× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বৈশ্বিক সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেবে কে

জেসন উইলিক

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৮ পিএম

জেসন উইলিক

জেসন উইলিক

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রসঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের তিক্ততা বাড়ছে। সম্প্রতি সেন-ই-শুমার সংবাদমাধ্যমে গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার পর এই তিক্ততার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, এটিও গুরুতর বিষয় নয়। বরং গত সপ্তাহে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে দেশটির নাগরিকদেরও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।’ ইসরায়েলের সাংবাদিক অমিত সেগাল জানিয়েছেন, ‘ইসরায়েলের নেতৃত্ব ও নাগরিকদের মতামতের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। তবে ওয়াশিংটনের মানুষ যেমনটি ভাবছেন তার বিপরীত।’ ইসরায়েলের যুদ্ধ ক্যাবিনেট জনগণের মতামতের কারণে কিছুটা হলেও সংকীর্ণ পরিস্থিতিতে রয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পররাষ্ট্রনীতি ইসরায়েলের নীতিমালা অনুসারে উদারপন্থি। ইসরায়েলের মানুষ সরাসরি এই যুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ নিলে এই যুদ্ধের অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠত।


হ্যারিসের এই মন্তব্য ইসরায়েলি গণতন্ত্র সম্পর্কে ভুল ধারণাই উপস্থাপন করে। ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের অজ্ঞতা নানাভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি অনুসারে ইসরায়েলে গণতন্ত্রের প্রচার করা তাদের দুর্বল ভিত্তির বিষয়টিই স্পষ্ট করে তোলে। স্বৈরতন্ত্র ও গণতন্ত্র—প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় বৈশ্বিক পর্যায়ে এ দুটোর প্রতিযোগিতা চালিয়েছেন জো বাইডেন। প্রায় সবখানেই তিনি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করেছেন। এমন উদ্যোগ নিয়েও তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসকে সমন্বিত করতে পারেননি। আর মার্কিন কংগ্রেসে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত তৈরি হয়নি বলে ইউক্রেনও পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছে না। এক্ষেত্রে মূল সমস্যা বোঝা কঠিন কিছু না। অনেক আমেরিকানই ভাবেন, অনেক দূর দেশে কারা ক্ষমতায় থাকবে তা নিয়ে আমাদের এত ভেবে কী লাভ। ইউক্রেনের পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পাওয়ার ক্ষেত্রে রিপাবলিকানদের দায় অনেক। অবশ্য বাইডেন প্রশাসন বিষয়টিকে তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেছেন। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধকে বাইডেন ও ট্রাম্পের নির্বাচনী লড়াইয়ের সমান্তরাল হিসেবেই দেখা হচ্ছে। বাইডেন-ট্রাম্প লড়াই অব্যাহত রয়েছে বলেই রিপাবলিকানদের স্বৈরশাসকদের পক্ষশক্তি হিসেবে ভাবার একধরনের মানসিকতা কাজ করছে।

গণতন্ত্র প্রসঙ্গটিকে মাত্রাতিরিক্ত জোর দিলে পরিস্থিতি বিভিন্ন সময় বেগতিক হয়ে উঠতে পারে। রাজনীতি দার্শনিক এমিলি বি ফিনলে ২০২২ সালে তার বই ‘দ্য ইডিওলজি অব ডেমোক্রেটিজম’-এ লেখেন, ‘যখন গণতন্ত্র প্রসঙ্গটি নানা বিতর্ক জন্ম দেয়, তখন বুঝতে হবে গণতন্ত্র নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। দেশের মানুষের মতামতের পার্থক্যই এখানে মূল সমস্যা হয়। তবে সত্যকে মুখ চেপে রাখার ওই অদৃশ্য শক্তিকে চিহ্নিত করতে না পারার ব্যর্থতা এখানে বড় সমস্যা।’ ইসরায়েল সম্পর্কে হ্যারিসের ওই মন্তব্যও একই বিষয় উপস্থাপন করে। ইসরায়েলের নেতৃত্ব নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের বিরক্তি রয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের ভাবনা বোঝায়, ইসরায়েলি প্রশাসন ইসরায়েলের মানুষের নির্বাচিত সরকার নয়। তবে সিগাল যদি সঠিক হয়ে থাকেন, তাহলে বাইডেন প্রশাসন ভুল বুঝছে।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আচরণ বদলানোর চেষ্টায় ভুল কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্র সহযোগী রাষ্ট্রগুলোকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে যেন মার্কিন স্বার্থের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তবে যদি তারা একধরনের কাল্পনিক ধারণা তৈরি করে, তাহলে তা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে কূটনীতি পরিচালনা করলে যা অর্জিত হতে পারে, তার বিরুদ্ধে কিছু সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। কোনো রাষ্ট্রের সামষ্টিক গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করতে চাইলে রাজনৈতিক পেশিশক্তি জরুরি। বাইডেন ইসরায়েলের রাফাহ সীমান্তে ‘রেড লাইন’ অভিযানের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলের মানুষ হামাসের সঙ্গে এই লড়াই পুরোপুরি শেষ করতে চায়। এক্ষেত্রে বাইডেনের প্রভাব অনেকাংশে কমে যাওয়ার শঙ্কাও দেখা দিচ্ছে।

ইসরায়েলের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যত সহযোগী রাষ্ট্র রয়েছে, তারা কেউ-ই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। তাই জর্ডান, মিসর ও সৌদি আরবের মানুষ এমনকি রাষ্ট্রপ্রধানদের ক্ষুব্ধ করলেও হিতে বিপরীত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ বন্ধে বাইডেন প্রশাসন উপযুক্ত সমাধান গড়ে তুলতে পারেনি। এক্ষেত্রে তারা সৌদি আরবের ওপর বেশি নির্ভর করছে। বাইডেন যেভাবে গণতন্ত্রের কথা বলেন, তা অবশ্য রিয়াদের সঙ্গে মানানসই নয়। ফ্রান্স একবার ভালোভাবেই সতর্ক করে দিয়েছিল, বৈদেশিক নীতিমালার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রকে সবখানে ব্যবহার করতে গেলে বিপত্তি বাঁধবেই।

এবার হামাসের প্রসঙ্গেই চলে আসা যায়। গত বছর অক্টোবরের ৭ তারিখ সংগঠনটি ইসরায়েলে আক্রমণ চালায়। হ্যারিসের মন্তব্যের পর বাইডেন গোয়েন্দা তথ্যনির্ভর হয়ে একটি বক্তব্য প্রকাশ করেন। ওই মন্তব্যে তিনি জানান, নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব আসলে ছন্নছাড়া। অবশ্য এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি এটুকু জানাননি, ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর জনসমর্থন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে হামাস ফিলিস্তিনিদের সমর্থন পেয়েই চলেছে। ২০০৬ সালে হামাস ফিলিস্তিনের নির্বাচনে জয়ী হয়। মার্কিন গুপ্তচররা যদি সঠিক তথ্য দিয়ে থাকে তাহলে এই সংগঠন গণতান্ত্রিক ধারা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে; যদিও তাদের নিজ মানুষের জীবনে তারা ভয়াবহ দুর্যোগ নামিয়ে এনেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালায় গণতন্ত্র একটি আকর্ষণীয় থিম। বলা চলে এটি তাদের প্রথা। কিন্তু বৈদেশিক নীতিমালায় এ প্রথা থাকলেই জিওপি ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের অসহযোগিতার বিষয়টি এড়াবে না। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় এলে তা সহজেই বোঝা যাবে। আপাতত গণতান্ত্রিক এই ভাবধারা মধ্যপ্রাচ্যে খুন-খারাবি কিংবা সহিংসতার সমাধান এনে দিতে পারছে না। যেকোনো সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে বরাবরই মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষাতেই যেন সব ভাবনা। বৈশ্বিক পর্যায়ে সংকট সমাধানে উদ্যোগ নেবে কে, সেটিই বড় প্রশ্ন।

  • ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা