× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে কৌশলী হতে হবে

সম্পাদকীয়

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪ ১০:৩৬ এএম

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধারে কৌশলী হতে হবে

আমরা উদ্বিগ্ন। উৎকণ্ঠিত। ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র নাবিক ও ক্রুদের জিম্মি দশার অবসান ঘটাতে কৌশলী হওয়ার আপাতত বিকল্প কোনো পথ নেই। শুধু বাংলাদেশি জাহাজ নয় যেকোনো দেশের জাহাজ সোমালিয়ার উপকূল অতিক্রম করার সময় প্রায়ই ভয়াবহ বিপদে পড়ছে। ১৩ মার্চ প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা কেএসআরএম-এর মালিকানাধীন জাহাজটি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোাজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়ে। ওই দিনই অনলাইন সংবাদমাধ্যমে জিম্মিদের পাঠানো বিভিন্ন মোবাইল ফোন বার্তায় যে আর্তনাদ উঠে এসেছে তাতে তাদের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। প্রায় তের বছর পর বাংলাদেশি জাহাজ আবারও জলদস্যুদের কবলে পড়ল।

আমরা দেখছি, ভারত মহাসাগর আতঙ্কের নৌপথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংবাদমাধ্যমেই উঠে এসেছে ছিনতাই করা জাহাজ নিয়েই অন্য জাহাজে অভিযান চালায় সোমালিয়ান জলদস্যুরা। তাই উদ্ধারকারী জাহাজ ও হেলিকপ্টার দিয়ে জলদস্যুদের মোকাবিলা করে জিম্মিদের মুক্ত করার কাজটি অত্যন্ত দুরূহ। চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ দিয়ে জিম্মি সংকটের নিরসন করতে হয় এমন নজির অনেক আছে। উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্য এই নৌপথেই হয়ে থাকে। জলদস্যুদের টার্গেট থাকে পণ্যবাহী জাহাজগুলো। মাঝে কয়েক বছর জলদস্যুদের উৎপাত কিছুটা কমলেও গত কয়েক মাসে ফের তারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা জানি, এই নৌপথে নিরাপত্তা জোরদার করতে অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন জাহাজ মালিকরা।

ইতঃপূর্বে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের (আইএমও) হস্তক্ষেপ চেয়েছিল বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর মালিকপক্ষ। তারা দাবি জানিয়েছিল, ভারত মহাসাগর এলাকা অতিক্রম করার সময় জাহাজে সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী রাখার অনুমতি যেন দেওয়া হয়। এডেন উপসাগরে একটি আন্তর্জাতিক ট্রানজিট করিডোর রয়েছে। বাণিজ্যিক জাহাজগুলো যৌথভাবে ওই এলাকা অতিক্রম করে। তবে তাদের যৌথ ব্যবস্থাপনা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি বিধায় সোমালিয়ান জলদস্যুরা ওই করিডোরে পৌঁছানোর কাছাকাছি সময়ে জাহাজ ছিনতাই করে। সোমালিয়ান উপকূল থেকে প্রায় দেড় হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরের অর্ধেক এলাকা সোমালিয়ান জলদস্যুরা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে যাতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় এ দাবি সংগত কারণেই বারবার উঠলেও এ ব্যাপারে কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি।

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’ এবং ওই জাহাজটিতে বাংলাদেশিরা যে সংকটে নিপতিত হয়েছেন এর নিরসনকল্পে জলদস্যুদের সঙ্গে জিম্মিদের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে আপাতত কৌশলী যোগাযোগের কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না। আমাদের স্মরণে আছে, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল কবির গ্রুপের জাহাজ ‘জাহান মনি’। প্রায় তিন মাস জলদস্যুদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দরকষাকষির পর বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজ এবং জিম্মিদের মুক্ত করা হয়েছিল। আমরা এই সম্পাদকীয় যখন লিখছি, তখন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তার একটি বার্তা অনলাইন সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। তিনি তার স্ত্রীর কাছে ওই অডিওবার্তা পাঠালে সেটি সংবাদমাধ্যমে আসে। অডিওবার্তায় জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ খান বলেন, ‘এই বার্তাটা সবাইকে পৌঁছে দিয়ো। আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলেছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।’ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বিপন্নজনের এমন বার্তায় খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়, কী চরম অবস্থার মধ্যে তাদের সময় অতিবাহিত হচ্ছে। জিম্মিদের স্বজনদের অবস্থাও সহজেই অনুমেয়। আমরা মনে করি, যেহেতু জলদস্যুদের কবল থেকে বল প্রয়োগে জিম্মিদশার নিরসন করা দূরূহ সেহেতু দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই যত দ্রুত সম্ভব উদ্বেগজনক পরিস্থিতির নিরসনে কৌশলী পথ খুঁজতে হবে। জিম্মিদের ‍উদ্ধারে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া অনুসরণের সব অনুষঙ্গের দিকেও হাত বাড়ানো প্রয়োজন। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি সবার নিরাপদে ফিরে আসা কামনা করি। বিপদসংকুল ওই আন্তর্জাতিক নৌপথের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি সোমালিয়ান জলদস্যুদের নিবৃত্ত করতে আন্তর্জাতিক যৌথ প্রচেষ্টাও সমভাবেই ‍গুরুত্বপূর্ণ।

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজে যারা রয়েছেন তাদের পঁচিশ দিনের মতো খাবার আছে। বিশুদ্ধ খাবার পানির পরিমাণও যথেষ্ট নয়। জাহাজের একজন কর্মকর্তার অডিও বার্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমে এও বলা হয়েছে, রসদ যাতে দ্রুত ফুরিয়ে না যায় সেজন্য অপ্রয়োজনে ব্যবহার না করার জন্য সবাইকে জ্ঞাত করা হয়েছে। ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ান জলদস্যুরা। আমরা জানি, জলদস্যুরা ভয়াবহ রকমের হিংস্র প্রকৃতির হয়। এমতাবস্থায় তাদের সঙ্গে সমঝোতামূলক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি বন্দিদের রসদ জোগানের ব্যাপারেও সমগুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশ সোমালিয়ার সন্ত্রাসীরা জাহাজ ছিনতাই ও জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের অপপ্রক্রিয়া পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাস্তবায়নকারীসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা সাগরপথে জলদস্যুতার ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ থাকলেও জলদস্যুদের ‘ব্যবসা’ বন্ধের ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। অভিযোগ আছে, জলদস্যুরা এখন সোমালিয়ার অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি।

আমরা মনে করি, বিষয়টি যেহেতু আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে সেহেতু এর নিরসনে আন্তর্জাতিক যৌথ উদ্যোগ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই জলদস্যুতা বন্ধ করতে হয় তাহলে দৃষ্টি দিতে হবে একেবারে উৎসে। এর প্রেক্ষাপট গভীর ও বিস্তৃত তা সবারই জানা। আমরা দেখছি, ফিলিস্তিন সংকট প্রকট হয়ে ওঠার পর ওই নৌপথ আরও বেশি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। আমরা জিম্মি সবার নিরাপদে ফিরে আসার প্রতিক্ষায় রইলাম। তারা বিপদমুক্ত হোন। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা