× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জনজীবন

স্বস্তি উধাওয়ের দৃশ্যমান উপসর্গ

ড. হারুন রশীদ

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪ ১০:২৯ এএম

ড. হারুন রশীদ

ড. হারুন রশীদ

সংযম সাধনাই রমজানের অন্যতম লক্ষ্য ও বৈশিষ্ট্য। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ করে বাজারে রমজানে এর উল্টো চিত্র দেখা যায় আমাদের দেশে। যে যেভাবে পারেন রমজানে টুপাইস কামিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টায় থাকেন। রমজানজুড়ে বাজার ও সুপারশপে ভোক্তা অধিকার রক্ষা কর্মকর্তাদের অভিযান চালিয়ে নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। এতে ভোক্তাদের মধ্যে একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থা তৈরি হয়। আমরা চলেছি উল্টো পথে। রমজান এলেই নিত্যপণ্যের বাজারে যেন তাপ বাড়তে থাকে। যদিও মূল্যস্ফীতির দীর্ঘমেয়াদী চাপেই আছি আমরা। রমজানে তা আরও বেড়েছে রমজানে অপরিহার্য এমন অনেক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায় কোনো কারণ ছাড়াই। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে কারসাজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, যা রমজানের চেতনার পরিপন্থি।


অন্যদিকে এই সংযমের মাসেই দেখা যায় অনেক বিত্তশালীর বাড়াবাড়ি। তারা খাদ্যের অপচয় করেন। অথচ অনাহারী ও অভাবক্লিষ্টরা কত কষ্টে থাকে। তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করাও রমজানের শিক্ষা। এ ছাড়া রমজানে রাজধানীর অন্যতম সমস্যা যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। রমজানে জনভোগান্তি দূর করার জন্য সব সময় দাবি থাকে। কিন্তু দেখা যায় এই সময়ে নানা ক্ষেত্রে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যানজট তীব্র আকার ধারণ করা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি সংকট দেখা দেওয়া, ভেজালের সমারোহ ইত্যাকার নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকে মানুষ। সবকিছু মিলে এক অরাজক অবস্থা। অথচ সংযমের মাস পবিত্র রমজানে সব ক্ষেত্রেই দায়িত্বশীলতা ও নীতি-নৈতিকতার উন্মেষ ঘটার কথা।

যে বা যারা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ান, তিনি বা তারা অন্তত রমজানে তা করবেন না; যারা খাদ্যে ভেজাল মেশান, তারা তা থেকে বিরত থাকবেন, যানজট দূর করতে আগের থেকেও সক্রিয় হবে পুলিশÑ এভাবে সব ক্ষেত্রেই একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায় মানুষ। কিন্তু রোজার প্রথম ধাক্কাটা লাগে বাজারে। এবারও রমজানের আগে থেকেই বাজার চড়া। অথচ অন্য দেশে কোনো উৎসব-পার্বণে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ভালোভাবে সবাই সেই উৎসবে অংশ নিতে পারে। আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্র। এ ব্যাপারে অনেক কথা হলেও কাজের কাজ খুব কমই হয়। এবারও রমজান আসার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। গরুর মাংসে তো হাতই দেওয়া যায় না। এমনকি পোল্ট্রি মুরগির বাজারও আকাশচুম্বী। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রমজানে অত্যাবশ্যক পণ্যসহ অন্য নিত্যপণ্যের মূল্যও। এভাবে তো চলতে পারে না। এগুলো কি দেখার কেউ নেই? ভোক্তাদের পকেট কাটা যাবে আর প্রশাসনযন্ত্র তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে এটা হতে পারে না। রমজানে টিসিবির কার্যক্রম আরও জোরদার করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ বাজারে সমান্তরাল একটি সরবরাহব্যবস্থা থাকলে কোনো সিন্ডিকেটই খুব বেশি সুবিধা করতে পারবে না। তাছাড়া নিম্ন আয়ের তো বটেই সব ভোক্তাই যাতে নায্য দামে জিনিসপত্র কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থাও চালু রাখা প্রয়োজন। এজন্য শুধু নামে কার্যক্রম চালালেই হবে না, যথেষ্ট পণ্য যেন মজুদ থাকে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখাও জরুরি। টিসিবির পণ্য যেন সব জায়গায় পাওয়া যায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। সর্বাগ্রে সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করতে হবে। এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণাও চালাতে হবে। অন্যদিকে রমজান মাসে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। অফিসগামী ও অফিসফেরতদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। রমজানে অফিস সময় কমিয়ে দেওয়া হয়, যাতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সবাই মিলে ইফতার করতে পারে। কিন্তু সে সময় যদি রাস্তায় নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী থাকতে পারে।

