× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অগ্নিদুর্যোগ

মানব সৃষ্ট বহুমাত্রিক বিপদ

মো. নিয়াজ আলী চিশতি

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪ ১০:২৪ এএম

মো. নিয়াজ আলী চিশতি

মো. নিয়াজ আলী চিশতি

ঢাকা শহরে বিভিন্ন আবাসিক, বাণিজ্যিক ও বহুতল ভবনে অনুমোদন ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে জমজমাট রেস্তোরাঁ ব্যবসা- এ অভিযোগ নতুন নয়। অথচ আইন অনুযায়ী, যেকোনো ভবনে রেস্তোরাঁ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হয়। অগ্নিনিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ভবনে যথাযথ অগ্নিসুরক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সব যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও সংরক্ষণ জরুরি। সম্প্রতি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও ছাড়পত্র ছাড়াই ভবনটিতে গড়ে তোলা হয় রেস্তোরাঁ। শুধু তাই নয়, ভবনটিতে অগ্নিদুর্ঘটনার প্রাথমিক প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে নিরাপদ স্থানে এলপিজি সিলিন্ডারও স্থাপন করা হয়নি। এমনকি অগ্নিদুর্যোগে বের হওয়ার জন্য বহির্গমন সিঁড়িও ছিল না। ভবন কর্তৃপক্ষ এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অসচেতনতায় ৪৬ জনের প্রাণহানি; আমাদের বেদনাহত ও ক্ষুব্ধ করে।


প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট এ দুটি ভিন্ন ধরনের দুর্যোগে আমাদের সম্পদের যেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় তেমন প্রাণনাশও হয়। তবে প্রাণনাশের ঘটনা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগেই বেশি ঘটে। গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিকাণ্ড কোনো প্রাকৃতিক প্রভাবাধীন দুর্ঘটনা নয়। ভবনটিতে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের ভেতরে আটকে পড়া মানুষ ধোয়ায় নিঃশ্বাস নিতে না পেরে মারা যায়। কোনো ভবনে আগুন লাগলে ধোঁয়া বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা জরুরি। অথচ ভবনটিতে তেমন কিছুই ছিল না। সচরাচর অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গড়ে তোলা ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অনেক ভবন কর্তৃপক্ষ এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী নন। কিন্তু এ ধরনের অবহেলার দায় ভবন মালিক কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না।

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এড়াতে প্রতিটি আবাসিক, বাণিজ্যিক ও বহুতল ভবনে স্থাপিত রেস্তোরাঁয় বা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার ভবনের নিচতলায় নির্দিষ্ট নিরাপদ স্থানে স্থাপন করা প্রয়োজন। এতে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো বাড়ির নিচে রেখে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়। আর এরকম কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা থেকে পাইপের মাধ্যমে প্রতি ফ্লোরে বা ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে গ্যাস সরবরাহ করার নিয়ম থাকলেও অধিকাংশ ভবন এ নিয়ম অনুসরণ করছে না। বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে অগ্নিদুর্ঘটনার পর এসব বিষয় নতুন করে আলোচনায় আসছে। বিশেষত ওই অগ্নিকাণ্ড কেন্দ্র করে মহানগরে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সমন্বিতভাবে ভবনের নিরাপত্তাব্যবস্থা বিশেষত অগ্নিসুরক্ষাব্যবস্থা তদারকির অভিযান চালাচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে অভিযান চলাকালে কোনো ভবন কর্তৃপক্ষ কিংবা বৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয় সেদিকেও মনোযোগ রাখা জরুরি। অনেকেই প্রচলিত আইন বা নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত নন। সমন্বিত এ অভিযানের সময় এসব বিষয়ে সচেতন করারও বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে তদারকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসকে এখনও বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তাদের কাজ অনেকটা কাগজসর্বস্ব। অগ্নিঝুঁকিতে থাকা কোনো ভবনকে নোটিস পাঠানো পর্যন্তই তাদের কাজ সীমাবদ্ধ। সারা দেশে মোট ৬২৭ ফায়ার ইন্সপেক্টর পদ রয়েছে। এর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২৮৫ জন। বাকি পদ খালি থাকলেও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অগ্নিদুর্ঘটনা রোধে ভবন ও অবকাঠামো সুরক্ষার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কি না নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জরুরি ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়ন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্বল্প সুযোগসুবিধা পেয়েও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের উন্নত প্রযুক্তির অভাব রয়েছে, এ অভিযোগও পুরোনো। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত দায়িত্বশীলদের পর্যাপ্ত ক্ষমতাও দিতে হবে। দুর্ঘটনা রোধে যেকোনো স্থাপনা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ ভবনÑএ তিন শ্রেণিতে ভাগ করে দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। শহরের ভবনগুলোর বয়স বিভিন্ন। এগুলো স্থাপিত হয়েছে নানা সময়ে। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে তিলোত্তমার অগ্নিদুর্ঘটনার সংকট মেটাতে উদ্যোগী হতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান সময়মতো অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এবং যারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না সেসব ভবনের মালিক কর্তৃপক্ষকে বিচারের আওতায় আনার মাধ্যমে সাধারণের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছানো সম্ভব।

যেকোনো বড় অগ্নিদুর্ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি নানাভাবে ক্ষুণ্ন হয়। আগুন শুধু সম্পদ ভস্মীভূত করে না, কেড়ে নেয় অনেক মানুষের প্রাণ। অনেক মানুষ সারা জীবন বয়ে বেড়ায় আগুনের স্পর্শের দাগ। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায় সবার আগে। তাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও তদারকির মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে অগ্নিসরঞ্জামাদি ৯৫ ভাগ আমদানিনির্ভর এবং আমদানির পর বন্দর থেকে খালাস করতে ২৫-৬০ ভাগ শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়। যদি অগ্নিদুর্ঘটনা নির্বাপণব্যবস্থা খাতের উন্নতি করতে অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জামাদি আমদানিতে আরোপিত শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা রসদের দাম নাগালের বাইরে থাকলে মানুষ এসব পণ্য কেনার আগ্রহ হারাবে। মানুষ যেন স্বল্প খরচে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে পারে এবং ঘরে স্থাপন করতে পারে সেদিকে উৎসাহিত করতে হবে। অগ্নিনির্বাপণ পণ্যের দাম কমাতে পারলে যা অনেকাংশেই সম্ভব। সেই সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে যেন কোনো মানহীন পণ্য বাজারে প্রবেশ না করে। মহানগর-নগরে ভবনে বড় ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার দায় আমাদের সবার।

  • পরিচালক, এফবিসিসিআই। সভাপতি, ইলেকট্রনিক্স ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইসাব)
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা