমাদের প্রতিরোধ করতে পারে। ক্ষুধামান্দ্য, রাতের ঘাম, চরম ক্লান্তি, বুকে ব্যথা,
কাশি ও শ্বাসকষ্টের সঙ্গে ব্যথা এবং তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে অবিরাম কাশি এই
রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষ্মণ। যক্ষ্মার কারণ কী?
কাশি বা হাঁচির
মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বাতাসে মাইক্রো ফোঁটা নির্গত হয়। এই মাইক্রো ড্রপলেটগুলো
টিবি সৃষ্টিকারী জীবাণুর বাহক হয়ে ওঠে। সক্রিয় যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি যখন হাসে,
কথা বলে, গান গায়, কাশি বা হাঁচি দেয়, তখন সে বাতাসে মাইক্রো ড্রপলেটের সঙ্গে টিবি
সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ছেড়ে দেয়। একসময় প্রবাদ ছিলÑ যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা।
কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভূত উন্নয়ন সাধন, বিশেষ করে, দেশে বর্তমান সরকারের নেওয়া
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বা এনটিপির কারণে এখন যক্ষ্মা নিয়ে আর কোনো ভয় নেই।
বর্তমানে দেশের প্রায় সব জায়গায় বিনামূল্যে যক্ষ্মার চিকিৎসাব্যবস্থা করছে সরকার। উপজেলা
কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, সম্মিলিত সামরিক
হাসপাতাল, পোশাককর্মীদের চিকিৎসাকেন্দ্র, তা ছাড়া ব্র্যাক থেকে বিনামূল্যে যক্ষ্মার
ওষুধ সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে
আস্তে আস্তে টিবি বা যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে, যা প্রশংসনীয়।
সচেতনতা ও সঠিক
চিকিৎসাই যক্ষ্মা থেকে রক্ষা করতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভয়ের
কারণ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিস বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা। অনিয়মিত ওষুধ
সেবন, পুরো ওষুধ সেবন না করার কারণে এ রোগের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উপসর্গের
উন্নতি ঘটলেও নির্দেশিত ওষুধের সম্পূর্ণ কোর্সটি সম্পূর্ণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অসম্পূর্ণ চিকিৎসায় ওষুধ প্রতিরোধী টিবি হতে পারে, এটি চিকিৎসা করা আরও চ্যালেঞ্জিং
করে তোলে। সফল চিকিৎসার ফলাফল ও রোগের বিস্তার রোধ করার জন্য সময়মতো রোগ নির্ণয়,
সঠিক ওষুধের আনুগত্য ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।