দুঃখজনক হচ্ছে, রমজানে যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে নানা কৌশল নির্ধারণের কথা থাকলেও তা টিকছে না। স্থবির রাস্তায় অস্বস্তি আর ভোগান্তি নিয়ে যানবাহনে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয় অফিসগামী মানুষকে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তায় যানজট হয়, যা রমজানে প্রকট আকার ধারণ করে। অথচ রোজাদাররা বাড়িতে গিয়ে যাতে সময়মতো ইফতার করতে পারেন সেজন্য কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয়। সে সময় যদি যানজটে পড়ে রাস্তায় নষ্ট হয়ে যায় এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে অসংখ্য গাড়ি। কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তাঘাট কি বাড়ছে? অন্য সুযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত হচ্ছে? ট্রাফিক ব্যবস্থা কি আধুনিকায়ন হচ্ছে? রমজানের রোজা রাখা মুসলমানের জন্য যেমন ফরজ তেমনি জাকাত প্রদানও ফরজ। আর্থিকভাবে সচ্ছল মানুষের ওপর জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক। শুধু ধর্মীয় দিকই নয়, সামাজিক বৈষম্য রোধ ও মানবিক মূল্যবোধতাড়িত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও জাকাত বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

জাকাত একটি আরবি পরিভাষা। এর অর্থ পবিত্রতা, প্রাচুর্যতা, ক্রমবৃদ্ধি এবং প্রশংসা।

ইসলামী পরিভাষায় জাকাত হচ্ছে সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ কোনো অসহায় মুসলমানকে দুনিয়াবি স্বার্থ ছাড়া প্রদান করা। জাকাত হচ্ছে অসহায়, অভাবী, অক্ষম এবং সুবিধাবঞ্চিত মুসলিম জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনের মূল হাতিয়ার। জাকাত হচ্ছে একটি মানবিক সমাজ গড়ার হাতিয়ার এবং মানবকল্যাণই জাকাতের মূলমন্ত্র। জাকাত আদায়ের মাধ্যমে একজন মানুষের সম্পদ পবিত্রতা অর্জন করে, আর সেই জাকাতের অর্থ দিয়ে বঞ্চিত মানুষের সমস্যা সমাধান হয়। জাকাত হচ্ছে ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার, যা আদায় করতে ধনী ব্যক্তিটি বাধ্য। কাজী নজরুল ইসলাম তার লেখায় বলেছেন, ‘দে জাকাত, দে জাকাত, তোরা দে রে জাকাত, তোর দিল খুলবে পরে, তোর আগে খুলুক হাত’Ñ এই বাণী অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

সমাজে যদি বৈষম্য থাকে, অভাব থাকে, ক্ষুধা থাকে, দরিদ্রতা থাকে তাহলে সেই সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন। সে কারণেই সম্পদের একটি সুষম বণ্টন ব্যবস্থা হচ্ছে জাকাত। মানব কল্যাণই ইসলামের মূলমন্ত্র। তাই ইসলামের যাবতীয় কর্মই মানব কল্যাণের সঙ্গে সংযুক্ত। মূলত মানব কল্যাণের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই ইসলামের মূল লক্ষ্য। জাকাত তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সমাজ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা এবং অভাবকে দূর করে মানবিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হোক আমাদের লক্ষ্য। মানবকল্যাণই গুরুত্ব পাক আসন্ন রমজানে- এটিই কাম্য।

  • সাংবাদিক ও কলামলেখক

[email protected]

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা