প্রেক্ষাপট
দয়াল কুমার বড়ুয়া
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৯ পিএম
বৈদেশিক
মুদ্রা দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তৈরি পোশাক রফতানির পরই
রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রেরিত অর্থ। রপ্তানির জন্য একটি বা দুটি পণ্যের ওপর
নির্ভর করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। অনেক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে
যেতে হবে। সারা দেশে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এসব অঞ্চলে দেশি-বিদেশি
বিনিয়োগ হবে এবং যে অঞ্চলে যে পণ্য ভালো হয়, সেখানে সেই শিল্প গড়ে উঠবে। সেবা
খাতেও আমাদের যথেষ্ট সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে ও ভালো সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ খাতে
রপ্তানি আয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার
ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছে এবং আইসিটি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিশাল সুযোগ
সামনে রয়ে গেছে। আইটি খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় ২৭.৫
মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি
করতে পারছি। যদিও বিশ্বমন্দার অভিঘাতে ইউরোপ-আমেরিকার অনেক উন্নত দেশেও পণ্য
চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। এই আশাব্যঞ্জক বিষয়টি আমলে রেখে নতুন বাজার খুঁজতে হবে, নতুন
জায়গায় যেতে হবে। প্রতিযোগীতামূলক বিশ্ব বাজার ব্যবস্থায় এর বিকল্প নেই।
রপ্তানি
বাণিজ্যে আমাদের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ ২৫টি পণ্য ৬৮ দেশে
রপ্তানি করে আয় করত মাত্র ৩৪৮ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে
৭৪৪টি পণ্য বিশ্বের ১৯৮ দেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
আমাদের রপ্তানির প্রধান খাত দুটি। একটি পণ্য রপ্তানি আর একটি সেবা রপ্তানি। আমরা
রপ্তানি বলতে শুধু পণ্যকে বোঝালেও সেবা খাতটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে
সেবা রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ১৭৩ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য
রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে ৩ দশমিক ৫
বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৩
শতাংশ আর সার্ভিস সেক্টরে ২৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে রপ্তানির
লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যায়।
রপ্তানি আয়
বাড়াতে তৈরি পোশাকের মতো পাট ও চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য,
হস্তশিল্পসহ অন্যান্য রপ্তানি পণ্যে একই গুরুত্ব দিতে হবে। এক পণ্যে নির্ভরতা
দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। রপ্তানি ঝুড়িতে
বৈচিত্র্য আনার সম্ভাবনা আছে, এমন খাতগুলোর মধ্যে আছে চামড়া ও জুতা, হালকা প্রকৌশল
ও প্লাস্টিক। কিন্তু মাসিক রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ উৎপাদিত
পণ্যগুলোর কোনোটিই এক নম্বর অবস্থানে থাকা খাতটির ধারেকাছেও নেই। আরএমজি খাতের
রপ্তানির হিসাব বিলিয়নে করা হলেও অন্যগুলোর হিসাব এখনও কয়েক মিলিয়নেই আটকে আছে।
বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ চীন হালকা থেকে ভারী ও জটিল প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে মনোযোগী হয়েছে। খেলনা, সাইকেল, হালকা ইলেকট্রনিক পণ্যে চীনের বাজার নিয়ে নেওয়ার দারুণ সুযোগ তাই বাংলাদেশের সামনে। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রয়োজন রপ্তানিসহায়ক শিল্পনীতি। আজকের যুগ হলো ব্যবসাবাণিজ্যের। জাতীয় উন্নয়নের এটিই সোজাসাপটা পথ। দেশে গত দেড় দশকে নজরকাড়া উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে ব্যবসাবাণিজ্যের বদৌলতে। দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে রপ্তানি যেমন বাড়াতে হবে, তেমন রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। গুটিকয় পণ্যের ওপর নির্ভরতার বদলে বিদেশে কোন কোন পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সে নিরিখে উদ্যোগ নিতে হবে। নিত্যনতুন বাজার সম্প্রসারণে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।