× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব বন দিবস

স্বার্থান্বেষীদের গ্রাসে বনাঞ্চল

মো. অহিদুর রহমান

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১০:৫৭ এএম

মো. অহিদুর রহমান

মো. অহিদুর রহমান

২১ মার্চ বিশ্ব বন দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য- ‘বন এবং উদ্ভাবন : একটি উন্নত বিশ্বের জন্য নতুন সমাধান। ফরেস্ট অ্যান্ড ইনোভেশন : নিউ সলিউশন ফর অ্যা বেটার ওয়ার্ল্ড’। বন বিশ্বব্যাপী জমির ৩১ শতাংশকে কভার করে, পরিষ্কার বায়ু ও পানি সরবরাহ করে, প্রচুর পরিমাণে কার্বন সংরক্ষণ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত রক্ষা করে এবং আমাদের অনেক আশ্চর্যজনক জীববৈচিত্র্যেও অধিকাংশ বাস করে, সুন্দরবন বাংলাদেশের ফুসফুসের মতো কাজ করে, দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে, বাস্তুতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখে। বাংলাদেশে দিন দিন বন কমছে। বন কমছে বলেই অনেক পাখি তার বাসস্থান হারাচ্ছে। অনেক বন্য প্রাণী তার বাসস্থান হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে প্রতিবেশী দেশের বনে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। কাগজে লিখি, বই পড়ি, একটি বাড়ি তৈরি করি, ঘরে সুন্দর আসবাবপত্র তৈরি করি, পাখির গান শুনি, অক্সিজেন গ্রহণ করি, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করি- সবই সম্ভব হচ্ছে এই বনের কারণে। জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট, প্রাণীর আবাসস্থল ধ্বংস, মানুষ প্রাণীর খাদ্য সংকট, হাওর জলাভূমি ও নদীর নাব্য হ্রাস, ভূমিতে অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগ, বনদস্যুদের ও মানুষের নির্দয় ব্যবহার এর কারণে বন হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। বাঘ, হাতি, হরিণসহ সব প্রাণের অস্তিত্ব যে বন প্রকৃতি, পরিবেশের গুরুত্বপুর্ণ, মানবজাতির জন্য একান্ত প্রয়োজন তা গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে।


প্রাণের বৈচিত্র্যতাই আমাদের জীবন, উন্নয়ন, শান্তি, সমৃদ্ধি। বৈচিত্র্যতা আছে বলেই আমাদের জীবন এত সুন্দর। এই বৈচিত্র্য ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, শ্রদ্ধাবোধের জায়গা তৈরি এবং আমাদের জীবনের জন্যই টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বন ও বন্য প্রাণী। আইইউসিএনের এক সমীক্ষা মতে, বাংলাদেশে ১১৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৬৩০ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ২২ প্রজাতির উভচর, ২৬১ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ, ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণ, ৩২৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৬৬ প্রজাতির কোরাল, অসংখ্য পোকামাকড়, ৫০০০ প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ, যার ভেতর ১৬০ প্রজাতির শস্য রয়েছে। বন ও জলাভূমি আছে বলেই এত সব বৈচিত্র্য আছে। বনই হচ্ছে প্রাণীর জন্ম, বিচরণ, প্রজনন ও বসবাসের উপযুক্ত জায়গা। দেশের জীববৈচিত্র্যের অফুরন্তভান্ডার হচ্ছে বন। যে জীবনপ্রাণির অবাধ মিউজিয়াম। বনই হচ্ছে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের ধারক ও বাহক। বন আছে বলেই উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে আছে। বন শুধু গাছপালাই রক্ষা করে না। সব প্রাণিজগৎকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বন ধ্বংসের প্রধান কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জ্বালানির চাহিদা পূরণ করছে বনের কাঠ দিয়ে, বসতবাড়ি নির্মাণ, ফসল চাষাবাদ, রাস্তাঘাট নির্মাণ, নগরায়ণ, জুমচাষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৃক্ষের পরিচর্যার অভাব, পরিবেশদূষণ, পাহাড় কাটা, পাহাড় ধ্বংস, বৃক্ষের রোগ, বনবিধি অমান্য করাসহ বিভিন্ন কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে। এর ফলে ক্রমেই অস্তিত্ব বিপন্ন হছে প্রাণবৈচিত্র্যের।

জলবায়ু পরিবর্তন বন্য প্রাণীর ওপর নতুন বিপত্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেন, আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া বন্য প্রাণীর জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিগুলোর একটি। জনসংখ্যার চাপ ও অর্থনৈতিক কারণে বনাঞ্চলে মানুষের মাত্রাতিরিক্ত বৈধ-অবৈধ হস্তক্ষেপের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগে কমে যাচ্ছে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল। দেশের স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ১১টি প্রজাতি ইতোমধ্যেই চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ৪৫টি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে প্রাণী। পাখির মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে লালশির হাঁস ও ময়ূর। অতি বিপন্ন পাখির তালিকায় রয়েছে কালো তিতির, কাঠময়ুর, বাদিহাঁস, বাঞ্চাহাঁস, রাজধনেশ, পাহাড়ি ঘুঘু, হরিয়াল, কোরাল, লালশির শকুন, হাড়গিলা, পাহাড়ি ময়না, মথুরা, কাওধনেশ, ঈগল, প্যাঁচা, হট্টিটি, সাদা ঈগল, মদনটাক প্রভৃতি।

প্রতিবছরই কমছে দেশের প্রাকৃতিক বনাঞ্চল। ১৯৯০ সালে দেশে বনভূমি ছিল ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৬০০ হেক্টর। ২০১৫ সালে কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ২ হাজার ২৪০ হেক্টর। ২৫ বছরের ব্যবধানে ম্যানগ্রোভ, শাল, বাঁশ ও পাহাড়ি বন মিলে কমেছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৬০ হেক্টর। তবে সবচেয়ে বেশি কমেছে পাহাড় ও বাঁশের বন। শালবন কেটে বিমানবাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ তৈরি করা হয়েছে। তেলের জন্য শেভরন কোম্পানি লাউয়াছড়া বন তছনছ করেছে। আমাদের পাহাড়ি বন পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। পাহাড় যেন এখন খোলা হয়ে গেছে। সুন্দরবনে গাছ কমছে। বন্য প্রাণী কমছে, মৌমাছি কমছে, মৌয়ালিরা মধু পাচ্ছেন না। অনেক মৌয়ালি বেকার হয়ে যাচ্ছেন। বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষ তার পেশা হারাচ্ছে। আসুন বনরক্ষা করে টিকে থাকি এই গ্রহে। বনভূমি পৃথিবীর ফুসফুস। গাছপালা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন ত্যাগ করে এবং ছায়া সরবরাহের মাধ্যমে মাটিকে আর্দ্র রাখে। চারপাশের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখে।

বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগব্যাধি এবং গ্রীষ্মকালীন রেইন ফরেস্ট শুকিয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং তার থেকে দ্রুত বনভূমি ধ্বংস হয়ে যায়। মানুষের পাশাপাশি বনভূমিতে বসবাসকারী প্রাণীরা ব্যাপকভাবে হারিয়ে যায় এবং বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধির উৎপত্তি হচ্ছে। মানুষ যত সীমালঙ্ঘন করে বনে প্রবেশ করছে বন্য প্রাণীদের নানা রোগব্যাধি মানবজাতিকে আক্রমণ করছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বন বিভাগের উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভূমি দখল হয়ে গেছে। ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এসব বনভূমি জবরদখল করে রেখেছেন। জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে তৈরি করা হয়েছে শিল্প-কারখানা। বনভূমি সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যত্রতত্র নির্বিচার গাছ কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বন উজাড়কারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বনের ওপর স্বার্থান্বেষীদের থাবা গোটাতেই হবে। পরিবেশ-প্রতিবেশের সুরক্ষার প্রশ্নে তো বটেই জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ মানুষের অতীব জরুরি প্রয়োজনে বনভূমির অস্তিত্ব যাতে বিপন্ন না হয়, এ ব্যাপারে মনোযোগ গভীর করতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায় তো বটেই নাগরিক সমাজের দায়ও কম নয়, তা ভুলে না গেলেই মঙ্গল

  • পরিবেশকর্মী ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, বারসিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা